দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষের মৃত্যুর পেছনের কারণগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অসংক্রামক ব্যাধি। দেশে ৭০ % মানুষেরই মৃত্যু হয় এ রোগে। আবার একই কারণে ৭০ বছর বয়সের আগেই মারা যান ৮০ % মানুষ।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষের মৃত্যুর পেছনের কারণগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অসংক্রামক ব্যাধি। দেশে ৭০ % মানুষেরই মৃত্যু হয় এ রোগে। আবার একই কারণে ৭০ বছর বয়সের আগেই মারা যান ৮০ % মানুষ। তাই বাঁচতে হলে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনারে এমনটাই বলেছেন বক্তারা। এ সময় প্রাইমারি হেলথ কেয়ারকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শও দেন তারা। সেমিনারটির আয়োজন করে ইউনিসেফ বাংলাদেশ, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার ও ইউএইচসি ফোরাম।
সেমিনারে একটি গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, দেশের ১৩ দশমিক ১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ রোগের প্রাদুর্ভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম। দেশের প্রতি হাজারে ১৩ দশমিক ৬ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, যাদের ২৩ শতাংশেরই বয়স ৫০-এর নিচে। এছাড়া কিডনি চিকিৎসায় মাসে গড়ে ৪ হাজার ৪২৬ টাকা খরচ করতে হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. এমএ ফয়েজ বলেন, ‘সংক্রামক রোগ সম্পর্কে আমরা সবাই কনসার্ন। তবে অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুবই কম। দেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার দীর্ঘদিন ধরে ওপরের দিকে রয়েছে। দেশের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের ডায়াবেটিস আছে, আর প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এগুলো অনেকেই জানেন না। অকালমৃত্যু কমাতে এ বিষয়ে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সুস্থ জীবনের জন্য আমাদের অভ্যাস বদলাতে হবে। হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই। সুস্থ থাকতে লাইফস্টাইল বদলাও—মানুষের মধ্যে এ বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। আমরা স্কুলগুলোয় শিশুদের মোটিভেট করতে পারি। খাওয়ার স্যালাইনের গুরুত্ব মানুষ প্রচারণার মধ্য দিয়েই শিখেছে। কাজেই অসংক্রামক ব্যাধি ও মানুষের জীবনধারার পরিবর্তন আনতে প্রচারণার বিকল্প নেই।’
মূল আলোচকের বক্তব্যে ইউএইচসি ফোরামের সদস্য ডা. আমিনুল হাসান বলেন,‘অসংক্রামক রোগে একবার আক্রান্ত হলে তাকে আমৃত্যু চিকিৎসা নিতে হয়। ফলে ওষুধের সরবরাহ ঠিক রাখাটা জরুরি। পাশাপাশি সব নাগরিক এসব ওষুধ কেনার সামর্থ্য রাখেন কিনা সেটিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এটি নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
এ সময় ইউনিসেফ বাংলাদেশের হেলথ ম্যানেজার ডা.দেওয়ান এমদাদুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের উপপরিচালক ডা.আবু হেনা মোহাম্মদ রায়হানুজ্জামান সরকার, ব্র্যাকের প্রোগ্রাম হেড (স্বাস্থ্য) ডা. ইমরান আহমেদ চৌধুরী বক্তব্য দেন।
সেমিনারের অংশগ্রহণকারীরা মুক্ত আলোচনায় বলেন, অসংক্রামক রোগ থেকে বাঁচার প্রধান উপায় খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা। মাদক ও তামাকপণ্য সেবন বন্ধ করতে হবে। এটি দেশের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ। বায়ু,পানি,পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।’
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে স্বাস্থ্যের ভিত্তি হিসেবে গড়ে তোলা,সব নাগরিকের জন্য হেলথ বুক,হেলথ ইন্স্যুরেন্স থাকা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মতো কিছু পরামর্শ দেয়া হয়।
১৮ মার্চ ২০২৫
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur