চাঁদপুর

১০ বছরেও চালু হয়নি চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের নৌ অ্যাম্বুলেন্স

‘চালকের অভাবে’ দীর্ঘ ১০ বছরেও চালু হয়নি আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের নৌ-এ্যাম্বুলেন্স।

আর এ কারনে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে অযতেœ অবহেলায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এ লাখ টাকার সরকারি সম্পদটি।

জানাযায় ২০০৮ সালে সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চাঁদপুর বাসির জন্য সরকারি হাসপাতালে এ নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি প্রদান করা হয়। আর এ নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দিয়ে চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর, মিয়ারবাজার, ঈশানবালা ও বাহেরচরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের রোগীদেরকে দ্রুত চিকিৎসার স্বার্থে তাদের যাতায়াতের জন্য এটি চালু করার কথা থাকলেও চালকের পদ সৃষ্টি কিংবা চালক না থাকায় সেটি এখন অকেজো হয়েই বিলিন হওয়ার পথে।

চরাঞ্চলে কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্র না থাকায় সেখানকার বাসিন্দাদের উন্নত চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল।
তাদের যাতায়াতের কথা বিবেচনায় রেখে, ২০০৭ সালে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তারই প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে সরকারি সাস্থ্য বিভাগ থেকে এই নৌ অ্যাম্বলেন্সটি পাঠানো হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের হেয়ালিপনায় ১০ বছরেও চরঞ্চলের মানুষের উপকারে আসেনি এ নৌ অ্যাম্বুলেন্স। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মূল্যহীনভাবে অযতেœ অবহেলায় অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের একমাত্র নৌ-অ্যাম্বুলেন্স।

সরজমিনে দেখাযায়, হাসপাতালের পেছনে পুকুর ঘাটে এই নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি প্রায় এক থেকে দেড় বছর যাবৎ পড়ে আছে। এর আগে হাসপাতালের সম্মুখ্যে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে এটি প্রায় ৭/৮ বছর ধরে পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়েছিল । ঝড়-বৃষ্টি রোদে এটির ওপর পড়ে গেছে শ্যাওলা ও লতাপাতা পড়ে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, এখন এটি আর চালু করার মত কোন পরিস্থিতি নেই।

সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, জরুরি রোগী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত এ স্পীডবোটটি আনা হয় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। এটি চালানোর জন্য চালককে কোনো পদ না থাকা সত্ত্বেও সে সময় অনেকটা জোর করেই চাঁদপুর সদর হাসপাতালকে গছিয়ে দেয়া হয়। প্রথম দিন চালুর সময় চালক না থাকায় একজন স্পীডবোটের চালককে দিয়ে এটি পরীক্ষা করা হয়। ওই সময় দেখা যায় যে, এটির এতটাই স্পীড যে ওই চালক রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছে।

স্পীডবোটটির আরো সমস্যা এটি প্রতি ঘণ্টায় ৪০ লিটার অকটেন খরচ হয়। চাঁদপুর থেকে ঢাকা রোগী নিয়ে এ নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি যেতে হলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হওয়ার কথা।

তিনি আরো জানান, এরপর মন্ত্রণালয়ের অনেক ফাইল চালাচালি সত্ত্বেও এটি চালানোর জন্য কোন চালক নিয়োগ দেয়া হয়নি। বরং ক’বার মন্ত্রণালয় থেকে পরিদর্শক টিম এসে এটি দেখে গেছে। কিন্তু চালক পদ সৃষ্টি হয়নি। এটির জন্য সরকারি কোনো তেলের বরাদ্দ দেয়াও হয়নি। সরকারি এ মূল্যবান সম্পদটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং এটি প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো জরুরি।

চাঁদপুর ২৫০শয্যা সরকারি জেনারেল হাসপাতালের প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক মো. সফিউল আলম জানান, চালকের পদ সৃষ্টি ও জ্বালানী তেলের বরাদ্দ না থাকায় লাখ টাকার এ্যাম্বুলেন্সটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা এটি পরিচালনা করতে চালকের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ ক’বার লিখিত চিঠি প্রেরণ করেছি। কিন্তু আজো পর্যন্ত চালক না দেয়ার কারনে এটি এভাবেই শেষ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন ,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ২৩ অক্টোবর ২০১৪সালে আরও একটি নৌ-এ্যাম্বুলেন্সের বরাদ্দ দিয়েছে। যেখানে একটি এ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘ ৮ বছর চালকের অভাবে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে আছে, এ অবস্থায় আরো একটি নৌ-এ্যাম্বুলেন্সের বরাদ্দ দেয়ার কোন যুক্তিকতা নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এতে হতভাগ হয়ে নতুন বরাদ্দের এ্যাম্বুলেন্সটি না দেয়ার জন্য পত্র প্রেরণ করেছেন।

প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৫:০৩ পিএম, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭ রোববার
ডিএইচ

Share