পেসার শফিউল ইসলামের ক্রিকেট ক্যারিয়ার প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। চোট আর নৈপুণ্যের ঘাটতিতে জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন তিনি ২০১৪ সালে।
এরপর জাতীয় দলের কোনো ফরমেটে আর তার ফেরা হয়নি। তবে এ বছর তার জন্য ফের সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত হয়েছিল। অক্টোবরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে। এরপর খেলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও।
মূলত ইনজুরি আক্রান্ত মোস্তাফিজুর রহমানের বদলে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। এরপর বিপিএল-এ খুলনা টাইটান্সের হয়ে ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা যেন পার করেন। ১৩ ম্যাচে ১৮ ইউকেট নিয়ে জায়গা করে নেন আসরের সেরা পাঁচ বোলারের মধ্যে।
এরই মধ্যে সুখবরটা আসে তাকে রাখা হয়েছে নিউজিল্যান্ডগামী প্রাথমিক দলে। কিন্তু দুর্ভাগ্য! ইনজুরিতে ফের ছিটকে পড়েন মাঠের বাইরে। যেখানে তার অস্ট্রেলিয়াতে প্রস্তুতি নেয়ার কথা সেখানে তিনি শুরু করবেন মাঠে ফেরার লড়াই।
নতুন করে আশা ও এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জাতীয় একটি দৈনিকের সাথে। সে কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: হঠাৎ দুর্ভাগ্য, বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল?
শফিউল: হ্যাঁ, ক্যারিয়ারে খুব ভালো একটা সময় পার করছিলাম। সত্যি এটাকে দুর্ভাগ্যই বলবো। এত বড় একটা সুযোগ ছিল নিজেকে ফের প্রমাণ করার কিন্তু পারলাম না। আজ আমার নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য অস্ট্রেলিয়াতে থাকার কথা। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার কথা। কিন্তু এখন দেশে বসে আছি। সত্যি অনেক বড় সুযোগ হারালাম।
প্রশ্ন: কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করছেন?
শফিউল: রিহ্যাব শুরু করছি। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ফিজিও একটা চার্ট করে দেবেন কিভাবে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করবো। কী কী করতে হবে। আসলে বলতে পারছি না মাঠে ফিরতে কতদিন লাগবে। চোট-মুক্তির প্রক্রিয়া শেষ হলে মাঠে অনুশীলন শুরু হবে। ফিজিও বলে দেবেন কবে মাঠে বল করতে পারবো। লক্ষ্য একটাই, যে রিদমে ছিলাম যেন সেই রিদমেই মাঠে ফিরতে পারি।
প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য কতটা আত্মবিশ্বাস ছিল?
শফিউল: আমি আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড সিরিজে খারাপ করিনি। সেটা আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে বিপিএল-এ। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলাম। ভাগ্য খুবই ভালো ছিল উইকেট পাচ্ছিলাম। মূলত বিপিএল’র আত্মবিশ্বাসটা নিউজিল্যান্ডে কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম। কারণ এখানে উইকেটটা পেসারদের জন্য নয়। তারপরও এখানে ভালো হচ্ছিল। আর নিউজিল্যান্ডের পেসবান্ধব উইকেটে আরো ভালো হতো বলেই বিশ্বাস।
প্রশ্ন: পরিবারের অনেক আশা ছিল নিশ্চয়ই।
শফিউল: অনেক দিন পর বাড়ির সবাই দারুণ খুশি ছিল যে আমি আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারছি। এমনকি নিউজিল্যান্ডেও খেলতে যাব। তাদের মন বেশ খারাপ। তবে সবাই আমাকে ভরসা দিচ্ছে আমি যেন ভেঙে না পড়ি। নিজেকে প্রস্তুত করতে যা যা করার প্রয়োজন তা করি। আসলে এমন মুহূর্তে পরিবারের সমর্থন খুব দরকার হয়। সেটা আমি পাচ্ছি।
প্রশ্ন: বিপিএল থেকে অর্জন কি ছিল?
শফিউল: বিপিএল’র মতো আসরগুলোতে যেটা হয় অনেক নামি-দামি বিদেশি ক্রিকেটারের সঙ্গে এক সঙ্গে ওঠাবসা করা যায়। দেশের যারা সেরা ক্রিকেটার তাদের সঙ্গে সময় কাটানো যায়। যেমন জুনায়েদ খান, কেভিন কুপার তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। কিভাবে টি-টোয়েন্টিতে বল করতে হয়, কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ আনতে হয়, এসব জেনেছি। আর একটা বিষয় হলো, বড় ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
প্রশ্ন: বিপিএল-এ সাফল্যের নেপথ্যে কি উইকেট?
শফিউল: না, উইকেট ভালো থাকলেও আমার চেষ্টা ছিল ভাল জায়গাতে বল করা ও ডট বল দেয়া। কারণ টি- টোয়েন্টিতে এই জিনিসটা করতে পারলে রান নিতে না পেরে ব্যাটসম্যান অস্থির হয়ে উইকেট দেয়। আমি এই কৌশলেই সফল হয়েছি।
প্রশ্ন: বিপিএল-এ সেরা পাঁচ বোলারই পেসার। তাহলে কি বাংলাদেশে স্পিনারদের দাপট কমতে শুরু করেছে?
শফিউল: বিষয়টা ঠিক নয়। স্পিনাররাও বেশ ভালো করেছে। সাকিব ভাই, রিয়াদ ভাই, তাইজুল, সাকলাইন, রশিদ খান সবাই কিন্তু ভালো করেছে। তারা টাইট বল করাতে পেসাররাও উইকেট পেয়েছে। স্পিনাররা প্রেসার দিতে পেরেছে আর পেসাররা ভালো বল করে উইকেট তুলে নিয়েছে। এখানে স্পিনারদের দাপট কমবে না কখনোই।
প্রশ্ন: আগের তুলনায় উইকেট এখন কেমন?
শফিউল: উইকেটে বেশ পরিবর্তন এসেছে। মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে পেসাররা একটু সহায়তা পাচ্ছে। তবে এখন যে রকম উইকেট সব বোলারকেই পরিশ্রম করে উইকেট পেতে হয়।
প্রশ্ন: নিউজিল্যান্ডে সিরিজের জন্য দলে থাকা বেশির ভাগ পেসারই ইনজুরিতে। এই অবস্থাতে দল কতটা ভালো করবে বলে মনে করেন?
শফিউল: মোস্তাফিজ দলের অনেক বড় সম্পদ। ও এখন ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেছে। আশা করি আগের মতো বল করতে পারবে। আর বড় কথা হলো এখন দলে যে পেসাররা আছে তারা দারুণ বল করছে। আমার বিশ্বাস নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তারা বেশ ভালো করবে। (মানবজমিন)
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur