অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে হাজীগঞ্জ দেশগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়টি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।

গত ১৩ মার্চ থেকে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত প্রধান শিক্ষক মো. মনির হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. তাহের হোসেন চৌধুরী। এতে করে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও পাঠদান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়াও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ মার্চ (মঙ্গলবার) থেকে নিয়মিত পাঠদানের কথা থাকলেও প্রায় প্রতিদিনই দুপুর দেড়টার সময় শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।  সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও আরো দুইজন সহকারী শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের মতো দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়টিও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি খোলার পর থেকে প্রধান শিক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনিয়মতি থাকার কারনে রুটিন মোতাবেক কাস নিতে পারছেন না অন্য শিক্ষকরা।

তারা বলেন, সুবিধাভোগী এসব শিকরা যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার আশংকা রয়েছে। বিষয়টি জানার পরও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় কোনো পদপে নিচ্ছেন না বলে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, গত (মঙ্গলবার) প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও আরো দুইজন সহকারী শিক্ষক অনুপস্থিত রয়েছেন। ১৫ মার্চ থেকে নিয়মিত শ্রেণিকার্যক্রম বিকাল ৪ টা পর্যন্ত চলমান থাকার কথা থাকলেও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে দুপুর একটা ত্রিশ মিনিটে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়া হয়।

অথচ গত ১৪ মার্চ (সোমবার) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখা হতে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে করোনা ভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার কমে যাওয়ায় পরবর্তী নিদের্শনা না দেওয়া পর্যন্ত এ বিভাগের আওতাধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত ১৫ মার্চ হতে অব্যাহৃত থাকবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ৬ জন শিক্ষক দিয়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদান করা যায় না। তাই দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কথা হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। তারা জানান, প্রায় সময় তারা শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত। এক বিষয় পাঠদান হলে, অন্য বিষয় ফাঁকা থাকে। অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে স্যার না আসার কারণে পাঠদান হয়না।

সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. তাহের হোসেন চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, তিনি হার্টে অপরাশেন করিয়েছেন, তাই ছুটিতে আছেন। অথচ তার সহকর্মীরা জানান, তিনি গত বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের দিকে অপরাশেন করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছুটির আবেদনটি আমার ছেলের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের বাসায় পাঠিয়েছি।

প্রধান শিক্ষক মো. মনির হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, তার পা ভেঙ্গে গেছে, তাই তিনি সভাপতির কাছ থেকে আগামি মাসের (এপ্রিল) ১০ তারিখ পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষকের ছুটি বিষয়ে তিনি বলেন, তাহের সাহেব অসুস্থ। তাই তিনি আমার কাছ থেকে মৌখিক ছুটি নিয়েছেন।

এ দিকে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. সামছুল আলম সরকার (স্বপন) এর মুঠোফোনে একাধিকার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি এবং পরবর্তীতে ফোন ব্যাক না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেল মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, বিষয়টি আমরা দেখছি। নিয়ম বহির্ভূত কিছু হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতা বলা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোছাম্মৎ রাশেদ আক্তারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এমন কিছু হয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়, ২৩ মার্চ ২০২২

Share