অসহায় নিঃস্ব প্রতিবন্ধী সিরাজুলের একটি ঘর ও হুইল চেয়ারের আকুতি 

নদীর একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে এইতো নদীর খেলা। সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা। চির সত্য এই গানের কথার মতোই আজ বদলে গেছে সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার (৬৭) জীবন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে স্ত্রী-সন্তান, পরিবার পরিজন হারিয়ে আজ হয়েছেন অসহায় নিঃস্ব প্রতিবন্ধী। যদিও সে প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মায় নি। সেই যৌবনকাল থেকে সুস্থ-সবল দেহ নিয়ে জীবনের সিংহ ভাগ সময় পার করেছেন তিনি।

স্ত্রী- ছেলে সন্তান নিয়ে জীবনের একটি সাজানো সংসার ছিলো সিরাজুল ইসলামের। কিন্তু নিয়তি আজ তাকে বড় দুঃসময়ে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। প্রতিবন্ধী জীবনের এই দুঃসময়ে তার পাশে নেই কেউ। এমন কি স্ত্রী -ছেলে সন্তানও তাকে এভাবে অসহায় জীবন তরিতে ভাসিয়ে তার কাছ থেকে চলে গেছেন। 

জানা যায়, গত ৪/৫ বছরে পূর্বেও সিরাজুল চাঁদপুর শহরের কালী বাড়ি – শপথ চত্বর এলাকায় ফুটপাতে বিভিন্ন ফল বিক্রি করতেন। তার  সংসার জীবনে স্ত্রী আঞ্জুমা বেগমসহ এক ছেলে এক মেয়ে ছিলো। বেশ ভালোই চলছিলো তার সুখের সংসার। হঠাৎ কোন এক কাল বৈশাখী ঝরের মতো প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে তার শরীরের বাম পাশটি অপশ হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তার সুন্দর জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে।।

প্রথমে তিনি চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হলেও। পরবর্তীতে এই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন। তারপর পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা নিতে থাকেন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। এতে তার অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। সুস্থ্জীবনে ফিরে পেতে জীবনের সমস্ত সঞ্চয় শেষ করেন। এমন কি চিকিৎসার জন্য তার একটি সাপরাঘর মাত্র ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। তাতেও তার ভাগ্যের চাকা ঘুরেননি।

ধীরে ধীরে সিরাজুল ইসলাম শারিরীক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে তার শরীরের বাম পাশটি অপশ হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে। অসহায় সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে চাঁদপুর শহরের উত্তর শ্রীরামদী  রেলওয়ে জিটিসি কলোনীতে একটা ছাপড়া ঘরে একাকীত্ব ভাবে বসবাস করে চলেছেন

অসহায় সিরাজুল ইসলাম দু,চোখের জল ছেড়ে দিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজ আমি নিঃস্ব হয়ে বড় অসহায় হয়ে পড়েছি। এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। আমার জীবনের এই দুঃসময়ে আমার স্ত্রী এবং ছেলে সন্তানেরা আমাকে একা রেখে দুরে চলে গেছেন। কেউ যদি আমাকে দুয়েক-মুঠো খাবার দেয় তাহলে আমি খাই।  আর না দিলে না খেয়েই থাকতে হয়। থাকার মত আমার একটি ঘর নেই।  তাই এই জরাজীর্ণ ঝুপরি ঘরেই কোনরকম রাত- দিন পার করছি। তিনি বলেন, আমি মরে গেলেও দেখার কেউ নেই। পঙ্গু হওয়াতে বাহিরে গিয়েও মানুষের কাছে হাত পাততে পারিনা। অসুস্থ্য হওয়ার পর অ্যাড. হান্নান কাজী আমাকে একটি হুইল চেয়ার দিয়েছিল। আর সেটি দিয়ে এত বছর যাবত কোন রকম চলেছি।

বর্তমানে এই হুইল চেয়ারটিও ভেঙে গেছে। তাই চলাফেরা করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। কেউ যদি দয়া করে আমাকে একটি নতুন হুইল চেয়ার কিনে দিতো। তাহলে হয়তো সেটি দিয়ে চলাফেরা করতে পারতাম এবং বাইরে গিয়ে মানুষের কাছে হাত পাততে পারতাম। আমার থাকার কোন ঘর নেই। এই ভাঙ্গাচুরা নোংরা পরিবেশেই আমাকে রাত-দিন পার করতে হয়।

সরকার কিংবা চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন যদি আমার প্রতি সুদৃষ্টি দিয়ে একটি হুইল চেয়ার কিংবা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখতো তাহলে সেই ঘরেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারতাম। 

প্রতিবেদকঃ কবির হোসেন মিজি, ১৪ নভেম্বর ২০২১

Share