আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাঁদপুরে অন্যান্য বছরের তুলনা এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর তাই হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। এছাড়া জেলায় এ বছর নতুন করে চাষাবাদ শুরু হয়েছে নতুন জাতের আখ রঙ্গ বিলাসের।
চলতি বছরে জেলায় আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫শ’৬৭ হেক্টর আর চাষাবাদ হয়েছে ৬শ’৩৩ হেক্টর। দেশীয় জাতের আখ (চাঁদপুর গেন্ডারী) চাষে চাঁদপুর জেলার সুনাম ও স-ুখ্যাতি বহু বছরের।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬ হেক্টর জমিতে আখ চাষ বেশি হয়েছে। কারণ চাঁদপুরে এ বছর জলবদ্ধতা না থাকায় সেচ প্রকল্পে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি ও আবহাওয়াও ছিলো অনুকূলে।
এ বছর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় ১শ’৪০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১শ’৫২ হেক্টর, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ১ হেক্টর, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ৮ হেক্টর, শাহরাস্তি উপজেলায় ৩০ হেক্টর, কচুয়া উপজেলায় ৭ হেক্টর, হাইমচর উপজেলায় ১০ হেক্টর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ২শ’৮৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে আখ কাটা।
আখ চাষের জন্য বিখ্যাত ফরিদগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার বালিথুবা, কড়ইতলী, রূপসা, গোবিন্দপুর ইউনিয়নে আখের চাষাবাদ বেশি হয়। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় দেশীয় জাতের ২০৮ ‘চাঁদপুর গেন্ডারী’। চিবিয়ে খাওয়ার জন্য এ আখ অন্যতম।
বালিথুবা ইউনিয়নের বালিথুবা গ্রামের কৃষক মফিজুল ইসলাম বরকন্দাজ জানান, তিনি ১৬ বছর ধরে আখ চাষ করছেন। আখ চাষের জন্য কোনো প্র্রশিক্ষণ না থাকলেও পূর্ব পুরুষরা যেভাবে করেছেন, তিনিও সেভাবেই চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে নতুন জাতের রঙ্গ বিলাস আখের চাষ করেছেন।
নতুন জাতের এ আখের ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। দেশিয় জাতের আখের চাইতে রঙ্গ বিলাস আখের বাজার দর অনেক বেশি। প্রতিটি আখের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা।
একই গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবির জানান, তিনি দেশীয় জাতের আখ চাষ করেন। কৃষি অফিস থেকে কেউ তাদের কাছে আসেনি। নিজেরা পরিশ্রম করে আখ চাষ করেন। এ বছর তাদের আখের ফলন অন্য বছরের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে তিনি আখ কাটা শুরু করবেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজার এলাকার কৃষক বাবুল জানান, তিনি আখ চাষের পাশাপাশি আখের ব্যবসাও করেন। তিনি একটি জমিতে চাষ করা আখ দাম করে কিনে নেন। পরে এসব আখ নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ট্রাক ও লঞ্চে করে পাঠিয়ে দেন। দেশীয় এবং ঈশ্বরদী-২৪ জাতের আখ বেশির ভাগ চিবিয়ে খাওয়ার জন্য বিক্রি হয়। ঈশ্বরদী-২৪ জাতের আখ বেড়িবাঁধের বাইরে পানির ভেতরেও চাষাবাদ করা হয়।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আ. মান্নান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘চাঁদপুরে সাধারণত: দেশিয় প্রজাতের আখ চাষ হয়। যা চাঁদপুর গেন্ডারী নামে পরিচিত। এছাড়াও ঈশ্বরদি-২৪ এবং নতুন করে রঙ্গ বিলাস জাতের আখের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।’
ফলন ভালো হওয়ায় রঙ্গ বিলাসের চাষ আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলী আহমদ চাঁদপুর টইমসকে বলেন, ‘চাঁদপুরের কৃষকরা আলু এবং ধানের জমিতে আখ চাষ করে থাকেন। এ কারণে পরিচর্যা ছাড়াই চাষ করা সম্ভব। এতে তেমন কোনো খরচও নেই। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া নতুন জাতের আখ (রঙ্গ বিলাস) চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’