অগ্নিনিরাপত্তায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৫ বিভাগে ৬১৭ ভবন

সারাদেশে আবাসিক ও বাণিজ্যিক, হাসপাতাল, শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের বহুতল স্থাপনা ব্যাপকভাবে গড়ে উঠছে । চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন আবাসন সংস্থা ও মালিকরা দৃষ্টিনন্দন ভবন গড়ে তুললেও অগ্নিঝুঁকি মোকাবেলায় নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সরকারি ও বেসরকারি ১ হাজার ৬০৬টি ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। অতি অগ্নিঝুঁকির শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রামের ৪৬৩টি ভবন।

এরপরেই রয়েছে ঢাকার ১৩৬টি বহুতল ভবন। ফায়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ভবনগুলোতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। চট্টগ্রামে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে আন্দরকিল্লায় সমবায় মার্কেটে আগুনে একজনের মৃত্যু হয়। মার্কেটের টিনশেডের দোকানঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের বহুতল ভবনেও। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাশের একটি হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থাপনা থেকে পানি এনে অগ্নি নির্বাপণ করে।

আশপাশে পানির রিজার্ভার না থাকায় বেগ পেতে হয় আগুন নিয়ন্ত্রণে। এর আগে রেয়াজউদ্দিন বাজারের একটি বহুতল ভবনের জুতার গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও চলতি বছর হালিশহর এলাকায় ইস্টার্ন ব্যাংকে এবং গতবছর চকবাজারে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগে।

পরপর বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনায় সারাদেশের বহুতল ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সরকারি বিভিন্ন তদারকি সংস্থার যুক্তিযুক্ত কোনো বক্তব্য নেই। ‘ব্যবস্থা নেওয়া হবে,খতিয়ে দেখা হবে’এসব উত্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ সিটি করপোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা। তবে এরমধ্যে ভয়ংকর তথ্য উঠে আসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত বহুতল আবাসিক, বাণিজ্যিক, হাসপাতাল, শিল্প কারখানা ও অন্যান্য শ্রেণিভুক্ত ভবন জরিপে।

সূত্রমতে, সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ৫ হাজার ৮৬৯টি ভবন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিদর্শন করেন। এরমধ্যে তারা ১ হাজার ৬০৬টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ শনাক্ত করেছেন। অগ্নি নিরাপত্তা ক্ষেত্রে অতি ঝুঁকিতে রয়েছে ৬১৭টি ভবন। এরমধ্যে চট্টগ্রামে ৪৬৩টি, ঢাকায় ১৩৬টি, খুলনায় ৭টি, বরিশালে ৬টি এবং রাজশাহীতে ৫টি। তবে সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে নেই অগ্নিনিরাপত্তায় অতিঝুঁকিপূর্ণ কোনো ভবন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন। স্থাপনাগুলোর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নতি করতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও এ বিষয়ে উদাসীন প্রতিষ্ঠানগুলো। এদিকে ২০২২ সালে চট্টগ্রামের ৩১৬টি সরকারি ও ১ হাজার ৩৬০টি বেসরকারি বহুতল, শিল্প কারখানা, হাসপাতাল,বাণিজ্যিক ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস।

এরমধ্যে অগ্নি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ৪৪৭টি ভবন এবং অগ্নিনিরাপত্তায় অতিঝুঁকিপূর্ণ ৪৬৩টি ভবন শনাক্ত করেন তারা। মোট ১ হাজার ৬৭৬টি ভবনের মধ্যে মাত্র ৬৭৭টি ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক পাওয়া যায়।

এদিকে রাজধানীর সরকারি এবং বেসরকারি মোট ১ হাজার ১৬২টি বহুতল ভবন পরিদর্শন করে ৪৯৯টি বহুতল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ পায় সংস্থাটি। অগ্নিনিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় এই সংখ্যাটি শীর্ষে। ফায়ার সার্ভিসের নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের ৮ বিভাগের ১ হাজার ৬০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে ঢাকায় অগ্নি নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা বেশি। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ শহরটিতে অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ১৩৬টি।

আর অগ্নিনিরাপত্তায় ৫২৭টি ভবন সন্তোষজনক বলে জরিপে উঠে এসেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর অগ্নি নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে বরিশালের অবস্থান। বরিশালে ৬৯২টি ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার কর্মকর্তারা ১৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং ৬টি অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করেছে।

জরিপের তথ্যমতে, খুলনার ৪১০টি ভবনের মধ্যে ১৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭টি অতিঝুঁকিপূর্ণ। রাজশাহীর ১৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৫টি অতিঝুঁকিপূর্ণ। রংপুরে ১২৩টি, সিলেটে ৩৪টি এবং ময়মনসিংহে ৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলো ফায়ার সার্ভিসের নিরাপত্তা নির্দেশনা অমান্য করে এবং কোনো ধরনের অগ্নিনিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা না রেখেই নির্মিত হয়েছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে ২০২১ সালের জরিপে সারাদেশে ৫৩১টি অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত হলেও ২০২২ সালের পরিদর্শন জরিপে ৮৬টি বেড়ে পৌঁছেছে ৬১৭টিতে।

পাশাপাশি সারাদেশে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের জরিপে ৩১৪টি অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন বেড়েছে। ২০২২ সালে ১ হাজার ৬০৬টিতে ভবন চিহ্নিত হয়েছে। আর ২০২১ সালে সারাদেশে ছিল ১ হাজার ২৯২টি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন।

অপরদিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শনকারী টিম ২০২১ সালে চট্টগ্রামে অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করেছিল ৩৯৮টি। আর ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৪৬৩টিতে। অর্থাৎ অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন বেড়েছে ৬৫টি। ঝুঁকিপূর্ণ ও অতিঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তে ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। যার ফলে তাদের দাবি নিরাপত্তা মানের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চট্টগ্রামে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তারা বলছেন, পরিদর্শন কার্যক্রম চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে ২০২১ সাল থেকে।

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
এজি

Share