জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে রয়েছেন বেসরকারি স্কুল কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষক। দাবি আদায়ে ক্লাসের পাঠদান বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে আন্দোলনে শিক্ষকদের উপস্থিতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষকরা। গত আট দিন ধরে শিক্ষকরা এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
তবে শিক্ষকদের এ আন্দোলনের বিষয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার এই অধিদপ্তর পৃথক পৃথক বিবৃতিতে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানে কত জন শিক্ষক অনুপস্থিত আছেন তা তদারকি করতে মাউশির পক্ষ থেকে স্কুলের গভর্নিং বডি এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, দৈনন্দিন শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতে শিক্ষকের এবং তা পর্যবেক্ষণে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়মিত উপস্থিতি অপরিহার্য। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও কোনো কোনো শিক্ষক নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছেন। পাশাপাশি এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডিরও কোনোরূপ নজরদারি না থাকায় নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি সক্রিয় তদারকি, শিক্ষকদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান কার্যকর ভূমিকা নেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে মিথ্যা ও উসকানিমূলক প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসব নির্দেশনা পালনে কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জারি করা পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন পর্যায়ের মাদ্রাসার কতিপয় শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান ব্যতিরেকে কর্মস্থলের বাহিরে অবস্থান করছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে তাদের ব্যক্তিগত ওয়ালে ও বিভিন্ন গ্রুপে আন্দোলনের নামে কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে অশোভন, অনৈতিক, শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছেন। এতে মাদ্রাসায় শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার পরিপন্থী। মাদ্রাসায় কর্মরত সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীগণকে উল্লিখিত কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে গত সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে আন্দোলনে সরব রয়েছেন শিক্ষকরা। এ কর্মসূচিতে বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যান্য সংগঠনও অংশ নিয়েছে। অন্যান্য দিনের মতো গতকালও সকাল থেকেও প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। সকাল ৮টা থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষকরা। সকাল ১০টার মধ্যে পল্টন মোড় থেকে হাইকোর্ট মোড়গামী রাস্তা অবরোধ করেন তারা।
বিটিএর সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমেদ বলেন, আমাদের মূল দাবি জাতীয়করণ। এ দাবি নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে দাবির বিষয় নিয়ে বৈঠক করবেন। আমরা বৈঠকেও দাবির বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সাধারণ শিক্ষকরা আমাদের জানিয়েছেন, স্কুল তালা দিয়ে এসেছি। ফল না দিয়ে স্কুলে ফিরে যাব না।
১৯ জুলাই ২০২৩
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur