করোনাকালের বিরতি কাটিয়ে শুটিংয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী শাহানাজ খুশি । কিন্তু প্রথম দিনেই ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তিনি। গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নিতান্তই অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন তিনি ও তার চালক।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ঈদের নাটক ‘নসু ভিলেন’-এর শুটিংয়ের জন্য পুবাইল যাচ্ছিলেন শাহানাজ খুশি। কিন্তু যাওয়ার পথেই ঘটে যায় এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছেন তিনি। বেশ ট্রমার মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী।
php glass
শনিবার (১৮ জুলাই) সকালে এই দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে একটি বিস্তৃত পোস্ট দেন শাহানাজ খুশি। অভিনেত্রী লেখেন, চার মাস পর করোনার মধ্যে প্রথম শুটিং-এ যাচ্ছি, এরকম খারাপ লাগা নিয়ে পরশু একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। নাহ, আমাকে অদৃশ্য করোনাভাইরাস এখনো ছোঁয়নি, তবে আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে নিয়েছিল!
ksrm
দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন, এই গাড়ীর মধ্যে আমি ছিলাম। একেবারেই অলৌকিক কিছু না হলে আমার বাঁচার কথা নয়। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমি বেঁচে আছি, ভাল আছি। কত বড় অরাজকতার মধ্যে আমরা বাস করছি, তা ভুক্তভোগী সবাই জানি।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ছবিতে যে বিশাল আকারের কার্গো, এটিই আমার গাড়ীর উপর উঠেছে, ঠেলে নিয়ে পেছনে থামা ট্রাকের সাথে চেপে ধরেছে। সেটি চালাচ্ছিল হেলপার, বয়স ১৬/১৭। ড্রাইভার যিনি, উনিও তাই। গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, উনার কোন লাইসেন্স নাই।
এমন করেই নাকি চলে, কোন সমস্যা হয় না। আমি আসলে পুরা সেন্সে ছিলাম না। কিছু কিছু কথা আমি ভুলতে পারছি না। পুবাইল পুলিশ, আমার শুটিং-এর ছেলেরা, আমার বাসার মানুষ সবাই চলে এসেছে। আমি তখন থরকম্প একটা মাংস পিণ্ড কেবল।
কেউ একজন ক্ষতিপূরনের কথা বলায় ড্রাইভার বলছে, ‘মানুষ মাইরালায় ট্যাহা লাগে না, বাঁইচ্যা আছে, তাও ট্যাহা লাগবো! সামনের টেম্পোর ৬ জনরে বাঁচান্যার লাই ২ জনরে মাইরা দেয়া কুনু বিষয় না!’ এমন অসংলগ্ন কথাবার্তা।
মীরের বাজার পুলিশ বক্সে দায়িত্বে থাকা পুলিশ এবং থানা পুলিশ ভাইয়েরা যা করেছেন আমার জন্য তা সারাজীবন কোনদিন ভুলবো না। সেই সাথে জেনে এসেছি তাদের নেতৃস্থানীয়দের এবং পরিবহন লিডার বলয়ের কাছে অসহায়ত্বের কথা।
দেশে পরিবহন খাতে অরাজকতা প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আজ স্বাস্থ্যখাত সামনে এসেছে বলে শাহেদদের মত অসংখ্য কালপ্রিট সামনে আসছে। পরিবহন খাতটাও দীর্ঘকাল হলো এমন। প্রতিদিন এমন অসংখ্য দুর্ঘটনায় শেষ হচ্ছে হাজারো পরিবার, খালি হচ্ছে মায়ের কোল, সন্তানের বুক। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। স্বাস্থ্যখাতের চেয়েও আরও দুর্গম/অন্ধকার/অন্যায়ে ঠাসা এ পরিবহন খাত।
তিনি আকুতি জানিয়ে লেখেন, আমি কাল থেকে অপ্রকৃতস্থ প্রায়। খেতে পারছি না, চোখ বন্ধ করতে পারছি না, আমার ছেলে দুইটা এ ভয়াবহতায় এলোমেলো, বাচ্চা ছেলেটা রাতে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে! আমি কিছু বুঝতে চাই না, আমি আমার দেশের প্রতি, আইনের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা এবং দায়িত্ববান। আমার এবং আমার পরিবারের দ্বারা দেশের বিন্দু পরিমাণ সম্মান ক্ষুণ্ন হয় নাই, বরং দেশের মর্যাদা রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর। আমি শুধু আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই মাননীয়! জীবনের এত যুদ্ধ, এত শিক্ষার পর, একজন অশিক্ষিত নেশাগ্রস্ত লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারের হাতে জীবন দিতে রাজি নই। দয়া করে আইন সংশোধন করে, আমাদের জীবনকে নিরাপদ করুন। আমি আমার সন্তানকে দায়িত্বপূর্ণ নাগরিক করার দায়িত্বভার নিষ্ঠার সাথে পালন করছি। আপনারা আমাদের জীবন ও পথকে নিরাপদ করুন মহামান্য! আমার পরিবার এবং দাফনের জন্য টাকা আর ক্ষতিপূরণের কয়েক লাখ টাকা চাই না। আমরা ভর্তা ভাত খেয়ে, একে অপরের জীবিত সুস্থ সান্নিধ্যে বাঁচতে চাই।
বার্তা কক্ষ, ১৮ জুলাই ২০২০