হাইকোর্টে রায়ের পরও ফরিদগঞ্জে অবাধে চলছে অবৈধ ইটভাটা

লাইসেন্সবিহীন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অবাধে চলছে প্রায় ২০টি ইটভাটা। পৌরসভা ছাড়াও উপজেলার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে রয়েছে বেশ কয়টি অবৈধ ইটভাটা। গোপন সমজোতার কারনে লাইসেন্স ছাড়াই ওইসব অবৈধ ইঁটভাটায় পুড়ছে কাঠ, উড়ছে ধোঁয়া যার ফলে বিপর্যযস্ত হচ্ছে পরিবেশ। এতে করে পরিবেশের বিপর্যয় ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার গনমানুষ।

লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৭ নভেম্বর বিচারপতি আশরাফুল ইসলাম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্ময়ে গঠিত উচ্চ আদালতের বেঞ্চের এক রায়ে বলা হয়েছে যে, সরকারি লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ইটভাটা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে দায়ের করা একটি মামলার রায়ের আদেশ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। তবে একটি সুত্র অবশ্য জানিয়েছে বিভিন্ন দপ্তরের অসাধু লোকদের ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন থেকে চলছে লাইসেন্সবিহীন ওইসব ইটভাটা।

ইটভাটা করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের শর্ত মতে বনাঞ্চলের ৩ কি:মি: এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ কি:মি: এর মধ্যে ইটভাটা স্থাপন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার আইন রয়েছে। এসব আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় বে আইনী ভাবে ইটভাটা নির্মান করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। তবে একটি সুত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন ভাবে চাঁদা দিয়ে আসার সুবাদে এসব ইটভাটা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসেবে পৌর এলাকা ও উপজেলা উত্তর পূর্বাঞ্চলে মোট ২২ টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ইটভাটা চলমান রয়েছে ১৮টি। সরকারি লাইসেন্স ছাড়াই গোপন সমজোতায় চলছে প্রায় সকল ইটভাটা। ইতিপূর্বে লাইসেন্স না থাকায় উপজেলা প্রশাসন গাজীপুরে একটি ইটভাটা বন্ধ করলেও তা আবার কয়েক দিন পরে চালু হয়েছে।
সরেজমিনে পৌর এলাকার চরবসন্ত, গাজীপুর, সুবিদপুর, গুপ্টি এলাকায় খোজ নিয়ে দেখা যায়, একদিকে স্কুল, মাদ্রাসা আর রয়েছে হাট বাজার পাশাপাশি ঘন বসতিপূর্ণ লোকালয়। এর উভয়ের মাঝেই অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ফলে দীর্ঘ বছর ধরে চলতে থাকা ইটভাটার দূষিত ধোঁয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে নিয়ম রয়েছে পৌর এলাকায় কোন ইটভাটা করা যাবে না। সরকারের এমন নির্দেশনাকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে পৌর এলাকার গনবসতি পূর্ন চরবসন্ত গ্রামে ইটভাটা চলছে। গোপন সমজোতার ভিত্তিতে এই ইটভাটা চলছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অন্যদিকে ইট তৈরীতে ফসলি জমির টপ সয়েল মাটি ব্যবহার করার কারণে সংশ্লিষ্ট জমির উর্বরতা কমে গিয়ে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং ভাটা সংশ্লিষ্ট জমিগুলো দূষণের কবলে পড়ে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। সর্বোপরি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধ ইটভাটাটি ফসলি জমি বিনাশ করে গড়ে তোলা হয়েছে। মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে আর্থিক দন্ডাদেশ দিয়ে দায়সরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ওই এলাকার সাধারণ মানুষ বলেন, লোকালয়ে থাকা অবৈধ ইট ভাটা হওয়ার কারনে পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি হওয়ায় ধোঁয়া, ধুলাবালির কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিনিয়ত সর্দি কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ জানান, অবৈধ ইভাটার বিরুদ্ধে জনস্বার্থে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দারস্থ হয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি । ইটভাটার প্রভাবশালী মালিকদের হয়রানী থেকে বাঁচতে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

ফরিদগঞ্জে সরকারি লাইসেন্স ছাড়া বেশ কয়টি ইটভাটা থাকার কথা স্বীকার করে ইটভাটার মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শফিকুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ইটভাটার লাইসেন্স পেতে নানাহ হয়রানী বন্ধ করা সহ বিভিন্ন দাবিতে ইতিমধ্যে সারা দেশের ন্যায় আমরাও মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্বারকলিপি দিয়েছি। ইটভাটায় ইট তৈরীর ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেয়া শর্ত দেশের কোথায়ও মেনে ইট তৈরী করা যায়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি তুলে ইটভাটার ব্যবহার করা যাবে না। মাটির ক্ষেত্রে সরকারের এমন শর্ত থাকলে ইট তৈরীর জন্য মাটি কোথায় থেকে সংগ্রহ করবো ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশ্রাফ আহাম্মেদ চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, গনবসতি পূর্ন এলাকায় থাকা অবৈধ ইটভাটায় সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ দেখা দিতে পারে এবং ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ইটভাটায় সৃষ্ট দূষনে পরিবেশ বিপর্যয়সহ কৃষি উৎপাদন ও ফলমূলের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত এবং গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাঁধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

Share