জাতীয়

ঢাকাতেই প্রায় অর্ধলক্ষ করোনা রোগী শনাক্ত

শুরু থেকেই করোনার হটস্পট ঢাকা। দিনে দিনে সারা দেশে ছড়ালেও রাজধানীতেই অর্ধেকের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় আরো বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। যদিও মাঠের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। হটস্পট রাজধানীতে সুরক্ষায় ঢিলেঢালা চিত্র দেখা যাচ্ছে। ঢাকা সিটিতে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৬৩৯ জন। যা মোট আক্রান্তের ৫৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

দেশে মোট ১ হাজার ৯৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এরমধ্যে রাজধানীতেই মারা গেছেন ৩১৯ জন। বিভাগগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে মোট আক্রান্তের ৭৫ শতাংশের মতো রোগী রয়েছে। এ বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ৬১ হাজার ৩৮২ জন। যা মোট শনাক্তের ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।

আর করোনার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে কম পরিলক্ষিত হচ্ছে খুলনা বিভাগে। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৫২৩ জন। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ শনাক্ত ৩ হাজার ৪৭১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে সর্বোচ্চ ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দিন দিন সংক্রমণ বাড়ার মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে রাজধানী। অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কল কারখানা খুলে দেয়ায় বেড়েছে মানুষের অবাধ যাতায়াত। এতে সংক্রমণ পরিস্থিতি সামনে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এ অবস্থায় এলাকা ভিত্তিক বড় পরিসরে লকডাউন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও সরকার গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শে সীমিত পরিসরে লকডাউন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পূর্ব রাজাবাজার এলাকা ইতোমধ্যে লকডাউন করে দেয়া হয়েছে।

তথ্যমতে, ১২ই জুন পর্যন্ত করোনায় রাজধানী ঢাকা সিটিতে ৪৭ হাজার ৬৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৩১৯ জন। রাজধানী ছাড়া ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৪৩ জন। এই বিভাগে মোট মারা গেছে (ঢাকা সিটি ও অন্যান্য জেলাসহ) ৬৩৫ জন। সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৪১ জন। বিভাগটির মেহেরপুর জেলায় দেশের সবচেয়ে কম আক্রান্ত ৩৩ জন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৬১৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ২৫৫ জন।

ঢাকা বিভাগ: ঢাকা মহানগর ছাড়া ঢাকা জেলায় শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২৭২ জন এবং মারা গেছেন ৬৮ জন। ফরিদপুরে আক্রান্ত ৭২৫ ও মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ জন, গাজীপুরে ২ হাজার ১৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন ও মারা গেছেন ১৪ জন, গোপালগঞ্জে শনাক্ত হয়েছেন ৩২৪ জন, মারা গেছেন ৫ জন, কিশোরগঞ্জে ৮১৩ জন শনাক্ত ও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, মাদারীপুরে শনাক্ত হয়েছে ২৭০ জন, মারা গেছেন ৬ জন, মানিকগঞ্জে শনাক্ত হয়েছে ৩৭৯ জন ও মারা গেছেন ৫ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ হাজার ৩৯১ জন আক্রান্ত ও মারা গেছেন ৩৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩ হাজার ৯০৮ শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের, নরসিংদীতে ৯৪৫ শনাক্ত ও ১৭ জন মারা গেছেন, রাজবাড়ীতে ৯২জন আক্রান্ত ও মারা গেছেন ১ জন, শরীয়তপুরে আক্রান্ত ১৯৮ ও মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের, টাঙ্গাইলে ২৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ৬ জন।

ময়মনসিংহ বিভাগ: ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ১ হাজার ৬৯৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিভাগে মারা গেছেন ২৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ৮৫০ জন আক্রান্ত ও মারা গেছেন ১২ জন, নেত্রকোনায় শনাক্ত ৩১৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন, জামালপুরে ৩৮৫ শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা ৬ জন এবং শেরপুরে ১৩৯ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ২ জন।

চট্টগ্রাম বিভাগ: এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৩৯৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগে ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ২৮৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৪ হাজার ৫৯৩ জন ও মৃতের সংখ্যা ১০৯ জন, কক্সবাজারে ১ হাজার ৩৩৪ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ২৬ জন, বান্দরবানে ৭৬ জন ও মারা গেছেন একজন, রাঙ্গামাটিতে ৮২ জন ও মারা গেছেন ২ জন, খাগড়াছড়ি ৫৫ জন শনাক্ত ও এ জেলায় এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি, ফেনীতে ৩৭২ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ১০ জন, নোয়াখালীতে ১ হাজার ২৪৭ জন আক্রান্ত ও মারা গেছেন ৩৭ জন, লক্ষ্মীপুরে শনাক্ত ৩৫৮ জন ও মৃতের সংখ্যা ৭, চাঁদপুরে ৩৬৬ জন শনাক্ত ও ২৯ জন মারা গেছেন, কুমিল্লায় ১ হাজার ৬৩০ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ৫৫ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৫৩ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ১০ জন।

