ফরিদগঞ্জে অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কাটছেন ইউপি চেয়ারম্যান

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে স্পিডব্রেকার দিয়ে ও লাল নিশানা উড়িয়ে অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাছেরগেরসহ সরকারি জায়গা থেকে মাটি কাটছে ইউপি চেয়ারম্যান! এতে হুমকীর মুখে পড়ছে জন গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। মাটি কেটে ট্রাক দিয়ে নেওয়ার সুবিধার্থে সড়ক রক্ষার গাইড ওয়াল ভেঙ্গে রাষ্ট্রিয় সম্পদ নষ্ট করার অপরাধ করেছেন ঐ জনপ্রতিনিধি। যিনি এই অপরাধ করেছেন তিনি একজন প্রভাবশালী চেয়ারম্যান। তাই উর্বর মাটি কাটা, অবৈধ ট্রাক ব্যবহার, রাস্তার গাইড ওয়াল ভাঙ্গা এবং নিজের খেয়ালে স্পিড ব্রেকার দেওয়ার মতো এতোগুলো অনিয়ম করার পরও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন চর ও যেই সকল জমি ধান চাষের উপযোগী সেই সকল সম্পত্তিতে যেন ধান চাষ করা হয়। কিন্তু চেয়ারম্যান তা না মেনে মাছ চাষ করার জন্য অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বিক্রি করছেন। তাহলে কি চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করছেন?

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদগঞ্জ খাজুরিয়া সড়কের ব্রহ্মপাড়া অংশে রাস্তায় দু’টি স্পিডব্রেকার দিয়ে, দু’টি লাল নিশানা উড়িয়ে অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে ফসলি জমিসহ সরকারি জায়গা থেকে মাটি কাটছে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বুলবুল আহাম্মেদ। এতে করে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি হুমকির মুখে পড়ছে। এছাড়াও ওই জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান যেখান থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন সেখানে সাবেক মৌজা ৩১০, বর্তমান খতিয়ান ৩/৪ এর ১৬০ ও ১৬৩ দাগে সরকারের ৩৬ শতাংস ভূমি রয়েছে। তিনি ব্যক্তিমালিকানা এবং সরকারি জায়াগাকে একসাথ করে কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।

জানা যায়, এ সড়কটি উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম। প্রতিনিয়ত এ সড়ক দিয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ এবং শত শত গাড়ী চলাচল করে। এ ব্যস্ত সড়কে স্পীডব্রেকার এবং লাল নিশানা উড়িয়ে অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কাটায় যেমনি ভাবে সড়ক হুমকির মুখে পড়ছে এবং বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকায় আতংকিত এ সড়কে চলাচলকারী সাধারন মানুষ। এ মাটি কেটে পাশ্ববর্তী ব্রিক ফিল্ডে বিক্রি করছে তারা। মাটি খেকোরা প্রভাবশালী বিধায় ভয়ে কেউই প্রতিবাদ করছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানান, সরকারি রাস্তার পাশ থেকে অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে ফসলি জমি ও মাছের ঝিল থেকে মাটি কাটছে ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহাম্মেদ। গত কয়েকদিন ধরে এভাবে মাটি কাটাচ্ছেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের লোক ও ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় কেউ বাধা দেয়ার সাহস পাচ্ছে না।

স্থানীয়রা আরো জানান, সড়কের পাশ কেটে অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়াা সময় ধুলো বালির কারনে আমাদের জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। আমরা ভয়ে বাঁধা দিতে পারছিনা। তিনি চেয়ারম্যান হয়ে প্রকাশ্যে এই অনিয়ম করতে পারেন না।

এ দিকে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেখে জাকির হোসেন নামে এক লোক এগিয়ে এসে বলে, ছবি তুলে লাভ নেই, আপনারা চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেন।

এ বিষয়ে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বুলবুল আহাম্মেদ বলেন,‘আমি এই সম্পদ মৎস্য খামার করার জন্য নিয়েছি। রাস্তায় স্পিডব্রেকার ও লাল নিশানা উড়িয়ে অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে সরকারি জায়গা ও ব্যাক্তি মালিকানা সম্পতি থেকে মাটি কাটার কথা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিকেলে ফরিদগঞ্জ এসে আপনাদের (সাংবাদিকদের) সাথে দেখা করবো।

এ বিষয়ে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা বেআইনি। তাকে মাটি কাটা থেকে বিরত থাকার জন্য বারন করেছি কিন্তু তিনি আমার কথা উপেক্ষা করে তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই আমি বাধ্য হয়ে উপজেলা ভূমি অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

উপজেলা মৎস অফিসার ফারহানা আক্তার বলেন, ‘তাকে বলা হয়েছে মাটি কেটে বড় জোর পাড় মেরামত করতে। মাটি বিক্রি করার কোনো অনুমতি নেই। আর এ বিষয়ে সে আমার সাথে কথা বলেনি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমুন নেছা জানান, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি সরকারের সম্পত্তি চিহ্নিত করে আলাদা করেতে এবং যে অংশ থেকে মাটি নিয়ে গেছে তা ভরাট করে দিতে। সেই সাথে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্যে বলা হয়েছে।’

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Share