অতিথি পাখিতে মুখর চাঁদপুর

পৌষ মাসের আজ ১০ তারিখ। চাঁদপুরে শুরু হয়েছে কনকনে শীত। শীতে সব পেশাজীবী মানুষের জীবনেই কিছুটা হলেও স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু অতিথি পাখিরা যে শীত না এলে আসে না। শীত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে অতিথি পাখির সংখ্যাও। সেই সুদূর সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখি। এসব পাখির নাম চিহ্নিত করা

অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার হওয়ার কারণে এর নাম দেয়া হয়েছে অতিথি পাখি। অর্থাৎ বছরের শীম মওসুমে এসব পাখির আগমন
ঘটে অনেকটা অতিথির মতোই। তাই সখ করে ওদেরকে ডাকা হয় অতিথি পাখি। এসব অতিথিদেরকে যত্ম খাতির না করতে পারলেও এদেও ধরা ও মারা নিষিদ্ধ রয়েছে। তাই এসব পাখি অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দনের পাশাপাশি আমাদের প্রাকৃতি সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শীত এলেও সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে এসব অতিথি পাখিদের আগমন ঘটতে দেখা যায়। বিশেস নদী, খাল, বিল, ঝিল, দিঘী থেকে শুরু করে চরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গাড়ে এসব পাখি। অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে চাঁদপুরের পরিবেশ এক ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়।

যদিও আগের মতো অদিক সংখ্যায় এসব অতিথিদের দেখা যায় না। তবুও অনেকটা বংশানুক্রমভাবেই অতিথি পাখিরা এখনো তাদের যাত্রা একেবারে থামিয়ে দেয়নি। যার কারণে এখনো কিছু অতিথি পাখি আমরা দেখতে পাই। এসব অতিথিদের দেখতে যেমন সুন্দর যেমনি বৈচিত্রপূর্ণও।

তাই অতিথি পাখিরা এসব অঞ্চলের জন্য এক ধরনের ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাখি প্রেমিরা সব সময় এই মওসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন কখন অতিথিরা এসে আমাদের মনোরঞ্জন করবে।

বর্তমান সময়ে চাঁদপুরের নদী-নালা বিশেষ করে জলাশয়ে অতিথি পাখিদের দেখা যায়। এর মধ্যে ডাকাতিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট, মেঘনার তীরাঞ্চল, রাজরাজেশ্বরের মাঝের চর, মিনি কক্সবাজার, মতলব উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চের চরাঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্ট, মেঘনা ধরাগোদা সেচ প্রকল্পর সহ চাঁদপুরের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন জলাশয়ে অতিথি পাখিদের নজরকাড়া দৃশ্য চোখে পড়ে।

তবে এক শ্রেণীর দুস্কৃতিকারীও আছে যারা এই মওসুমের অপেক্ষায় থাকেন ফাঁদ পেতে পাখি শিকারের জন্য। এসব পাখি অত্যন্ত বিরল হওয়ার কারণে পাখি প্রেমিদের মনোরঞ্জনের জন্য শিকারিরা এসব পাখিদের ধরে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। এসব পাখিদের মধ্যে, বক, হাঁস, ডাহুক সহ বিভিন্ন প্রজাতির সামঞ্জস্যপূর্ণ মায়াবি রংয়ের হওয়ার কারণে এদের কদর অত্যন্ত বেশি। পরিবেশবাদীরা এসব পাখিদের রক্ষায় সরকারের কাছে দীর্ঘ দিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এসব পাখিদের ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও কিছু পাখি এখনো শিকারিদের জালে আটকা পড়তে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে পাখি প্রেমী ফজলে রাব্বি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, এসব পাখি আমাদের দেশের অতিথি। এই দেশ এখনো পাখিদের জন্য নিরাপদ বলেই প্রতি বছর অতিথি পাখিরা এখানে ছুটে আসছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এইসব পাখিদের জন্য আমাদের পরিবেশটাকে নিরাপদ রাখা।

তাহলেই এসব পাখি সব সময়ই আমাদের দেশে ছুটে আসবে।

তবে আশার কথা হচ্ছে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে এইসব অতিথি পাখিদের দেখা গেলেও কেউ এদেকে হত্যা করছে না। বরং এসব পাখিদের রক্ষায় সবাই সচেতন থাকবে বলে পরিবেশবাদীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

স্টাফ করেসপন্ডেট, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১

Share