Home / সারাদেশ / অবসরের টাকার অপেক্ষায় ৪০ হাজার শিক্ষক
Retiredment

অবসরের টাকার অপেক্ষায় ৪০ হাজার শিক্ষক

শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর নিয়ে অনিশ্চিয়তায় দিন কাটছে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর। নিজেদের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্টহারে কেটে রাখা এ অর্থ অবসর গ্রহণের পর পাওয়ার কথা থাকলেও দিনের পর দিন ধরণা দিচ্ছেন রাজধানীর নীলক্ষেতে অবস্থিত ব্যানবেইস ভবনে।

এখানেই রয়েছে-‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’ ও ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’-এর আলাদা দুটি অফিস। এ দু’কার্যালয়ে জমা পড়ে আছে ৪০ হাজার শিক্ষকের অবসর ভাতা পাওয়ার আবেদন। টাকার অভাবে নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না এসব আবেদন।

জানা গেছে, শিক্ষকরা অবসর গ্রহণের পর সরকারি কর্মচারীদের মতো প্রচলিত পেনশন সুবিধা পান না। অবসর ভাতা আর কল্যাণ তহবিলের অর্থটুকুই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের শেষ সম্বল। এ সামান্য অর্থটুকু পেতে মন্ত্রী,এমপি,সচিবসহ প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন অনেকেই।

তাদের ডিও লেটার নিয়েও অবসর ও কল্যান ট্রাস্টের অফিসে জমা দিলেও টাকা মিলছে না। শিক্ষক-কর্মচারীরা জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। অবসরের টাকা হাতে না পেয়ে অনেকেই মারা গেছেন।

এখানেই শেষ নয়, সারা জীবন শিক্ষকতা করে নিজের জমানো এ অর্থটুকু পেতেও কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের গড়ে উঠা একটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন শিক্ষকরা। দ্রুত টাকা তুলে দেয়ার নামে অনেকের কাছ থেকে উৎকোচও নিচ্ছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এরকম প্রায় ডজনখানেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে ‘একটি সিন্ডিকেট’।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ বলেন, এ পর্যন্ত ২০১৭ সালের ১৭ জুনের আবেদনগুলো নিস্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। যারা টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করছেন তাদের কাগজপত্রে হয়তো সমস্যা থাকতে পারে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে দ্রুত টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। এখন অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয় এবং অনলাইনেই শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ব্যাংক তহবিলে টাকা জমা দেয়া হয়। আগের মতো শিক্ষকদের ঢাকায় এসে আবেদন জমা দিতে হয় না।

সিন্ডিকেটের হাতে প্রতারিত হচ্ছেনে শিক্ষকরা : বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা মো.মনির হোসেন সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ করেছেন। তার বাবার অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা দ্রুত পাইয়ে দিতে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন কল্যাণ ট্রাস্টের পিয়ন আল আমিন ও নয়ন নামের একজন সহকারী পরিচালক। তবে এ ঘটনাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে চাকুরি পাওয়া আল আমিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন সহকারী পরিচালক।

এ বিষয়ে মনির হোসেন ভোরের ডাককে বলেন, টাকা দিলেও কোনো লাভ হয়নি। ২ মাসের মধ্যে বাবার টাকা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ঘুষ নিয়েছে, কিন্তু টাকা পেয়েছি তার দেড় বছর পর।

অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্র জানায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি মাসের বেতন থেকে চার শতাংশ টাকা কেটে রাখা হতো। ওই টাকা দিয়ে তাদের অবসর সুবিধা দেয়া হয়। ২০০৯ সালের জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী চাঁদা বাবদ প্রতি মাসে ১৮ কোটি টাকা আয় হয়। আর অবসর সুবিধা প্রদানের জন্য দরকার হয় ৩৬ কোটি টাকা।

কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ হাজার ২৫৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এ আবেদন নিস্পত্তি করতে ৯১৩ কোটির বেশি টাকা দরকার। সরকার পাঁচ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেয়াও আরও চার শত কোটি টাকার দরকার হবে।

বর্তমানে প্রতি মাসে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা। আর টাকা দিতে হচ্ছে ৫০ কোটি। প্রতি মাসে ২০ কোটির বেশি ঘাটতি থাকছে। পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট না দিলে আমাদের খাটতি থাকতো না। ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত আবেদন নিস্পত্তি করা হয়েছে। এপ্রিল মাসের আবেদনের টাকা দেওয়ার কাজ চলছে।

বার্তা কক্ষ,১৬ ডিসেম্বর ২০১৯