স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ভাঙবেন না। এ অবস্থায় শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মন্ত্রীর আশ্বাসে তারা ঘরে ফিরে যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। শিক্ষকরা বলছেন, অনশন করতে গিয়ে মৃত্যু হলেও তারা রাস্তা ছাড়বেন না।
রবিবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা বৈঠকের পর এমন অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালে শিক্ষামন্ত্রীকে আমরা বলেছি প্রতিশ্রুতি দিতে। মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি নন। পরে আমরা বলেছি, যদি অর্থ বরাদ্দ না থাকে তাহলে পরবর্তী অর্থ বছর থেকে নিবন্ধন পাওয়া সব ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোকে যাচাই-বাছাই করে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’গ্রুপে ভাগ করে ধাপে ধাপে জাতীয়করণ করেন। মন্ত্রী এতেও রাজি নন। তখন আমরা মিটিং থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম জাতীয়করণের দাবি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনশন ভাঙব না।
রোববার অনশনরত শিক্ষকদের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বৈঠক করেন। বৈঠকে অনশন ভেঙে বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেন মন্ত্রী।
বৈঠকে আন্দোলনরত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকগণের দাবির বিষয়ে আলোচনা হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সক্রিয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে। বৈঠককালে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা সচিব মো. আলমগীর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথমে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পরিবহন পুল ভবনে মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর বেলা দেড়টার দিকে মাদ্রাসা শিক্ষকদের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকে বসেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এসময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বৈঠকে যোগ দেন।
দুই দফা বৈঠকের পর শিক্ষক সমিতির সম্পাদক শামসুল আলম জানান, শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দাবি মেনে নেওয়ার। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দাবির বিষয়টি মেনে নিবেন। কিন্তু আমরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া অনশন প্রত্যাহার করবো না।
গত ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসছেন ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। পরে ৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। গতকাল ৬ষ্ঠ দিনে গড়ায় তাদের অনশন। প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যাও। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত ১৬৫ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। কেউ কেউ স্যালাইন নিয়েই অনশন করছেন। অসুস্থদের অধিকাংশই অতিরিক্ত শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়াও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে ভর্তি আছেন ৮ শিক্ষক।
তথ্য অনুযায়ী, মাদ্রাসা বোর্ডের নিবন্ধন পাওয়া ১০ হাজারের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। এতে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। মাত্র এক হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক দুই হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা দুই হাজার ৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ৪০ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার
এইউ