প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন । একই সঙ্গে অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি দলকে সাংগঠনিকভাবে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করা, তৃণমূলের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব, রাগ-অভিমান সমাধান করার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু উল্টো পথে হাঁটছে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদনবিহীন কমিটি।
আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত ও বেগবান করার লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করে। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছর পরিচালিত অনুমোদনবিহীন উপজেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত আহ্বায়ক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে।
মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্ন্তভূক্ত ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় কমিটি থাকাবস্থায় অর্থের বিনিময়ে ও গায়ের জোরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাইব্রিডদের নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। তা নিয়ে ত্যাগী নেতাদের মনে চরম ক্ষোভ রয়েছে। যেকোন সময় ঘটতে পরে গণবিস্ফোরণ।
নেতা-কর্মীরা জানান, ধ্বজভঙ্গ অবস্থায় চলছে সংগঠনের কার্যক্রম। সাবেক কমিটির বেশির ভাগ নেতারাই দলীয় কাজে নিস্ক্রিয় এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। হাতেগোনা কয়েকজন কে নিয়ে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২জন মিলে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন দলকে। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনা শেষে একটি আহ্বায়ক ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করা হয়। তৃণমূলের নেতৃবৃন্দরা খুশি হলেও শতবর্ষীরা খুশি হতে পারেনি। কারণ ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
উদহারণস্বরূপ তিনি বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানের উভয়ের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেন শতবর্ষী কমিটির হোতারা । এই টাকা নিয়ে স্থানীয় এমপি এর সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। এমপি প্রকাশ্যে জনগনের সামনে ঘোষণা দিয়েছেন লেনদেনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে দশানী মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সম্মেলনে অ্যাড. রুহুল আমিনকে সভাপতি ও এমএ কুদ্দুসকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
৬৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর প্রেরণ করা প্রস্তাবিত কমিটিতে সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম এর সুপারিশ ছিল। জেলা কমিটি কর্তৃক অনুমোদন ছাড়াই এক সুপারিশের বলে উক্ত কমিটি চালিয়ে দেয়া হয় দীর্ঘ ১৮ বছর। কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন ইউনিট কমিটির তালিকা প্রেরণের সিদ্ধান্ত হলে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদন বিহীন কমিটি তাদের অনুমোদনের স্বপক্ষে কোনো ডকুমেন্টস দেখাতে পারে নাই।
তৎপরবর্তীকালে ২০২০ সালের পহেলা ডিসেম্বর মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদন বিহীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রের নির্দেশক্রমে মুক্তিযোদ্ধা মিয়া জাহাঙ্গীর আলম কে আহবায়ক ও জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার কে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করে ৩২ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগ। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি কেন্দ্র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাথে দলীয় সকল কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা পালন শুরু করে। আর এতেই বাঁধ সাধে অনুমোদনবিহীন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা জেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি কে না মেনে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এতে মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃনমুল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে টানাপোড়েন চলছে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে। ২০০০ সালে মতলব উত্তর উপজেলা সৃষ্টির পর থেকে এ যাবৎ মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অনুমোদিত পুর্নাঙ্গ কমিটি পায়নি। দীর্ঘ ১৪/১৫ বছর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতী লীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি হয় না।
তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ রয়েছে অনুমোদনবিহীন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই মতলব উত্তর উপজেলায় সরকারি দল হওয়া সত্ত্বেও সাংগঠনিক দুর্বলতা ও স্থবিরতা বিরাজমান।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শাহ আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজী হননি। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে জানার জন্য অনুরোধ করেন।
চাঁদপুর জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটোয়ারী মুঠোফোনে বলেন, আগামী ২অক্টোবর সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। দলীয় কোন্দল মীমাংসের জন্যেই তৃণমূল প্রতিনিধি সভা। বৈধ কমিটির কোন সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক জীবিত থাকাবস্থায় সেই কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে দূরে সরিয়ে অন্য কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে না। এ বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তাদের এ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।