করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত চলমান ‘লকডাউনের’ মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। তবে ৪৮ দিন ধরে বন্ধ থাকা দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ আজ সোমবার থেকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করতে হবে।
একই সঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবারের ওপরে থাকা নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে; অর্থাৎ হোটেল-রেস্তোরাঁয় আসনসংখ্যার অর্ধেক সেবাগ্রহীতাকে সেবা দেওয়া যাবে। তবে প্রায় ১৪ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, সেই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জরুরি প্রয়োজনের বাইরে থাকা সরকারি অফিস, পর্যটন স্পট, কমিউনিটি সেন্টারসহ গণসমাবেশ হওয়ার মতো স্থানগুলো আপাতত বন্ধই থাকছে। বন্ধ থাকছে ভারতীয় সীমান্তও।
গতকাল রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আন্ত জেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহন আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে।’
এক বছরের মাথায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউনের আদলে বিধি-নিষেধ আরোপ শুরু করে সরকার। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিধি-নিষেধের হেরফের হয়েছে। তবে ৪৮ দিন টানা বন্ধ থাকার পর দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আজ শুরু হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী সপ্তাহ থেকে সরকারি অফিস খোলার চিন্তা রয়েছে।
সব ধরনের বাস চলবে
শর্ত মেনে আজ থেকে দূরপাল্লার বাস চলার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শ্রমিক ও মালিক সংগঠনগুলোর নেতারা। অন্যদিকে শ্রমিকদের পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি গতকালই প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্ধারিত শর্ত উল্লেখ করে বাস মালিকদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্লা গতকাল বিকেলে সব জেলার বাস মালিক সমিতির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। চিঠিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে, অর্ধেক আসনে (দুই সিটে একজন) যাত্রী বহন করতে হবে এবং বিআরটিএর নির্ধারণ করে দেওয়া আগের ভাড়ার চেয়ে ৬০ ভাগ ভাড়া বেশি নেওয়া যাবে।
অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলবে ট্রেন
বাসের মতো ট্রেনেও অর্ধেক আসনে যাত্রী নেওয়া যাবে। তবে ট্রেনের টিকিট কাউন্টার বন্ধ থাকবে। শতভাগ টিকিটই অনলাইনে বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, ট্রেনে চলতে হলে যাত্রীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। আপাতত ২৮ জোড়া আন্ত নগর যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে আজ। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে সব ধরনের লোকাল ট্রেন বন্ধই থাকছে।
আজ থেকে যে ট্রেনগুলো চলবে, সেগুলো হলো সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর গোধূলি/তূর্ণা, মহানগর প্রভাতী/তূর্ণা, তিস্তা এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা/উপবন এক্সপ্রেস, মেঘনা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, পাহাড়িকা/উদয়ন এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, তিতুমীর এক্সপ্রেস, সাগরদাড়ী এক্সপ্রেস, ঢালারচর এক্সপ্রেস ও টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস।
৯ জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলবে। এগুলো হলো কর্ণফুলী কমিউটার, সাগরিকা কমিউটার, বলাকা কমিউটার, জামালপুর কমিউটার, ঢাকা কমিউটার, রকেট মেইল, মহানন্দা এক্সপ্রেস, পদ্মরাগ কমিউটার ও উত্তরা এক্সপ্রেস। স্বাভাবিক সময়ে দেশে যাত্রীবাহী ৫৬ জোড়া রেল চলে।
লঞ্চেও অর্ধেক যাত্রী
যাত্রীবাহী লঞ্চও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল শুরু হবে আজ। চলাচলের সুযোগ দেওয়ার কারণে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে লঞ্চ শ্রমিকরা গতকাল দুপুরে সদরঘাটে আনন্দ মিছিল করেছেন বলে জানা গেছে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ,২৪ মে ২০২১