জাতীয়

অপরাধী পুলিশ সদস্যদের ধরতে মাঠে গোয়েন্দা

মাঠ পর্যায়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সাধারণ মানুষকে অকারণে হয়রানি ও অনিয়মের তদন্তে নেমেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

সরকার ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা নানা অপরাধে জড়িত এসব পুলিশ সদস্যের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যথাযথ তথ্য-প্রমাণ ও তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের এ নামের তালিকা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে পাঠানো হবে।

সম্প্রতি কতিপয় পুলিশ সদস্যের নানা অপরাধে জড়িত হওয়ায় নানা মহলে ব্যাপক সমালোচনা ও অসাধু পুলিশ সদস্যদের লাগাম টেনে ধরতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ওই গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও অপেশাদার পুলিশ সদস্য হঠাৎ করে যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব অসাধু পুলিশ সদস্য নানাভাবে শুধু নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নিরীহ মানুষের ওপর অকারণে নির্যাতন চালাচ্ছে। তুচ্ছ কারণে চালাচ্ছে আটক বাণিজ্য। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে হাতেগোনা কিছু দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য।

ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের কারণে সরকার ও গোটা পুলিশ বাহিনীর অনেক বড় অর্জন ম্লান হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব পুলিশ সদস্যের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ নিশ্চিত করে অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রিপোর্ট দেয়া হবে।

অসাধু পুলিশ সদস্যদের দুর্নীতি বন্ধ করাই এর মূল উদ্দ্যেশ্য। ইতিমধ্যে এমন কয়েক পুলিশ সদস্যের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের নিয়ে তদন্ত চলছে। অন্যদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

খোদ রাজধানীতে গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী ও ডিসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাসকে বিনাকারণে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় দোষী পুলিশের বিচারের দাবিতে সারাদেশে সমালোচনা ঝড় ওঠে। যদিও এ দুটি ঘটনায় জড়িত মোহাম্মদ ও যাত্রাবাড়ী থানার দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মাত্র।

এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই যাত্রাবাড়ী থানার ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়। এরপর গত মাসের শেষ সপ্তাহে উত্তরায় ব্যবসায়ীকে রাতভর আটক করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছে এক পুলিশ সদস্য। চলতি সপ্তাহে মোহাম্মদপুরে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে নিয়মবহির্ভূতভাবে দেহ তল্লাশি ও ইয়াবা ব্যবসায়ী বানিয়ে বাণিজ্য করার চেষ্টা চালান এক এসআই। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার কিংবা সাময়িক বরখাস্তের মধ্যে শাস্তি সীমাবদ্ধ থাকায়Ñ এটাকে ‘আইওয়াশ’ বলে মনে করেন অনেকেই।

এদিকে বুধবার রাতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের ছোঁড়া চুলার আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান মিরপুরের চা দোকানদার বাবুল মাতাব্বর। এ ঘটনায় মিরপুর শাহ আলী থানার ওসি একেএম শাহীন ম-লকে প্রত্যাহার ও দুই ৫ পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু ঢাকায় নয়, যশোরে ঝিকরগাছা ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় মোটরসাইকেল আরোহীকে আটক করে থানায় নিয়ে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, দাপটশালী ওই পুলিশ কর্মকর্তা মোটরসাইকেল আরোহীকে থানায় আটকে রেখে রাতে তাকে নিয়ে অভিযানের নামে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায়ও করেছে।

এরপরও অস্ত্র মামলা থেকে রেহাই পায়নি। এরপর আর এক মোটরসাইকেল আরোহীকে আটকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে পরে আবার টাকা ফেরত দিয়েছে।

এদিকে নোয়াখালীর চর জব্বারে গৃহবধূ ধর্ষণের বিচার চেয়ে থানায় গেলেও পুলিশ তাকে সহায়তা না করে আদালতে পাঠিয়ে দেয়। ধর্ষক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার পর তার ওপর নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। এরপরও থানা পুলিশ রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতাকে নানা জটিলতা দেখিয়ে গ্রেফতার করতে অনীহা প্রকাশ করছে।

ওই গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের দ্বারা সাধারণ মানুষ হয়রানি ও গাফিলতির শিকার হচ্ছে। যার অনেক ঘটনা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।

এমনকি ‘দেশের রাজা এখন পুলিশ’- এমন দম্ভোক্তিতে খোদ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বিব্রত। তাই মাঠ পর্যায়ের হাতে গোনা এসব অসাধু ও বেপরোয়া পুলিশের সদস্যদের তালিকা করছে গোয়েন্দারা। তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি অভিযোগের তদন্ত করছে গোয়েন্দারা। এসব পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় বাহিনী নেবে না- তা আগেই একাধিকবার জানিয়ে দিয়েছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

আরেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গত দুই বছরে সরকার দেশে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও গত বছর বিরোধী রাজনৈতিক দলের আগুন সন্ত্রাস মোকাবিলায় সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে।

সেক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় কয়েক পুলিশ সদস্যের কারণে সরকার ও গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেয়া যায় না। কারণ ওই অপেশাদার ও অসাধু পুলিশ সদস্যরা নিছক ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নানাভাবে অপকর্ম ও দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে।

প্রতিদিন সারাদেশে থেকে অভিযোগ আসছে। তাই তাদের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে নতুন করে তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা। (মানবকণ্ঠ)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট ১:১১ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ

Share