জাতীয়

অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য আসছে নয়া নীতিমালা

চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক:

অনলাইন গণমাধ্যমের তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে জাতীয় সম্প্রচার কমিশনের ওপর। যারা সম্প্রচারমাধ্যমও তদারক করবে। এ ছাড়া রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের ভাষণসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত স্বেচ্ছায় প্রচার করাসহ বেশ কিছু বিধিনিষেধ যুক্ত করে অনলাইন গণমাধ্যমের জন্য একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার।

‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত করে এখন মতামত নিচ্ছে তথ্য মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকারের সময়ই এই নীতিমালা করার উদ্যোগটি শুরু হয়েছিল। সরকার মনে করছে এখনই নীতিমালাটি করার উপযুক্ত সময়।

নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ বলেন, খসড়া সম্পর্কে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সর্বসাধারণের মতামত নেওয়া হবে। এরপর মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অংশীজনদের নিয়ে একটি সভা করে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, অনলাইন গণমাধ্যমে কোনো প্রকার অসংগতিপূর্ণ, বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য-উপাত্ত দেওয়া যাবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সম্প্রচার নীতিমালার মতো অনলাইন গণমাধ্যমেও সশস্ত্র বাহিনী এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ বা অবমাননাকর তথ্য প্রচার করা যাবে না। কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত গোপনীয় বা মর্যাদাহানিকর তথ্য প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে না। রাষ্ট্রদ্রোহ, নৈরাজ্য এবং হিংসাত্মক ঘটনা প্রদর্শন করে এমন তথ্য-উপাত্ত প্রচার করা যাবে না। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে- এমন কোনো তথ্য ফাঁস করা যাবে না। সব ধরনের তথ্য-উপাত্তে উভয় পক্ষের যুক্তিগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকতে হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ-যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, যেভাবে অনলাইন গণমাধ্যম বিকশিত হচ্ছে, সেখানে একটি নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। কারণ, কতগুলো অনলাইন গণমাধ্যম আছে সেটা যেমন জানা দরকার, একটি নিবন্ধন থাকাও দরকার। তবে নীতিমালা যেন চাপিয়ে না দেওয়া হয় এবং সেটা যেন গণমাধ্যমের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে নষ্ট না করে। গণমাধ্যমে যেন হস্তক্ষেপ না হয়। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এটা লক্ষ করতে হবে।

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইন গণমাধ্যম বলতে বাংলা, ইংরেজি বা অন্যকোনো ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি, লেখা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্যকোনো রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। সব অনলাইন গণমাধ্যমকে নিবন্ধিত হতে হবে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, জাতীয় সম্প্রচার কমিশন অনলাইন গণমাধ্যমের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকলেও কমিশন শুধু সুপারিশ করতে পারবে। শাস্তির ক্ষমতা রাখা হয়েছে সরকারের হাতেই। এ বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনো তথ্য-উপাত্ত যদি কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের অধিকার ক্ষুণ্ন করে তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কমিশনের কাছে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। এরপর কমিশন অভিযোগ তদন্ত করে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সরকার আইন বা বিধি মোতাবেক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারবে। আইন বা বিধিমালা না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন গণমাধ্যম বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের লক্ষ্যে এখন আইন তৈরির কাজ চলছে।

প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় সম্পর্কে ক্ষতি করে এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রচার, প্রকাশ বা সম্প্রচার করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও নীতিমালা সমুন্নত রাখতে হবে। প্রত্যেক অনলাইন গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতিমালা নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত বিজ্ঞাপন প্রচারেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। বিজ্ঞাপনের ভাষা, দৃশ্য কিংবা নির্দেশনা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক অনুভূতির প্রতি পীড়াদায়ক হতে পারবে না। ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য হাসিলের লক্ষ্যে মসজিদ, মন্দির, গির্জা প্রভৃতি স্থানের ধর্মীয় স্থিরচিত্র কিংবা চলমান চিত্র উপস্থাপন করা যাবে না। প্রচারিত বিজ্ঞাপনে পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণ সনদপত্র উপস্থাপন করতে হবে।

এর আগে গত বছরের ৭ আগস্ট সরকার সম্প্রচার নীতিমালা জারি করে, যা নিয়ে সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সমালোচনা আছে। এর আগে গত বছরেই পত্রিকার প্রকাশনা বাতিলের ক্ষমতা সন্নিবেশিত করে দ্য প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ সংশোধনেরও উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ নিয়েও সমালোচনা হলে উদ্যোগটি স্থগিত করা হয়। কালের কণ্ঠ

Share