শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের কয়েকটি পাঠ্যবই নিয়ে নানারকম বিতর্ক, নানারকম প্রচারণা আমরা শুনছি। আমাদের বইতে নেই এমন কল্পিত বিষয় ও ছবি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। ভুয়া ও আপত্তিকর কনটেন্ট আমাদের বইয়ের বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
৭ ফেব্রুয়রি মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
দীপু মনি বলেন, ‘প্রচারণাগুলোর সিংহভাই অসত্য, অপপ্রচার। বিভিন্ন ছবি, বইয়ের ছবি, ফটোশপ করে সেগুলো নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন বইয়ে লেখা এডিট করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষাক্রমের নয়, আমাদের বই নয়, যে বই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ানো হয় না সেগুলোকে আমাদের বই বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। লেখকদের ব্যক্তিগতভাবে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে। তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রী সম্পর্কে কদর্য বিবৃতি, হুমকি দেওয়া তারা অব্যাহত রেখেছে। বরেণ্য যে শিক্ষাবিদরা নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও বিষোদগার করা হচ্ছে। কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ বছরের বইগুলোতে লিখেই দেওয়া আছে পরীক্ষামূলক সংস্করণ। বই বিতরণের সময় আমিও বলেছি, অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় যা কিছু পরিমার্জন দরকার তা করা হবে। যারা আক্রমণ করছেন তাদের কোনও প্রতিষ্ঠানে আমাদের এই শিক্ষাক্রমের বই কিন্তু পড়ানো হয় না। যেখানে পড়ানো হয় সেই জায়গা থেকে কিন্তু এইভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে না। যাদের প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয় তাদের মতামত নিয়েই পরীক্ষামূলক সংস্করণগুলো তৈরি করা হয়েছে এবং প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের যৌক্তিক পরামর্শগুলো পাইলটিংয়ে সময় গ্রহণ করা হয়েছে। তার পরও যদি কোনও ভুল থাকে সেগুলো সংশোধন করা হচ্ছে এবং হবে।’
তার বক্তব্য, ‘ইতোমধ্যে আমরা দুটো কমিটি করে দিয়েছি। একটি কমিটি সবার মতামত নিয়ে সুপারিশ করবে। কোথাও যদি ইচ্ছাকৃত বা গাফিলতির জন্য কিছু ঘটে থাকে তা চিহ্নিত করে দোষী ব্যক্তিদের কী শাস্তি দেওয়া যায় তারা আমাদের কাছে সুপারিশ করবে। বইয়ের কিছু ভুল যেগুলো চিহ্নিত হয়েছে তা ইতোমধ্যেই সংশোধন করা হয়েছে।’
দীপু মনি বলেন, ‘যারা বিষোদগার করছেন তারা নাকি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বলছেন, ইসলামকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বলছেন। যদি তাদের উদ্দেশ্য সৎ হতো তাহলে তারা গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে ভুল সংশোধনে আমাদের পরামর্শ দিতেন, মিথ্যাচার করতেন না। ফটোসপ করে, এডিট করে তারা এই মিথ্যাচার করতেন না।’
অপপ্রচারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অপপ্রচারের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভ্রান্তি সৃষ্টি। ধর্মকে অপব্যাবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে উত্তেজিত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। সরকারের বিরুদ্ধে যখন কোনও ইস্যু পাচ্ছে না তখন বইয়ের ওপর সওয়ার হয়ে মিথ্যাচারের মাধ্যমে একটি চিহ্নিত চক্র এই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ কখনও ইসলাম বিরোধী, কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোনও কিছু করেনি, কোনও দিন করবেও না। বরং বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে আজ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তার প্রায় সবটুকু বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাত দিয়ে হয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের এই নতুন শিক্ষাক্রম চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য। সারা বিশ্বই পরির্তনের কথা বলছে, আমরা এই কার্যক্রম আগে শুরু করেছি। সারা বিশ্বেই আমাদের এই কারিকুলাম প্রশংসিত হচ্ছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ইতিবাচক সাড়া দেখা যাচ্ছে। যারা অপপ্রচার করছে তাদের আপত্তিটা এখানে– আমাদের শিক্ষার্থীরা চিন্তা করতে শিখলে, ভাবতে শিখলে, সমস্যা নিরুপণ করতে শিখলে ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মের অপব্যাখা করে তাদের মগজ ধোলাই করা যাবে না। এ জন্যই এই চক্রটির আপত্তি। দয়া করে বই পড়ে দেখবেন অপপ্রচারে কান দেবেন না।’
বার্তা কক্ষ, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