ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকায় সেবা প্রদানে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।এছাড়া রোগীদের দেখভালের ক্ষেত্রেও অনেকটা মানসিক চাপে থাকতে হচ্ছে নার্সদেরও। ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে এমনই তথ্য জানা গেছে।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, তাদের রোগীরা পূর্ণাঙ্গ সেবা পাচ্ছে না। হাসপাতালের বিরুদ্ধে স্বজনদের অভিযোগের পাল্লাও ভারি হচ্ছে। তারা মনে করেন, অতিরিক্ত রোগীর কারণে তারা জরুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ধীরে ধীরে এই সমস্যা বাড়ছে। এ ব্যাপারে সরকার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান তারা।
সূত্র জানায়, নতুন ও পুরনো ভবন মিলে ভর্তিকৃত রোগীর জন্য ২ হাজার ৩০০ শয্যা থাকলেও সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ রোগী ভর্তি আছে। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার প্রায় ১ হাজার জন বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। এই অতিরিক্ত রোগী বেড না পেয়ে ফ্লোরে বিছানা পেতে অসহায়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে। এতে তাদের পোহাতে হচ্ছে আরো নানাবিধ সমস্যা।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে হার্টের সমস্যার কারণে মফিদুল ইসলামকে (৬০) ঢামেক হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেন তার ভাতিজা নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ছয়দিন ধইরা আইছি, তাও এখনো বেড পাই নাই। কারে কি কমু! নিজেই তো দেখতাছি রোগী গো যে অবস্থা! সবাই নিচে পইরা রইছে। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না করলেও তিনি বলেন, রোগীকে দু-একদিনের মধ্যে অন্যখানে নিয়া যামু।’
আক্তার হোসেন। কুমিল্লা থেকে গত ১ মে তার ছোট ভাই আরিফকে নিয়ে আসেন ঢামেকে। তিনি জানান, ঝড়ে গাছের নিচে চাপা পরে আহত হন সে। এরপর থেকেই ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি। বেড পেলেও রোগীর ভিড়ে ঠিকমতো হাঁটাও যায় না ওয়ার্ডের মধ্যে। এজন্য গরমে আরো কাতর হয়ে পড়ছে রোগী।
২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স শামসুন্নাহার জানান, এই ওয়ার্ডে রোগী আছে ৪২ জন। তবে এদের দেখভালের জন্য আমি একা। কেমনে সামাল দেই বলেন। এক রোগীর কাছে গেলে আরেক রোগী ডাকে, আবার অন্যজন ডাকে।
নতুন ভবনের ওয়ার্ডমাস্টার মো. ফিরোজ জানান, এই ভবনের ৫ তলা থেকে ৯ তলা পর্যন্ত মোট ১০টি ওয়ার্ড আছে। এদের মধ্যে ৮০১ নং ওয়ার্ডে বেড আছে ৮০টি। তবে ভর্তির দিন রোগী প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। তখন এদের ফ্লোরিং করে দেয়া হয়। রোগীর লাইন এতটাই বেশি হয় যে, ওয়ার্ড থেকে শুরু করে একেবারে সিঁড়ি পর্যন্ত চলে যায়।
অতিরিক্ত রোগীর চাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) খাজা আব্দুর গফুর বলেন, ভালো চিকিৎসার জন্য দেশের অন্যান্য হাসপাতাল থেকে ঢামেকে স্থানান্তর করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা, স্বল্প খরচ ও বিনামূল্যে অধিকাংশ ওষুধ পাওয়ার সুবিধার্থে ঢামেকগামী হচ্ছে এ সকল রোগী।
ঢাকা মহানগরীতে হওয়ায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা, অজ্ঞাত বা আত্মহত্যার চেষ্টায় আহত ব্যক্তিকে অন্য কোন হাসপাতালে না রাখায় এখানে আসার কারণেও এর প্রভাব পড়ছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, বাড়তি রোগীর চাপ সব সময়ই থাকে। এই হাসপাতাল থেকে কোনো রোগীকেই ফিরিয়ে দেয়া হয় না। তবে সামনে অতিরিক্ত রোগীদের জন্য একটি পরিকল্পনা আছে। (জাগো নিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০০ এএম, ১৩ জুন ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur