নানুপুর উ.বি শিক্ষা বিস্তারে ৩১ বছর ধরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে

চাঁদপুর সদরের ৭ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে ও ইচলী চৌরাস্তা মোড় থেকে দেড় কি.মি পূর্বদিকে পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের নারী শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়।

১৯৯০ সালে নারী শিক্ষার বিস্তারে বিশিষ্ট সমাজসেবক মো.মিজানুর রহমান খান তাঁর নিজ গ্রামের নামে গ্রামের গণ্যমান্য সকলের সহযোগিতায় দেড় একর জমির ওপর একটি মনোরম ও ছাায়াঘেরা পরিবেশে এটি প্রথম জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

তাঁদের মধ্যে স্থানীয় যাঁরা ছিলেন তাঁরা হলেন- সেকান্দর আলী মিয়াজি , হাজী জাফর খান, আবদুল আউয়াল গাজী, আব্দুল হক মিয়াজি ,পল্লী চিকিৎসক বিনোদ বিহারী দালাল, আনোয়ার খান,বহমত উল্লা, আব্দুল হাসেম গাজী, আবু ছায়েদ বেপারীসহ অন্যান্য বেশ কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

প্রধান শিক্ষক হিসেবে ছিলেন সিরাজুল ইসলাম, কোহিলী চক্রবর্তী,কানু চন্দ্র সিংহ রায় ও সাফায়েত আরা সাফি। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিক ভাবে দায়িত্ব পালন করার কারণে শিক্ষা বিস্তারে স্কুল এখন শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসাবে পরিচিতি লাভ করছে।

শুরু থেকেই এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী রোটা.মিজানুর রহমান খান স্কুল ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্কুলটিতে বর্তমানে ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা দু’জন কর্মচারী এবং ৬শ’৪২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৪শ’২০জন ছাত্রী।

যুগের চাহিদায় নারী শিক্ষা বিস্তারে এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটিকে কেবলমাত্র জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনায় না এনে ২০১০ সালে কুমিল্লা বোর্ড সহ-শিক্ষা কারিকুলাম অনুমোদন প্রদান করে। ফলে এটির নাম নানুপুর বালিকা বিদ্যালয়ের পরিবর্তে হয়ে যায় নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়। যা আজ গৌরবের প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে আপন মহিমায় ।

পরীক্ষার ফলাফলের হার সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক জানান, ২০১৭ সালে জেএসসি সমাপনিতে ৩২% এবং এসএসসিতে পাশের হার ৬৯%। ২০১৮ সালে জেএসসি সমাপনিতে ৯৭ % এব এসএসসিতে পাশের হার ৯৩%। ২০১৯ সালে জেএসসি সমাপনিতে ৯৮% এবং এসএসসিতে পাশের হার ৮৩%। ২০২০ সালে জেএসসি সমাপনিতে শতভাগ এবং এসএসসিতে পাশের হার ৮৩ % ।

বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি বর্তমানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে একটি ৪তলা ভীতের একটি একাডেমি ভবন নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইমাম হোসেন জানান, স্কুলটি এলাকার নারী শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নে কমিটির চেয়ারম্যান,সদস্যগণ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষকগণ নিরলশভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,‘ স্কুল বন্ধ থাকায় খুব ভাল করেই উপলব্ধি করতে পেরেছি যে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আইসিটির গুরুত্ব কতটুকু প্রয়োজন রয়েছে। এটি না হলে বর্তমানে করোনাকালীন মহামারীতে স্কুলের সকল প্রকার কাজই অনলাইন হচ্ছে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ রাখছে। স্কুলের সকল শিক্ষক বর্তমানে নতুন কারিকুলাম এর সাথে পরিচিত বলে স্কুলের শিক্ষার মান দিন দিন উন্নত হচ্ছে।’

তিনি স্কুলটিকে আরো এগিয়ে নিতে এলাকাবাসী,ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সকল সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে যাঁদের অবদান রয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পাশাপাশি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান ।

প্রধান শিক্ষক পরিচিতি

প্রধান শিক্ষক ইমাম হোসেন ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ চাঁদপুর সদরের বালিযা ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ সালে হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি,১৯৮৯ সালে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৯১ সালে বিএসসি ও ১৯৯৯ সালে কুমিল্লা টিটি কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে নানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মোহাম্মদ ইমাম হোসেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সততা, কর্মদক্ষতা ও দায়িত্ব পালনে অভিরাম প্রচেষ্ঠায় বর্তমানে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন । বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাস্তবতার নিরিখে ও পাঠদানে তিনি বিদ্যালয়ের একজন দক্ষ শিক্ষক। তাঁর পেশাগত প্রশিক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে : নায়েম, প্রশাসনিক, আইসিটি, মাইক্রোসফটও বেশ কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ।

তাঁর সহধর্মিণী মাজেদা আক্তার একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি দু’পুত্র সন্তানের সৌভাগ্যশীল জনক।

আবদুল গনি , ২৯.৯.২১

Share