রাজশাহী বিভাগে: এ বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ১১৭ জন। বিভাগটিতে মারা গেছেন ২৭ জন। শনাক্তের মধ্যে রাজশাহীতে ১১৩ জন এবং মৃত্যু ৫ জন, চাঁপাই নবাবগঞ্জে ৮০ জন শনাক্ত ও কেউ মারা যায়নি, নওগাঁয় ১৬৩ জন এবং মারা গেছেন ৪ জন, নাটোরে ৭৯ জন ও মারা গেছেন একজন, জয়পুরহাটে ২১৫ জন এবং কেউ মারা যায়নি, বগুড়ায় ১ হাজার ১২৬ জন শনাক্ত এবং মারা গেছেন ৯ জন, সিরাজগঞ্জে ১৬৩ জন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ৩ জন এবং পাবনায় ১৭৮ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ৮ জন।

রংপুর বিভাগ: রংপুর বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৮০ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ৩২ জন। এর মধ্যে রংপুরে ৬২৫ জন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ১২, পঞ্চগড়ে ৯৫ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ২ জন, নীলফামারীতে ২২৬ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ৫ জন, লালমনিরহাটে ৫৫ জন ও মারা গেছে একজন, কুড়িগ্রামে ৯৪ জন শনাক্ত ও কেউ মারা যায়নি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৫৬ জন আক্রান্ত ও ২ মারা গেছেন, দিনাজপুরে ৩৮২ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ৫ জন এবং গাইবান্ধায় শনাক্ত ১৪৭ জন ও মারা গেছেন ৫ জন।

খুলনা বিভাগ: খুলনা বিভাগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৪১ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ১৭ জন। শনাক্তের মধ্যে খুলনা জেলায় ২৯৮ জন ও মারা গেছেন ৪ জন, বাগেরহাটে ৪৯ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ২ জন, সাতক্ষীরা ৬৭ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন একজন, যশোরে ১৮৩ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন একজন, ঝিনাইদহ ৭২ জন শনাক্ত ও মৃত্যু শূন্য, মাগুরায় ৫৩ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ২ জন, নড়াইলে ৫৩ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ২ জন, কুষ্টিয়াতে আক্রান্ত ১৯৭ জন ও মারা গেছেন একজন, চুয়াডাঙ্গায় ১৩৬ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ২ জন এবং মেহেরপুরে আক্রান্ত ৩৩ জন ও মারা গেছেন ২ জন।

বরিশাল বিভাগ: বরিশাল বিভাগে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ২৯৯ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ২৯ জন। শনাক্তের মধ্যে বরিশালে ৮১০ জন ও মারা গেছেন ১১ জন, পটুয়াখালীতে ১২৫ জন আক্রান্ত ও মারা গেছেন ৬ জন, ভোলায় ৮৬ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ৩ জন, পিরোজপুরে ৯৯ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ৩ জন, বরগুনায় ১০১ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ২ জন এবং ঝালকাঠিতে ৭৮ জন আক্রান্ত ও মারা গেছেন ৪ জন।
সিলেট বিভাগ: ১ হাজার ৭১৮ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে গোটা সিলেট বিভাগে। মারা গেছেন ৪৪ জন। যেখানে সিলেটে ১ হাজার ২৯ জন ও মারা গেছেন ৩৩ জন। সুনামগঞ্জে ৩৭৬ জন ও মারা গেছেন ৪ জন, হবিগঞ্জে ১৮৩ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন এবং মৌলভীবাজারে ১৩০ জন শনাক্ত ও মারা গেছেন ৪ জন।

এদিকে, শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ৯৫ জনে। আর নতুন করে তিন হাজার ৪৭১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

এটি একদিনে সর্বাধিক শনাক্ত। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা শনাক্ত হলেন ৮১ হাজার ৫২৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫০২ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হলেন ১৭ হাজার ২৪৯ জন। তিনি জানান, ৫৯টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫০টি, পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৯০টি এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩২২টি। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৭১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

ঢাকা ব্যুরো চীফ, ১২ মে ২০২০

Share