স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:
চাঁদপুর-লাকসাম রুটে রেলগেইটগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের প্রাণহানির মতো ঘটনা।
৫ জুন রোববার সকালে চাঁদপুর মিশন রোড এলাকায় চাঁদপুর-কুমিল্লা রুটে চলাচলকৃত একমাত্র ডেম্যু ট্রেনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার কবল থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পায়।
এ সময় ওই গেইটে কোনো প্রহরি ছিলো না জানিয়ে স্থানীয়রা জানান, গেইটম্যান (প্রহরী) না থাকায় যথানিয়মে ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে একটি মালবাহী ট্রাক রেললাইনে উঠে বিকল হয়ে যায়। ফলে ট্রাক ও ট্রেন মুখোমুখী হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেলওয়ের গেইটম্যানের ডিউটি নিয়ে লুকোচুরি খেলছেন ঊর্ধ্বতন ক’জন কর্মকর্তা। তারা এসব গেইটের একাধিক সদস্যদেরকে নিয়মবহির্ভূতভাবে দায়িত্ব থেকে মৌখিক নির্দেশনায় অব্যাহতি দিয়ে তাদের মাসিক সম্মানী নিজেরাই ভোগ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সংশ্লিষ্টরা এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
জানা যায়, চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন, ছায়বাণী, মিশন রোড, ওয়্যারলেস, বাকিলা ও উয়ারুক রেলগেইটে ৩জন করে প্রহরী বিগত দিনে দায়িত্ব পালন করে আসছিলো। বর্তমানে কোনো কোনো গেইটে ২ জন করে প্রহরী থাকে বলে জানা গেছে। তবে এসব গেইটে দায়িত্ব পালনকারী প্রত্যেক সদস্যই মাস্টার রুলে অস্থায়ী নিয়োগের ভিত্তিতে কাজ করে আসছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। তারা শিফটওয়ারি দায়িত্ব পালন করলেও সম্প্রতি এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বেশ ক’জন গেইট প্রহরীকে গত ক’মাস আগে মৌখিকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এমন অভিযোগ করে ভুক্তভোগিরা এ প্রতিবেদককে জানান, তবে কী কারণে তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তারা আদৌ তা জানেন না।
তবে অব্যাহতি পাওয়া প্রহরীরা সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, তাদের মাসিক সম্মানী (সাড়ে ৪ হাজার টাকা) নিয়মিত ড্র হচ্ছে। তবে ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কেবল তার খামখেয়ালির জন্য এ কাজ করছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে। ফলে প্রহরীদের মাসিক সম্মানি ওই কর্মকর্তার পকেটে যায় বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
শুধু অব্যাহতিপ্রাপ্তরাই নয়, বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী একাধিক প্রহরীর অভিযোগ, তারা রাত-দিন দায়িত্ব পালন করেও পুরো বেতন ঠিকমত পান না।। তাদের বেতন থেকে প্রতিমাসে অফিস খরচ বাবদ ৫শ’ টাকা কেটে রাখেন সংশ্লিষ্টরা। আর বাকি ৪ হাজার টাকা দিয়েই তাদের চলতে হয় পুরো মাস।
এদিকে চাঁদপুরের জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে রেলওয়ের নির্ধারিত ৩ জন গেইটম্যান থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে দু’জন দিয়ে দায়িত্ব পালন করার ফলে সাধারণ যাত্রী ও বিভিন্ন যানবাহন ঝুঁকির মধ্যে চলাচলের বিষয়টি জানতে চাইলে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাবি করেন, প্রতিটি গেইটেই প্রহরীরা শিফটওয়ারি দায়িত্ব পালন করছে। তবে কারো গাফিলতির জন্যে কোনো দুর্ঘটনার সৃষ্টি হলে তার দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রহরী জানান, আমাদের বেতন থেকে অফিস খরচ ভাবদ ৫শ’ টাকা রেখে দিচ্ছে। আবার ক’জন সদস্যকে ক’মাস পূর্বে অব্যাহতি দিয়েছে। ফলে আমরাও আতঙ্কে রয়েছি।
চাঁদপুর স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ হোসেন মজুমদার জানান, রেলওয়ের গেইটগুলো সুপারভিশন করা হয় লাকসাম থেকে। আর এ পয়েন্টগুলোর দায়িত্বে আছেন পিডাব্লিউ লেয়াকত হোসেন।
এ বিষয়ে পিডব্লিউ লেয়াকত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রহরীরা দায়িত্বে অবহেলা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তারা নিজেদের সুবিধার্থে শিফট ভাগ করে কাজ করে। এছাড়া প্রহরীদের মাসিক সম্মানী সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এ থেকে কোনো টাকা কেটে রাখার বিধান নেই বলেও তিনি জানান।
তবে অব্যাহতি দেয়া ভুক্তভোগী প্রহরীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন কাউকেই অব্যাহতি প্রদান করা হয়নি। চুক্তিভিক্তিক সবাই দায়িত্ব পালন করছে বলে তিনি দাবি করেন।
চট্টগ্রাম রেলওয়ের চীফ ইঞ্জিনিয়ার কামরুল আহসানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী জেনারেল ম্যানেজারের (জিএম) মাধ্যমে বক্তব্য নিতে হয় বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে জিএমই একমাত্র অথরিটি বলে তিনি বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
চটগ্রাম বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোজ্জামেল হক জানান, এ ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ১১:৩২ অপরাহ্ন, ২৩ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বুধবার ০৮ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি