জাতীয় শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার কথা থাকলেও মাত্র সাত শতাধিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চালু হয়েছে। আর এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এ প্রক্রিয়া।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এ বছরের শুরু থেকে বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চালু বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষানীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত এবং শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, মূলত সমন্বয়ের অভাবের কারণেই শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর, নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তর এবং পরের ধাপকে উচ্চ শিক্ষা পর্যায় ধরা হয়েছে।
অবশ্য প্রাথমিক স্তরের আগে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতিতে। প্রাথমিক শিক্ষা ছয় বছর থেকে শুরুর আগে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে অষ্টম শ্রেণিতে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে এ স্তরের শিক্ষায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে গেছে এমন স্কুলের সংখ্যা ৭৯৪টি, সপ্তম শ্রেণিতে যাওয়া স্কুল ৭২৭টি এবং অষ্টম শ্রেণিতে গেছে ৬৫২টি স্কুল।
মন্ত্রণালয়ের অপর এক তথ্যে দেখা যায়, ২০১৩ সালে ৪৯১টি, ২০১৪ সালে ১৯২, ২০১৫ সালে ৭৭ এবং ২০১৬ সালে ৪টিসহ মোট ৭৬৪টি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি চালু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে বলে জানায় প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের শুরু থেকেই এ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
যদিও দেশে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৮৬৫টি। অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার সংখ্যা খুবই হতাশাজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকারের শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং আনুষাঙ্গিক চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে না বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমদ। শিক্ষানীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকা এ শিক্ষাবিদ শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন।
শিক্ষানীতির প্রথম ধাপে অষ্টম শ্রেণিতে নেওয়ার জন্য ক্লাসরুম, একাডেমিক ভবন, শিক্ষক দরকার। কিন্তু এগুলো যথাযথভাবে পূরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এছাড়া একজন কর্মকর্তা বদলি হলে সেই জায়গায় নতুনজনকে আবারও প্রথম থেকে কাজ শুরু করতে হয়। এভাবে বিলম্বিত হচ্ছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। আর দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে তাও জানা যাচ্ছে না।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন কমিটির ৪/৫টি সভা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলোআপগুলোও জানা যায় না। সমন্বয় করতে দুই মন্ত্রণালয় থেকে কো-অর্ডিনেশন প্রয়োজন বলে মনে করেন কাজী ফারুক আহমেদ।
তবে নীতি বাস্তবায়নে প্রাথমিক স্তরে কিছু কাজ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পটি (ডিডিটি-৩) চতুর্থ ধাপে নেওয়া হচ্ছে। এমন কাজ প্রাথমিক মন্ত্রণালয় নিলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি।
প্রাথমিক স্তরকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করতে বাধা হিসেবে শিক্ষক-কর্মচারী ঘাটতির কথা জানালেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির।
তিনি আরো বলেন, এ বছরের শুরু থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বছরের শেষে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এবং অন্য শ্রেণিগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা থাকায় আর কাজ হয়নি। এ প্রক্রিয়া একদিনে সম্ভব না জানিয়ে তিনি বলেন, আস্তে আস্তে হবে।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতের পর্যবেক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণের জন্য কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে আহ্বায়ক করে কমিটি করেছে সরকার।
গত ১৬ মে সচিবালয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর বৈঠকে ওই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি কিছু সুপারিশ দিয়েছে বলে জানান মনজুর কাদির।
তিনি বলেন, ওই কমিটির সুপারিশগুলো এখন পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণ করা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। প্রশ্ন ফাঁস এবং বাড়তি চাপের কারণে এই পরীক্ষা বন্ধের পক্ষে মত দিয়ে আসছেন অভিভাবকরা।
শিক্ষানীতিতে, পঞ্চম শ্রেণি শেষে উপজেলা/পৌরসভা/থানা (বড় বড় শহর) পর্যায়ে সবার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর অষ্টম শ্রেণি শেষে আপাতত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা নামে একটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১ : ০০ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার
এইউ