মতলবে শত্রুতা উদ্ধারে অসহায় বৃদ্ধা মায়ের বসতঘরে আগুন

চাঁদপুরের মতলব উপজেলায় শত্রুতা উদ্ধারে অসহায় বৃদ্ধ মায়ের ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২ মে মঙ্গলবার রাত ৯ টায় মতলব পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডস্থ ঢাকির গাঁও গ্রামের বকাউল বাড়িতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে মতলব দক্ষিণ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আগুন নিভালেও ততোক্ষণে অসহায় বৃদ্ধা আশরাফ বিবি,র বসতঘরসহ ঘরে থাকা মালামাল পুড়ে যায়।

ঢাকির গাঁও গ্রামের মৃত সাহেব আলী বকাউলের স্ত্রী ভুক্তভোগী বিধবা অসহায় আশরাফ বিবি জানান, গত বছরের ১৬ আগস্টে তার বড় ছেলে জিয়াউর রহমান তার সাথে প্রতারণা করে বাড়ির ৪ শতাংশ জমি তার নামে লিখে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে বিধবা আশরাফ বিবি ছেলের এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে চাঁদপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরে তার ছেলে জিয়াউর রহমান বেশ কয়েকবার তার বৃদ্ধা মাকে মারধর করার ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখিও হয়েছে। তাদের মা ছেলের এমন বিরোধ নিয়ে মতলব থানায় এবং মতলব পৌরসভার মেয়র সহ বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠকের মাধ্যমেও মীমাংসা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান আপোষ না হওয়ার কারণে সে মামলা গড়াতে থাকে আদালতে। আর ওই মামলায় আশরাফ বিবির ছেলে জিয়াউর রহমান ৩ দিন জেলহাজত খেটে গত ২০ এপ্রিল আপোস মীমাংসার শর্তে জামিনে বের হয়ে আসেন। আশরাফ বিবি,র অভিযোগ জিয়াউর রহমান জামিনে বের হয়ে মীমাংসায় না গিয়ে উল্টো তাকে মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য অনেক হুমকি-ধমকি প্রধান করেন।

ঘটনার আগের দিন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী নীলুফা আক্তার ও তার মেয়ের শ্বশুর লিটন মৃধা আশরাফ বিবিকে নানা হুমকি ধমকি প্রদান করেন। তারা বলেন, যদি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে দেয়া মামলা না উঠিয়ে নেন, তাহলে কিভাবে এ বাড়িতে থাকেন সেটি তারা দেখে নিবেন। এমন কি বৃদ্ধার ঘরটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেন তারা। তাদের হুমকির পরের দিন রাতেই আশরাফ বিবি,র ঘরটি অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায়। এতে আশরাফ বিবির সন্দেহ ও অভিযোগ জিয়াউর রহমান তার মায়ের সাথে শত্রুতা উদ্ধারে স্ত্রী নীলুফা এবং মেয়ের শ্বশুড় লিটন মৃধাকে দিয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে মতলব ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভাতে সক্ষম হয়। ততোক্ষণে বৃদ্ধা আশরাফ বিবির ঘরসহ মালমাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ঘটনার দিন রাতেই আশরাফ বিবি সু-বিচার পেতে মতলব দক্ষিণ থানায় ছেলে জিয়াউর রহমানের পরিবারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

ঘটনার বিষয়ে মতলব দক্ষিণ পৌরসভার মেয়র আওলাদ হোসেন লিটন বলেন, ‘যখন জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তখন তার এডভোকেট আমাকে বলেছিলো যেহেতু তারা মা ছেলে সে কথা বিবেচনা করে জিয়াউরকে জামিন দেওয়ার জন্য তার মাকে অনুরোধ করতাম। আমি তার মাকে বলেছি যে জিয়াউর জামিনে বের হলে আমরা তা সমাধান করবো। আর সেই আপোষ মীমাংসার শর্তে জিয়াউর জামিনে বের হয়ে আসেন। কিন্তু সে আপস মীমাংসায় বসেনা। সে খুব দুষ্টু প্রকৃতির লোক এর পূর্বেও সে তার মাকে মারধর করেছে এবং জেল খেটেছেন। আমি বর্তমানে মতলবের বাইরে আছি। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিষয়টি আমি শুনেছি।’

ঘটনার বিষয় মুঠোফোনে কথা হয় অভিযুক্ত জিয়াউর রহমানের সাথে, তিনি ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার নামে যারা তারা যে অভিযোগ তুলে ধরেছেন তা মিথ্যে। যে ঘটি আগুনে পুড়েছে, ওই জমি এবং ঘর দুটিই আমারই। আমার মা, ভাই বোনেরা দলিল মূলে মালিক। আমার মায়ের কাছ থেকে আমি পাঁচ শতাংশ জমি ক্রয় করেছি কিন্তু আমি আমার সম্পূর্ণ জায়গা বুঝে পাইনি। যখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে তখন এলাকা থেকে আমাকে একজন কল করে জানানোর পর আমি আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলার পর তারাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেখতে পান।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ৩ মে ২০২৩

Share