চাঁদপুর

‘অচিরেই চাঁদপুরে রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযান’

চাঁদপুর শহরের ব্যাস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান চাঁদপুর কোর্টস্টেশন (প্লাটফর্ম) এলাকা। এখানে প্রতিদিন হাজারও মানুষের সমাগম ঘটে থাকে। এমন গুরুত্বপূর্ন এলাকায় রেল লাইনের ২ পাশের্^ (লাইনের ৩ ফুটের মধ্যে) গেইটঘর লাগোয়া প্রায় রেল লাইন গেঁসেই বে-আইনিভাবে শতাধিক অবৈধ ফলের দোকান ও গেইট ঘরের ভিতরে রয়েছে ফলের গোডাউন। যা সম্পূর্ণ বে-আইনি।
এ অবৈধ ফলের দোকান ও বিভিন্ন দোকানের কারনে ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মালামাল নিয়ে উঠতে ও নামতে গিয়ে এ রুটে গত ৩ বছরে ২৫ যাত্রী প্রাণ হারিয়েছে বলে চাঁদপুর রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, কোর্টস্টেশন গেইট ঘরটির পাশে থাকা অবৈধ ব্যবসায়ীরা ব্যবসার অন্তরালে এখানে মাদক ব্যবসা পর্যন্ত করে থাকে। এখানে দাড়িয়ে থেকে ছিনতাই কারীরা যাত্রীদের মোবাইল, টাকা পয়সা ও মূল্যবান মালামাল ছিনতাই করে যাচেছ প্রতিনিয়ত। সবছেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো, এ গেইট ঘরটিতে বসে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের মাদকের হিসাব নিকাশ পর্যন্ত করে থাকে বলে বেস ক’জন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন।

এখানকার ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর আরো অভিযোগ রয়েছে, এদেরকে প্রশাসনিক ভাবে সহযোগিতা করেন, স্থানীয় এক জন মহিলা কাউন্সিলর ও এ পথের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের একজন মেস্তরী। তাদের যোগসাযোগেই নাকি এ সব দোকান বসানো হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্তে এসব হোতাদের নাম প্রকাশ পাবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

এতে করে এ স্থান দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাজারও যাত্রীদের প্রতিদিন জীবন বাজী রেখে মারাত্বক হুমকির মধ্য দিয়ে ট্রেনে উঠতে ও নামতে হচেছ। এখানে বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো রেল লাইন থেকে ২০/৩০ ফুট দুরে ব্যবসা করে সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছে। আর অবৈধ ব্যবসায়ীরা কোনো প্রকার রাজস্ব না দিয়েই রেল লাইন গেঁসে ব্যবসা করে করে যাচ্ছে বীরদর্পে।

রেলওয়ের চট্রগ্রাম বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ আসলে অবৈধ দোকান সরিয়ে ফেলা হয়। কর্তৃপক্ষ চলে গেলে আবার দোকান বসানো হয়। এখানে অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছেন, মো: মুনাফ মিজি, লতিফ মাতাব্বর, আল-আমিন, আব্দুর রশিদ, মো: দুদু মিয়া, লাদেন মোল্লা, মো: জসিম, মো; মুরাদ, মো: বাচ্চু মিয়া, মো: ইসহাক মিয়া কবিরাজ।

এ সব অবৈধ দোকানদারদের রেলওয়ের পক্ষ থেকে উচেছদ নোটিশ দেওয়া হলেও তারা সেখানে স্থায়ী ভাবে দোকান বসিয়ে দাপটের সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের সাথে প্রতারনা করে বেশী দামে ফল বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে এদের বিরুদ্ধে।

সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে, তাদের খুটির জোর কোথায়? অবৈধ দোকানে রাতে জ¦ালানো কয়েলের আগুন থেকে অগ্নিকাÐের সৃস্টি হয়ে বর্তমান পাকা এ গেইট ঘরটি (টিন ও কাঠের থাকা অবস্থায়) এক সময় আগুনে পুড়ে রেলওয়ের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। এত বড় দুর্ঘটনার পরও তাদের বিরুদ্বে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনস্ট হওয়ার কোন মামলা বা শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এতে করে এ সব দোকানীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

