‘অভাব’ শব্দটি এখন দেশে নেই, একসময় বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর কাজ ছিল ভিক্ষা করা। কিন্তু এখনকার অর্থমন্ত্রী আর বিশ্বভিক্ষুক নন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
৮ জুন, শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল ব্যাংকিং খাতে করপোরেট কর কমানো, দেশে আয় বৈষম্য, ছোট ফ্ল্যাটে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বাড়ানো, অনলাইনে কেনা-বেচার ওপর ভ্যাট আরোপসহ বাজেটকেন্দ্রিক নানা বিষয়ে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুর দিকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন এই বাজেট ‘গরিব মারার বাজেট’ কি না। এমন প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অর্থমন্ত্রী। সে সময় তিনি সাংবাদিকদের সমালোচনা করে পাল্টা প্রশ্নে জানতে চান, দেশে দরিদ্র মানুষ বাড়ছে কি না।
উত্তর না পেয়ে এক পর্যায়ে নিজেই উত্তর দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না, দেশে দরিদ্র মানুষ বাড়ছে না। একসময় দেশে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ৭০ শতাংশ। গত সাত বছর আগেও দেশে দরিদ্র মানুষের হার ছিল ৩০ শতাংশ। এখন দেশে দরিদ্র মানুষের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশ।
দেশে আয় বৈষম্য মোটেও বাড়েনি। যারা পরিবর্তনে বিশ্বাস করে না, তারাই এ ধরনের প্রশ্ন করেন। কোন মুখে আপনারা বলেন, এই দেশে গরিব মারার বাজেট হচ্ছে, ধনীকে তেল দেওয়ার বাজেট হচ্ছে? বলেননি, কিন্তু বোঝাতে চাচ্ছেন দেশের উন্নয়ন কিছুই হয়নি। সুতরাং এই বাজেট গরিব মারার বাজেট— এই কথাটা ঠিক না।’
অবশ্য সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে এসে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি ছিলাম, এখন মধ্য আয়ের দেশে যাচ্ছি। একটু আগে যে জন্য ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম, কারণ আমার কাছে এসব প্রশ্ন অমূলক ও বাস্তবতা বিবর্জিত মনে হয়েছে।’
বাংলাদেশে এখন অভাব বা মঙ্গা নেই বলে মন্তব্য করেন আবুল মাল অাবদুল মুহিত। তার ভাষ্য, স্বাধীনতার পর দরিদ্র, অনাহারী একটি দেশে বসবাস শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নত। অভাব শব্দটি এখন দেশে নেই।
ব্যাংকিং খাত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরটি আয়তনে অনেক বড় হয়েছে। এরপরও ব্যাংকিং সেবা এখনো দেশের অনেকেই পাননি। আকারে বাড়লেও সেবা সেভাবে বাড়েনি। ব্যাংকিং কমিশন আমি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আর করছি না।
এ জন্য কাগজপত্র সব তৈরি করে রেখে দিচ্ছি, আগামী সরকারের জন্য। আগামীতে যে সরকার আসবে, তার জন্যই এটা রেখে যাচ্ছি।’
বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনি বছরে বাজেট বাস্তবায়নে তেমন একটা অসুবিধা হবে না।
বাজেটে করপোরেট ট্যাক্স হার কমানোর প্রস্তাব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘৪০ শতাংশের ওপর করপোরেট কর খুব কম দেশেই আছে। আমরাও সেটা নামিয়ে এনেছি।’
অনলাইনে কেনা-বেচায় ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কেনাবেচার ওপরই তো চার্জ বসানো হয়। অনলাইন কেনাবেচা এখন অনেক বেড়েছে। তাই চার্জ বসানো যেতেই পারে।’
এদিকে অনলাইন কেনাকাটায় কর বসানোই হয়নি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘বাজেটে অনলাইন কেনাকাটায় কর বসানো হয়নি। বাজেট বক্তৃতায় এটা ভুল ছাপা হয়ে থাকতে পারে। গুগল ও ইউটিউবের মতো ভার্চুয়াল ব্যবসার ওপর কর বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
প্রস্তাবিত বাজেটে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এতে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি দাঁড়াবে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির চার দশমিক নয় শতাংশ।
নিউজ ডেস্ক