Home / সারাদেশ / অভাবের কাছে ভালবাসার পরাজয়

অভাবের কাছে ভালবাসার পরাজয়

রংপুর অফিস :

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা চালাতেন আবেদ আলী। ভালবাসা আর পরম মমতায় দিন কাটতে কাটতে হঠাৎ অভাব এসে বাসা বাঁধে সংসারে। সুখের সংসারে শুরু হয় ভাঙন। প্রিয়তমা স্ত্রী হয়ে ওঠেন মানসিক নির্যাতনকারী। দুই সন্তানকে নিয়ে চলে যান বাপের বাড়ি। ফিরিয়ে আনতে গেলে অপমান করে তাড়িয়ে দেন স্ত্রী।

একদিকে অভাবের তাড়না, অন্যদিকে মানসিক যন্ত্রণা আর কষ্টে বেছে নেন আত্মহননের পথ।

গলায় দড়ি দেওয়ার আগে ক্ষোভে-দুঃখে দুই সন্তানকেও খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেন বিষ। অভাবের কাছে পরাজয় ঘটে ভালবাসা, মানবতার আর এক মহৎ জীবনের। সেই সঙ্গে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায় এক সম্ভাবনাময় সন্তানের ভবিষ্যৎ। অন্য সন্তানও আশঙ্কাজনক অবস্থায়। এটি কোনো সিনেমার গল্প নয়। রংপুরের পীরগঞ্জের হতদরিদ্র রিকশাচালক আবেদ আলীর জীবনের গল্প।

ওই ঘটনায় আবেদ আলীর বাবা আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। একযুগ সংসার করার পর স্ত্রীর ওপর অভিমান করে দুই সন্তানকে বিষ খাওয়ানোর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হয়ে চাঞ্চল্যের।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীর ওপর অভিমান করে দুই সন্তানকে খাবারের সঙ্গে বিষ প্রয়োগের পর আবেদ আলী (৩৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। শনিবার রাতে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খষ্টিগ্রামে ঘটনাটি ঘটে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই সন্তানের মধ্যে রুনা খাতুন (৭) রবিবার সকালে মারা যায়। আর তিন বছরের শিশু আপন বাবু এখনো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পীরগঞ্জের খষ্টিগ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে আবেদ আলীর (৩৫) সঙ্গে প্রায় ১২ বছর আগে একই উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের মামুনপুর গ্রামের ওয়াহেদ আলীর মেয়ে অলেদার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আবেদ আলী ঢাকায় রিকশা চালিয়ে জীবন-যাপন করতেন। সম্প্রতি আবেদ ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন তার স্ত্রী অলেদা বেগম শিশুপুত্র আপন বাবু (৩) ও কন্যা রুনা খাতুনকে (৭) নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে গেছেন।

আবেদ আলী তার স্ত্রীকে আনতে শনিবার বিকেলে গেলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আবেদ আলী তার বাড়িতে চলে আসেন। এরপর রাতে ছেলে ও মেয়েকে বিস্কুটের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর পর নিজে ঘরের ধরনার সঙ্গে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। বাড়ির লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে রাতেই আপন বাবু ও রুনাকে প্রথমে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি ঘটলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার দুপুরে রুনা খাতুন মারা যায়। আপন বাবুর অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

আবেদ আলীর লাশ রবিবার ময়নাতদন্ত শেষে বাবা ও মেয়েকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এদিকে, আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, ‘দারিদ্র্য নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝেমধ্যে ঝগড়া হতো। স্ত্রী রাগ করে বাবার বাড়িতে চলে যায়। বাবার বাড়ি থেকে আর ফিরে না আসার কারণে আবেদ আলী মনের দুঃখে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছেন।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনিছার রহমান বলেন, ‘আবেদ আলী মানসিক ভারসাম্যহীন। স্ত্রী না আসায় সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।’

এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মোকছেদ আলী বলেন, ‘তদন্ত চলছে। রবিবার বিকেলে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল আবেদীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।’

এদিকে, আবেদ আলীর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। আর এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। শিশু আপন বাবুকে নিয়ে শঙ্কিত সবাই। আবেদ আলীর বাবা আব্দুল মান্নান বলেন, এখন আপন বাবুকে কে দেখবে কে মানুষ করবে। তার দায়িত্ব কে নিবে?

তিনি তার ছেলের আত্মহত্যার পেছনে যে বা যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।