চলতি বছরের ১২ অক্টোবর অবসরে যাচ্ছেন কচুয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পালগিরি বেগম রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: বিল্লাল হোসেন সরকার। তিনি একই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বুরগী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে এসএসসি, ১৯৮৩ সালে পয়ালগাছা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৮৫ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে বিএসসি’তে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন শেষে ১৯৮৭ সালের ৮ অক্টোবর পালগিরী বেগম রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (বিএসসি) হিসেবে যোগদান করেন। একই বিদ্যালয়ে তিনি সাফল্যের সাথে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে ১৯৯৮ সালের ১ জুন সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে কুমিল্লা কোটবাড়ি টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ থেকে বিএট সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর একই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। চলতি বছরের ১২ অক্টোবর ২০২৪ গুণী এ শিক্ষকের শেষ কর্মদিবস। গুণী এ শিক্ষক মো: বিল্লাল হোসেন সরকার বর্ণাঢ্য ৩৭ বছর মহান শিক্ষকতা পেশা শেষ করে অবসর গ্রহন করবেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে একজন বহু প্রতিভার অধিকারী শিক্ষক হিসেবেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।
তার এই বর্ণাঢ্য জীবনকে স্মরনীয় ও বরনীয় করে রাখতে সাপ্তাহিক শিকড় সংবাদ পত্রিকার বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে মো. বিল্লাল হোসেন সরকারের মহান শিক্ষকতার গল্প তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছেন সাপ্তাহিক শিকড় সংবাদের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক জিসান আহমেদ নান্নু।
কচুয়ার ঐতিহ্যবাহী পালগিরি বেগম রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নানা সমস্যা, সম্ভাবনা, পরিকল্পনা, শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন সরকার।
ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষানূরাগী ও সমাজসেবক ক্যাপ্টেন আব্দুর রব। ১৯৬৭ সালের তৎকালীন সময়ে এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের চাহিদা মিটাতে তার সহধর্মীনির নামে বেগম রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত বিদ্যালয়টি আমার পরিবারের সদস্য আমার মরহুম দাদা রহিম উদ্দিন পাটওয়ারীর নামে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তি ক্যাপ্টেন আব্দুর রবের সহধর্মীনি বেগম রাবেয়া এর নামে করার প্রস্তাব করেন। আমরা এ বিদ্যালয়ে পূর্বেও জমি দিয়েছি। এবং ২০২০ সালে আমার পরিবারের সদস্যরা পূনরায় ৫শতাংশ জমি দান করেন। তিনি বলেন, আমি এ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া চালু হয়। এবং এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমার সময়ে পালগিরি এলাকার বাহিরের কোন শিক্ষার্থী এ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করলে তাকে বিনা বেতনে শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ সুবিধা দেয় হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, এ বিদ্যালয়ের বর্তমানে প্রায় ৪শ শিক্ষার্থী ও ২২ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। সুদীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি। আমার এই শিক্ষকতা জীবনে এ বিদ্যালয়কে নিজের জীবনের চাইতে বেশি ভালোবেসে শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেছি। এ বিদ্যালয় থেকে বহু শিক্ষার্থী কর্মজীবনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।
তবে যতদূর সম্ভব শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা বা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক উন্নয়নের জন্য যা যা করার তা আমি করার চেষ্টা করেছি।
তিনি আরো জানান, শিক্ষকতা জীবনের বিগত সময়ে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকলে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। কোনদিন কারো সাথে মতানৈক্য কিংবা বিশৃঙ্খলা হয়নি। আমাদের দেশের সকল তরুণ বা আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখন আমরাও দ্বিধায় ছিলাম। কিন্তু ব্যাপারটা হলো যে, পড়াশোনা করার বিকল্প কিছু নেই। আজকাল দেখা যায় যে অনলাইন, বিশেষ করে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপ-এসব বিষয়গুলোতে তারা বেশি সময় দিয়ে থাকেন। আমার মনে হয় লাইব্রেরীতে যাওয়া, পড়াশোনা করা, নিয়মিত বই পড়া, মা-বাবার পরামর্শ গ্রহন করা, শিক্ষকের পরামর্শ গ্রহন করা-এগুলোতে যদি তারা অংশগ্রহন করে তারা মানসিকভাবে আত্মবিশ্বাসী হবে, ভবিষ্যতে তারা সফল হবে।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