শীর্ষ সংবাদ

অত্যাধুনিক নিজস্ব ভবন পেলেও জমে উঠেনি চাঁদপুর জেলা গ্রন্থাগার

দেশের ছয় জেলার সাথে সৌভাগ্যবান জেলা হিসেবে চাঁদপুরেও ৬ কোটির অধিক টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক ৩ তলা বিশিষ্ট সরকারি গণগ্রন্থাগার। অথচ দীর্ঘদিন ভাড়াটিয়া থেকে নিজস্ব ভবন পেলেও জমে উঠছে না চাঁদপুর জেলা সরাকারি গ্রন্থাগার। যার প্রধান কারণ হিসেবে পাঠক চিহ্নিত করেছে এর সাইড সিলেকশন। শহর থেকে দূরে একটি এলাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ ভবনটি হওয়ায় সেখানে যেতে যে সময় এবং অর্থের প্রয়োজন তার জন্যেই মূলত পাঠক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে জেলা সরকারি গ্রন্থাগার। আর প্রচারপ্রচারণা না থাকায় অনেকেই জানে না যে, চাঁদপুর জেলা গ্রন্থাগারটি কোথায় অবস্থিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের আস্তবায়নাধীন ‘ছয়টি জেলার পাবলিক লাইব্রেরীর উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর চাঁদপুর জেলা সরকারি গ্রন্থাগারের নির্মাণ কাজ উদ্ধোধন করেন চাঁদপুর-৩ আসনের এমপি ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে ছিলো জেলা গণপূর্ত বিভাগ। শহর থেকে দূরে ষোলঘর বিটি রোড়ে ২২ শতক জমি ভূমি অধিগ্রহনের মাধ্যমে সেখানে গড়ে তোলা হয় জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি।

অভিযোগ উঠেছে, জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটির সাইড সিলেকশন, ভবনের ডিজাইনে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম ও দূর্বল চিন্তা ছিলো। যার ফলে শহর থেকে এতো দূরে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও পাশে জমি থাকা সত্ত্বেও মূল সড়ক থেকে দূরে তিনপাশে বসতবাড়ি বেষ্টিত স্থানে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করায় এর সোন্দর্য অনেকটাই ম্লান হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ভবন বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো পর্যন্ত বুজিয়ে দেয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের ষোলঘর বিটি রোড়ের পড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্ভলিত জেলা গ্রন্থাগার। মূল সড়কের পাশে পাশে একটি বাউন্ডারী বাড়ির উত্তর পাশে গ্রন্থগার ভবনটি। গেইট পার হয়ে ভেতরে যেতেই নির্মাণকাজ চলমান দেখা যায়। দ্বিতীয় তলায় ওঠার আগে বুঝার উপায় নেয় যে, এখানে লোবজনের উপস্থিতি রয়েছে। সিড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলার লাইব্রেরীতে পোঁছালে ১০/১২ জন শিক্ষার্থীকে দেখা যায়, বিশাল লাইব্রেরীতে বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে পাঠ নিচ্ছে।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাহিদ হোসেন, আল আমিন বলেন, আমরা চাঁদপুর চাঁদপুর-শহর থেকে এসেছি। কিন্তু গ্রন্থাগারটি শহর থেকে দূরে হওয়ায় এখানে আসতে ১৫ টাকা অটো ভাড়া লাগে। শুধু ভাড়া নয়, অনেক সময় প্রয়োজন হয়। তাই প্রয়োজন বা ইচ্ছে থাকলেও খুব বেশি আসা হয় না। একই কলেহ। আরেক শিক্ষার্থী জাহানারা বলেন, এখানে পানি, বিদ্যুৎ নেই। তাই আমরা আমাদের চাহিদা মতো সেবা পাচ্ছিনা।

এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে এর প্রধান দায়িত্বে থাকা লাইব্রেরিয়ানকে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি নিয়মিত অফিস করেন না। ৮টি পদ থাকলেও বর্তমানে ১জন জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান ও ১জন অফিস সহায়কসহ ২জন দায়িত্ব পালন করছেন।

বর্তমানে দায়িত্বে থাকা জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান ইকবাল আহমেদের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, আমরা এখনো ভবনটি বুঝে পাইনি। এর কিছু কাজ এখনো চলমান রয়েছে। অতি শিগ্রই এই ভবনের পুরো কাজ শেষ হবে। কিন্তু আমরা এতোদিন শহরের চৌধুরী ঘাটে একটি ভবনে ভাড়াটিয়া হিসেবে লাইব্রেরির কার্যক্রম চালাতাম। নিজস্ব ভবনের কাজ প্রায় শেষ হবার পথে। তাই আমরা একটু আগেভাগেই উঠেগেছি। এখনো পর্যন্ত পানি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। তাই কিছুটা অসুবিধে থাকায় পাঠক একটু কম।

ইকবাল আহমেদ আরো জানান, সারা দেশে মাত্র ছয় জেলায় এমন অত্যাধুনিক ভবন করা হয়েছে। এদিকে চাঁদপুরবাসী খুবই সৌভাগ্যবান। ৩তলা বিশিষ্ট এই ভবনে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্ণার, মুক্তিযোদ্ধা কর্ণার, প্রবীণ কর্নার, শিশু-কিশোর কর্ণার। এজাড়া জেরারেল ও সাধারণ পাঠকক্ষ তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে ৩তলায় প্রায় ২শ’ জন পাশক বসতে পারবে। রয়েছে ৬টি কম্পিটার বিশিষ্ট উন্নত একটি সাইবার ক্যাফ। আর হলরুমকে সাজানো হচ্ছে অত্যাধুনিকভাবে। চলতি বছরে প্রায় ৩৬শ’ নুতন বই সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই গ্রন্থাগারে বর্তমানে ২৪ হাজার বই রয়েছে।

পাঠক জানে না জেলা সরকারি গ্রন্থাগার কোথায়, এ বিষয়ে দায়িত্বরত জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান বলেন, আসলে এখনো এর উদ্বোধন হয়নি। এটি সম্পূর্ণরুপে উদ্বোধন হলেই পাঠকের মাধ্যমে এমনি এমনি প্রচার হয়ে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

প্রতিবেদক:আশিক বিন রহিম,

Share