সারাদেশ

অক্টোবরেই দেশে ফিরেছেন ৮০ হাজারের বেশি প্রবাসী কর্মী

প্রবাসী কর্মীদের ঘাম ঝরানো শ্রমে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। করোনার কারণে অনিচ্ছাসত্ত্বেও হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এখনো পর্যন্ত রেমিট্যান্সে বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি। তবে অদূর ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছরের গত এপ্রিল থেকে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন প্রবাসী কর্মীরা। সর্বশেষ গত অক্টোবর মাসে ৮০ হাজারেরও বেশী প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৬৮ হাজার ৯৪৫ জন ও নারী ১১হাজার ১৮৭ জন। তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবাসী কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত সাত মাসে (১ এপ্রিল থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) বিভিন্ন দেশ থেকে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৭৯০ জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ১৭ হাজার ৯৬৩ জন ও নারী ২৭ হাজার ৮২৭ জন। বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে দুই লাখ ১০ হাজার ৯১ জন ও আউটপাস নিয়ে ৩৫ হাজার ৬৯৯ জন ফিরে এসেছেন।

সূত্র আরও জানায়, যারা ফিরে এসেছেন তাদের কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কাজ না থাকা, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, প্রতারিত হওয়া ও ভিসার মেয়াদ শেষ বা আকামা না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে ফিরে এসেছেন। কেউ কেউ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে যেতে পারবেন বলে জানান।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবাস ফেরত মোট যাত্রীর মধ্যে সৌদি আরব থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬৮ হাজার ৬৪৭ জন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার ২০৯ জন দেশে ফিরে আসেন।

সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাসে আবার অনেকে চাকরি ছেড়ে বা ছুটিতে দেশে ফেরেন। সংযুক্ত আরব থেকে ফিরে আসা কর্মীরা জানান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের আবার ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলে কোম্পানি ফেরত পাঠিয়েছে।

মালদ্বীপ থেকে ১২ হাজার ৬৮৯ জন ফেরত এসেছেন। পর্যটননির্ভর দেশ হওয়ায় করোনার কারণে কাজ নেই। তাই মালিকপক্ষ বা কোম্পানি তাদের ফেরত পাঠিয়েছে।

সিঙ্গাপুর থেকে চার হাজার ৬৭৭ জন ফেরত আসেন। কাজের বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা দেশে ফেরত এসেছেন।

ওমান থেকে ফেরত আসেন ১৪ হাজার ৬৬৯ জন। বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে তারা দেশে আসেন।

কুয়েত থেকে ১১ হাজার ২৯৬ জন ফেরত আসেন। আকামা বা ভিসার মেয়াদ না থাকায় কিংবা অবৈধ হওয়ায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। আবার অনেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে দেশে ফিরেছেন।

বাহরাইন থেকে ফেরত এসেছেন এক হাজার ৫৮৮ জন। বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউটপাস নিয়ে তারা দেশে এসেছেন। এছাড়া অসুস্থ কিংবা চাকরি হারিয়ে অনেকে ফিরে আসেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরত এসেছেন ৭১ জন। কাজ নেই তাই তারা ফেরত এসেছেন। কাতার থেকে ফেরত এসেছেন ২৫ হাজার ৭০৫ জন। তারাও একই কারণে দেশে ফিরেছেন।

মালয়েশিয়া থেকে ফেরত এসেছেন ১১ হাজার ৫৭১জন। কাজ নেই তাই তারা ফেরত এসেছেন। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফেরত এসেছেন ২২০ জন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা দেশে ফিরে আসেন।

থাইল্যান্ড থেকে ফেরত এসেছেন ৮৯ জন। ফেরত আসার কারণ কাজ না থাকা। মিয়ানমার থেকে ফেরত এসেছেন ৩৯ জন। কাজ নেই তাই দেশে ফিরে এসেছেন তারা।

জর্ডান থেকে ফেরত এসেছেন দুই হাজার ২০৪ জন। সবাই গার্মেন্টস শ্রমিক। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সবাই দেশে ফেরত আসেন। ভিয়েতনাম থেকে ফেরত এসেছেন ১২১ জন। তারা প্রতারিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

কম্বোডিয়া থেকে ১০৬ জন ফেরত আসেন। কাজ না থাকায় তারা দেশে ফিরে আসেন। ইতালি থেকে ফেরত আসেন ১৫১ জন। ৬ জুলাই বাংলাদেশে থেকে যাওয়া এই কর্মীদের করোনা সন্দেহে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

ইরাক থেকে ফেরত এসেছেন নয় হাজার ৭৮৯জন। কাজ নেই তাই ফেরত এসেছেন তারা। শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরত এসেছেন ৫৪৮ জন। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা ফেরত আসেন।

মরিশাস থেকে ফেরত এসেছেন ৪৫২ জন। কাজের মেয়াদ না থাকায় ফেরত এসেছেন তারা। রাশিয়া থেকে ফেরত এসেছেন ১০০ জন। তাদের ফিরে আসার কারণ জানা যায়নি।

তুরস্ক থেকে ফেরত আসেন নয় হাজার ১৮৪ জন। কাজ না থাকায় তারা ফেরত এসেছেন। লেবানন থেকে ফেরত আসেন ছয় হাজার ৮৬৯ জন। অনেকের কাজ নেই তাই ফেরত আসেন এবং অনেকে আউটপাস নিয়ে ফেরত এসেছেন।

নেপাল থেকে ফেরত এসেছেন ৫৫ জন। তাদের ফেরত আসার কোনো কারণ জানা যায়নি। হংকং থেকে ফেরতে এসেছেন ১৬ জন। তাদেরও ফিরে আসার কারণ জানা যায়নি।

জাপান থেকে ফেরত এসেছেন আটজন। আইএম জাপানের মাধ্যমে যাওয়া প্রথম ব্যাচের আটজন তিন বছরের মেয়াদ শেষে ছুটিতে দেশে ফিরে এসেছেন।

লন্ডন থেকে ১৩৪ জন ফেরত আসেন। কী কারণে ফেরত আসেন তা উল্লেখ করা হয়নি। লিবিয়া থেকে ৪৫৫ জন ফেরত আসেন। তাদেরও ফেরত আসার কারণ জানা যায়নি।

এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে মোট ১২৮ জন ফেরত আসেন। তারাও কী কারণে দেশে ফিরে আসেন তা জানা যায়নি।

বার্তা কক্ষ,২ নভেম্বর ২০২০

Share