জাতীয়

স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩ আগস্ট পর্যন্ত চলবে অফিস-গণপরিবহন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এখনকার মতো ১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সীমিতভাবে সরকারি-বেসরকারি অফিস চলমান থাকবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ ও ট্রেন) চালু থাকবে।

৩০ জুন মঙ্গলবার রাতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ তথ্য জানান।

মার্চ মাসের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রম অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, গত ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ছিল। পরে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খুলে দেয়া হয়, চালু করা হয় গণপরিবহন। পরে এ ব্যবস্থা ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। সেই মেয়াদ আজ শেষ হচ্ছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিং মল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। যেটা আগে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ছিল।’

সরকারি অফিস এখন যেভাবে চলছে সেভাবই চলবে জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এখন সীমিত পরিসরে যেভাবে গণপরিবহন চলছে, সেভাবেই ৩ আগস্ট পর্যন্ত চলাচল করবে। এ সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংক্রমণ যাতে কমানো যায় সেজন্য মানুষকে সচেতন করতে প্রচার-প্রচারণা চলাবে।’

তিনি বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাটের বিষয়ে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসবে।’

অন্যান্য ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধগুলো আগের মতোই থাকবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

পরে ৩ আগস্ট পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

নির্দেশনায় বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধ এবং পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার নিম্নলিখিত শর্তসাপেক্ষে দেশের সার্বিক কার্যাবলী এবং জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বর্ধিতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে-

>> ১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত এ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটি এই নিয়ন্ত্রণের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

>> রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) বাসস্থানের বাইরে আসা যাবে না। বাসস্থানের বাইরে মাস্ক পরিধান করা, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

>> হাটবাজার, দোকানপাটে ক্রয়-বিক্রয়কালে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে আগত যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট এবং শপিংমলগুলো আবশ্যিকভাবে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

>> সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পকারখানা ও সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে খোলা থাকবে।

>> গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানসমূহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে চলাচল করবে।

>> নিয়ন্ত্রণকালে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে, অনলাইন কোর্স বা ডিসটেন্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে পারবে।

>> অঞ্চলভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

>> এ সময়ে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনা প্রতিপালন করে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা পরিচালনা করা যাবে।

>> স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রণীত ‘কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি জোনভিত্তিক সংযমন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কৌশল/গাইড’ অনুসরণ করে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে। রেড জোন ঘোষণা করে সেই এলাকায় কেবল গুরুতর সংক্রমিত পরিসীমাকে লকডাউনের আওতায় আনতে হবে। সেখানে সর্বসাধারণের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি/বিষয়াদির সরবরাহ/প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে সুস্পষ্ট অনুমোদন ও নির্দেশনা দেবে। সিটি করপোরেশন এবং অন্যান্য এলাকায় জেলা প্রশাসন এ-সংক্রান্ত কার্যাবলীর সার্বিক সমন্বয় করবে।

>> আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোরবানির পশুর হাট আয়োজনের অনুমতি প্রদান করা যাবে এবং উল্লেখিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচল অব্যাহত থাকবে।

>> ঝুঁকিপূর্ণ, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।

>> জনসাধারণকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য করণীয় বিষয় অনুসরণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।

ঢাকা ব্যুরো চীফ,১ জুলাই ২০২০

Share