চাঁদপুরে অক্সিজেনের সংকটে রোগীদের হাহাকার কাটিয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে শুরু হলো লিকুইড অক্সিজেন সেবা। মহামারি করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগ সময়ে এখন থেকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা সমস্ত রোগীরাই নিয়মিত এই লিকুইড অক্সিজেন সেবা পাবেন।
৪ আগস্ট বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় ভার্চ্যুয়ালের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষনা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
এরপূর্বে গত ২ আগস্ট সোমবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে জরুরী তরুল গ্যাস সরবরাহ,র একটি লিকুইডে ভর্তি গাড়ি এসে হাসপাতালে স্থাপনকৃত অক্সিজেন প্লান্টের সাড়ে ৮ হাজার ধারন ক্ষমতার ট্যাংকিতে সাড়ে ৩ হাজার মিলি লিটারের লিকুইড অক্সিজেন লোড করেন স্পেক্টা কোম্পানির কর্মীরা। ওইদিন রাতে লিকুইড অক্সিজেন বহন করে নিয়ে আসা গাড়িটি থেকে আনলোড করে হাসপাতালে স্থাপনকৃত বড় সিলিন্ডারে তরল গ্যাস লোড করতে দেখা যায়।
তারা জানান, লিকুইড অক্সিজেন লোড করার পর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে রাতে থেকেই রোগীরা এ লিকুইড অক্সিজেন সেবা পাবেন। তারপর ২ আগস্ট সোমবার এবং ৩ আগস্ট মঙ্গলবার পর্যন্ত দুইদিন পরীক্ষামুলক ভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা রোগীদেরকে লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। গত দুইদিন পর্যবেক্ষেন শেষে ৪ আগস্ট বুধবার দিন এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
খবর নিয়ে জানা গেছে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালে স্থাপনকৃত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের বড় একটি সিলিন্ডারে সাড়ে তিন হাজার লিটার অক্সিজেন ভর্তি করা হয়। আর এই সাড়ে তিন হাজার লিটার অক্সিজেন দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় এক দেড়শ রোগীকে লিকুইড অক্সিজেন সেবা দেয়া যাবে।
প্রথম বারের মতো এভাবেই স্প্রেক্টা কোম্পানির গাড়ি দিয়ে প্রতিমাসে হাসপাতালে স্থাপনকৃত সিলিন্ডারে তরল গ্যাস ভর্তি করে যাবেন বলে জানা গেছে। এতে স্প্রেক্টা কোম্পানির একজন প্রতিনিধি নিয়মিত সেখানে ডিউটি করবেন। গ্যাস শেষ হওয়ার পূর্বে ওই প্রতিনিধি কোম্পানীকে গ্যাসের জন্য তাগিদ দিলে কোম্পানীর লোকজন এসে গাড়ি দিয়ে সিলিন্ডারে গ্যাস লোড করে যাবেন। সেখান থেকে লিকুইড অক্সিজেন তৈরি হয়ে রোগীদের জন্য সরবরাহ করা হবে। এভাবেই নিয়মিত লিকুইড অক্সিজেন সেবা পাবেন সদর হাসপাতালে ভর্তি কৃত রোগীরা।
বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি এ হাসপাতাল টির আইসোলেশন ওয়ার্ডে সর্বমোট ২১৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ১১৯ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী এবং বাকি ৯৪ জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। তারা প্রত্যেকেই লিকুইড অক্সিজেন সেবা পাচ্ছেন বলে সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ চাঁদপুর টাইমসকে জানান, সোমবার রাতে এক্সপেক্ট্রা কোম্পানির প্রতিনিধিরা চট্টগ্রাম থেকে গাড়ি দিয়ে লিকুইড অক্সিজেন নিয়ে এসে হাসপাতালে স্থাপনকৃত বড় সিলিন্ডারে রোড করেছেন। প্রথম পর্যায়ে তারা সাড়ে তিন হাজার লিটার অক্সিজেন লোড করেছেন। তারা যে পরিমাণ অক্সিজেন লোড করেছেন। তাতে অন্তত এক দেড়শ রোগীকে এ লিকুইড অক্সিজেন সেবা দেয়া যাবে। এখানে কোম্পানির একজন কর্মচারী নিয়মিত ডিউটি করবেন। গ্যাস শেষ হওয়ার পূর্বে সে কোম্পানীকে জানিয়ে দিলে। তারা প্রতি মাসে, মাসে এসে বড় সিলিন্ডারে গ্যাস লোড করে যাবেন। তবে তারা প্রথমে সাড়ে তিন হাজার লিটার অক্সিজেন দিলেও পরবর্তীতে এর চেয়ে বেশিও দিতে পারে। দেখা গেছে হাসপাতালে স্থাপনকৃত সিলিন্ডারের যদি তরল গ্যাস সম্পূর্ণ ভর্তি থাকে, তাহলে হয়তো দুই আড়াই,শ রোগীকেও প্রতিমাসে এ অক্সিজেন সেবা দেয়া যাবে।
তিনি আরো জানান, মিটার ছাড়া রোগীকে লিকুইড অক্সিজেন সেবা দেওয়া যাবে না। কোম্পানী প্রথম পর্যায়ে আমাদেরকে হাসপাতালে মাত্র ৫০ মিটার দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা শিক্ষা মন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনিকে অবগত করেছি তিনি কোম্পানির সাথে কথা বলে কয়েক দিনের মধ্যে আরও ৫০ টি মিটার দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। পর্যায়ক্রমে আরো ৫০ টি মিটার আসলে পূর্বের ৩০ টি মিটারসহ মোট ১৮০ জন রোগীকে আমরা সেন্টাল লাইন থেকে একত্রে এই অক্সিজেন সেবা দিতে পারবো।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ৫ আগস্ট ২০২১