জেলা প্রশাসক ‘গ্রীন চাঁদপুর ক্লীন চাঁদপুর’ ঘোষনার পর এ স্থানে তার ছোঁয়া লাগেনি। প্রধানমন্ত্রী গত পয়লা এপ্রিল চাঁদপুর আগমনে ৩দিন অবৈধ দোকান গুলো সরিয়ে রাখা হয়েছিল। এতে কোর্ট স্টেশন এলাকার এ জায়গার পরিবেশ ছিল অত্যন্ত সুন্দর। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরের দিন থেকে পুনরায় অবৈধ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বহাল তবিয়তে চর দখলের ন্যয় দখল করে বসে আছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ নিশ্চুপ থাকায় তারা প্রতিযোগিতা করে প্রতিদিন নতুন-নতুন দোকান বসাচ্ছে। সম্প্রতি অবৈধ দোকান থেকে আগুন লেগে কোর্টস্টেশন গেইট ঘরটি পুড়ে সরকারের সম্পদ ক্ষতিসাধিত হলেও এ সব অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্বে কোন ব্যবস্থা বা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করেনি স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের চিঠি দিয়ে উচ্ছেদ নাকরায় তারা আরো মজবুত করে দোকান নির্মান করছে। এ সব অবৈধ ফল দোকানদারদের খুটির জোর কোথায় তা চাঁদপুরের সচেতন মানুষ জানতে চায়। রেলওয়ে কোর্টস্টেশন গেইট ঘরটি ফলের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার হচেছ। কিন্তু বিষয়টি দেখার কেউই নেই।

আগুনে পুড়ে যাওয় গেইট ঘরটির টিনসেট এখন পাকা হওয়ায় অবৈধ ব্যবসায়ীদের জন্যে আরো ভাল হয়েছে। তারা অবৈধভাবে মালামাল রাখার পাশাপাশি সরকারী বিদ্যুৎ ব্যবহার ও টয়লেটটি ব্যবহার করে শতাধিক দোকানদার এটিকে গনশোচাগারে পরিনত করেছে।

ইতোপূর্বে এসব দোকান উচ্ছেদ হলেও আবার দোকান বসিয়ে দাপটের সাথে চড়াদামে বিভিন্ন ফল ও মালামাল বিক্রি করে যাচ্ছে। তাই জনমনে প্রশ্ন, কিভাবে গুরুত্বপূর্ন এ স্থানে অবৈধভাবে রেল লাইনের ২ পাশের্^ ও উপরে দোকান বসানো হচ্ছে। ট্রেন আসছে, দেখলে দোকান সরানো হয়। আবার ট্রেন চলে গেলে দোকান বসিয়ে দোকানদারী চলছে। এ অবৈধ দোকানদারদের কারনে বৈধ ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ।

এভাবে চলতে থাকলে আবারও যে কোনো সময় ট্রেনের নীচে কাটা পড়ে যাত্রীদের প্রানহানির আশংকা রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরদাবী জানিয়েছেন সচেতন শহরবাসী।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর রেলওয়ের কর্মকর্তা মো: সারোয়ার আলম জানান, বিগত দিনে আমরা অবৈধ দোকান পাঠ সরিয়ে দিয়ে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরে আসার পূর্বেও অবৈধ দোকান সরিয়ে দিয়ে ছিলাম। আবার তারা বসছে। যাত্রীদের চলাচলের স্বার্থে পূণরায় উচ্ছেদ করে অবৈধ দোকান সরিয়ে দেয়া হবে।

এ দিকে চাঁদপুর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইনচার্জ মো: আমিনুল হক জানান, আমার অফিসের কেহ এখান থেকে কোন সুবিধা ভোগ করেনা। কয়েকবার উচ্ছেদ করার পর আবার বসে। আমাদের এখানে স্থায়ীভাবে ডিউটি দেওয়ার কোন লোক নেই। তাদের হাত লম্বা হওয়ায় উচ্ছেদের পর পূণরায় বসে। তবে যাত্রীদের যাতায়তের স্বার্থে আবারও উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা নিবো। যেভাবে ফলের দোকান বসেছে, তাতে যাত্রী যাতায়াতের বিঘœ সৃষ্টি হয়ে ট্রেনে কাটা পড়ার সম্বাবনাও রয়েছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী -১ মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের নিয়মমোতাবেক রেলওয়ের কোনো জায়গা প্রয়োজন না হলে তাও রেল লাইন থেকে ২০/৩০ ফুট দূরে হলে সে জায়গা নিতিমালা মোতাবেক লীজ দেওয়া যেতে পারে। রেল লাইনের কাছে কোন লিজ দেওয়ার বিধান নেই। চাঁদপুরের বিষয়টি দেখার জন্য আমাদের দায়িত্বরত ব্যক্তি রয়েছে,তার সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) ব্যবস্থাপক মো: জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, চাঁদপুরে উচ্ছেদ অভিযান হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে অচিরেই একটি উচ্ছেদ অভিযান হবে। চাঁদপুর কোর্টস্টেশনের গেইট ঘর সংলগ্ন স্থানের অবৈধ দোকানের বিষটি আমার জানা আছে। সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিব। অবৈধ সব সময় অবৈধ। রেলওয়ের যাত্রীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। যাত্রী ট্রেনে উঠতে গিয়ে সমস্যা যেন না হয় তা দেখছি।

প্রতিবেদক : শরীফুল ইসলাম

Share