চাঁদপুর

অনলাইনে তরুণদের হাত ধরে চাঁদপুরের ইলিশ যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে

স্বাদে-গুণে অনন্য চাঁদপুরের ইলিশ। ইলিশ উৎপাদনের জন্য চাঁদপুর জেলা ব্যাপক সমাদৃত। এজন্য এই জেলাকে ‘ইলিশের বাড়ি’ বলা হয়। ইলিশ পাওয়া এবং খাওয়া চাঁদপুরের মানুষের জন্য সহজ ও দৈনন্দিন ঘটনা হলেও অন্য জেলার মানুষের জন্য দুরুহ ও কষ্টসাধ্য। চাঁদপুরের ইলিশের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষাও করতে হয় অন্যদের।

দেশের সবকিছুতেই ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। এর সুফলও পাচ্ছে মানুষ। এবার নতুন করে চাঁদপুরের রূপালি ইলিশে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। করোনাকালীন ইলিশ ঘিরে উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন অনেক যুবক। অন্তত দুই ডজন তরুণের হাত ধরে চাঁদপুরের ইলিশ যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। এজন্য মৌসুমের শুরুতেই বেড়ে গেছে ইলিশ বিক্রি।

এ অবস্থায় সব জেলার মানুষ যাতে সহজে চাঁদপুরের ইলিশ খেতে পান। এমনকি চাইলেই পেতে পারেন- সেই লক্ষ্যে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রথম ‘অনলাইন ইলিশ বাজার’ কার্যক্রম চালু করেন চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মণ্ডল। তার বিশ্বাস ছিল, এই অনলাইন ইলিশ বাজারের মাধ্যমে পছন্দের ইলিশ মাছ খুব সহজেই হাতের নাগালে পাবেন ক্রেতারা। অবশ্য পরে সেটি আর সামনে অগ্রসর হতে পারেনি। এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন: দক্ষতা আর প্রচারণার অভাবে নিস্ক্রিয় চাঁদপুর অনলাইন ইলিশ বাজার

তখনকার সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হলেও চলতি ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই অনলাইন ও ফেসবুক গ্রুপে ইলিশ বিক্রির ধুম পড়েছে। বিশেষ করে দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জনপ্রিয় ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ‘উইম্যান অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)’ গ্রুপে বেশ কয়েকজন তরুণ চাঁদপুরের ইলিশ নিয়ে কাজ করছেন।

পাশাপাশি অনেকেই ফেসবুকে গ্রুপ খুলে সারাদেশে ইলিশ বিক্রি করছেন। সব মিলে প্রতিদিন অনলাইনে অর্ডার পেয়ে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় ১০-১২ মণ ইলিশ। অনলাইনে গড়ে প্রতি মণ ইলিশ ৩০-৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। অবশ্য ঘাটে এসব ইলিশের মণ ২৫-৩০ হাজার টাকা। সব মিলে অনলাইনে প্রতিদিন সব মিলে চার লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হয়।

অনলাইনে চাঁদপুরের ইলিশ বিক্রি করছেন ইকবাল হোসেন ও জাকির হোসেন। তারা নিজস্ব ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারাদেশে ইলিশ পাঠাচ্ছেন। এতে যেমন চাঁদপুরের ইলিশের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে, তেমনি তারাও লাভবান হচ্ছেন।

ইকবাল হোসেন বলেন, ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ক্রেতাদের সঙ্গে ইলিশের আকার ও দাম নিয়ে চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়। যখন অর্ডার নেয়া হয় তখন ক্রেতাকে কিছু টাকা বিকাশ করতে বলা হয়। যদি বিকাশ করা হয় তবে ধরে নেয়া হয় তিনি মাছ নিতে আগ্রহী। তারপর নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো হয় ইলিশ। বিনিময়ে বাড়তি চার্জ রাখা হয়। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৬০০ টাকা। ৮০০ থেকে এক হাজার গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি এক হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হয়।

এদিকে কেউ কেউ নামে-বেনামে ফেসবুক গ্রুপ খুলে চাঁদপুরের ইলিশ বিক্রির নামে প্রতারণা করছেন। এদের কেউ কেউ চাঁদপুরের ইলিশ বলে ক্রেতাদের হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরিশাল ও ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানের ইলিশ দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দামও রাখছেন বেশি। এজন্য যাচাই-বাছাই করে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ও ফেসবুক গ্রুপ থেকে ইলিশ কেনার অনুরোধ করেন স্থানীয় ইলিশ ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের সরবরাহ কমেছে। আগের চেয়ে মণপ্রতি দামও কিছুটা কমেছে। ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ১৫-১৬ হাজার টাকা। ৮০০ থেকে এক হাজার গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৩০ থেকে ৩৬ হাজার টাকায় কেনাবেচা হয়।

চাঁদপুর মাছঘাটের আড়তদাররা জানান, কেবল ইলিশের মৌসুম শুরু হলো। মৌসুমে চাঁদপুর মাছঘাটে প্রতিদিন আট-দশ হাজার মণ ইলিশ কেনাবেচা হয়। এখন প্রতিদিন গড়ে দেড়-দুই হাজার মণ ইলিশ কেনাবেচা হয়।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সবার পক্ষে ইলিশ চেনা কঠিন। এর সমাধান পাওয়াও কঠিন। অন্য অঞ্চলের ইলিশ চাঁদপুরের ইলিশ বলে সবাই চালিয়ে দেয়। তবে এক্ষেত্রে চাঁদপুরের সুনাম রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। যাচাই-বাছাই করে ইলিশ কিনতে হবে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, যদি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে কেউ ইলিশ কিনে প্রতারিত হন তাহলে আইনের আশ্রয় নিন। সেই সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করতে পারেন। যেহেতু মুক্তবাজার অর্থনীতি তাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে হুট করে কোনো কিছু নির্ধারণ করা ঠিক হবে না।

করেসপন্ডেট,২৮ আগস্ট ২০২০

Share