ভারি বর্ষণে ক্ষতবিক্ষত চাঁদপুরের প্রধান সড়কসহ পুরো জেলায় সড়ক উন্নয়নের কার শুরু হয়েছে। চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং চাঁদপুর পৌরসভার মাধ্যমে এসব সড়কের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এসব বিভাগের আওতায় প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কার করা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২১৫ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে চাঁদপুরে সড়কের করুণ অবস্থা দূরীভূত হয়ে জনদুর্ভোগ লাঘব হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সড়কগুলোর উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু অতিসাম্প্রতিক বৃষ্টির কারণে সে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টি কমার পর আবারো কাজ শুরু হয়েছে।
অন্যান্য কাজগুলো এক-দুই মাসের মধ্যে শুরুর হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে শেষ দিকে এসব প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে মেশিনের সাহায্যে বৃহৎ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলে চাঁদপুর জেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলো অতি উন্নত রাস্তায় পরিণত হবে। দূর হবে জনদুর্ভোগ।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ্রত দত্ত জানান, চলতি অর্থবছরে চাঁদপুরে সড়ক বিভাগের আওতায় প্রায় ৮৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ করা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে চাঁদপুর শহরের ইলিশ চত্বর থেকে ওয়্যারলেছ পর্যন্ত ১.৭ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নে ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা।
এরইমধ্যে এর কাজ শুরু হয়েছে। এই সড়কের শপথ চত্বর থেকে ডিসি অফিস পর্যন্ত সড়কের প্রশস্ততা ২৪ ফিট থেকে বেড়ে ৩২ ফিটে উন্নীত হবে। আর ডিসি অফিস থেকে ওয়্যারলেছ পর্যন্ত সড়কের প্রশস্ততা ১৮ ফিট থেকে বেড়ে ২৪ ফিটে উন্নীত হবে। এছাড়া ১০০ মিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে।
তিনি আরো জানান, ভাটিয়ালপুর চৌরাস্তা থেকে হরিণা ফেরিঘাট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন কাজ করা হবে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) এই কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের মুদাফফরগঞ্জ থেকে ওয়্যারলেছ হয়ে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের বর্ডার বাজার পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়ন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। এরপর কার্যাদেশ দেয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ইচলি-নানুপুর-চান্দ্রা-কামতা বাজার সড়কের ১২ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজও চলমান। এই প্রকল্পের ২২.৫ কোটি টাকার কাজের মধ্যে ইতামধ্যে ১৫ কোটি টাকার কাজ শেষ হয়েছে। সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জি এম মজিবুর রহমান জানান, চলতি অর্থবছরে চাঁদপুরে এলজিইডির আওতায় প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১২০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজে ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৫০ কিলোমিটার সড়কের কাজে ব্যয় হবে ২৬ কোটি টাকা।
চাঁদপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী নুরুল আমিন জানান, চলতি অর্থবছরে চাঁদপুর পৌরসভার নতুনবাজার ও পুরানবাজার অংশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ করা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক ও স্টেডিয়াম রোডের প্রশস্ততা বাড়ার পাশাপাশি আধুনিক ওয়াকওয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। বাকী সড়কগুলোর কাজও খুব সহসা শুরু হবে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির বিগত মাসিক সভায় এ ব্যাপারে দীর্ঘ সময় ধরে বক্তব্য রাখেন। সারা জেলার সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়ম-নীতি মেনে সঠিকভাবে কাজ করতে হবে। কাজের গুণগত মানও ভালো হতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়মিত কাজ তদারকি করার উপর গুরুত্বারোপ করেন জেলা প্রশাসক।
চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারীকে এসব কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নে বিশ্বাসী। গত কয়েক বছরের ব্যাপক বৃষ্টি বিশেষ করে এবছর ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার রাস্তাগুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের সহযোগিতায় সারা জেলায় সড়ক উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে এ জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই চাঁদপুরবাসী ভাঙ্গাচুড়া সড়কের দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী। চাঁদপুরের সড়ক উন্নয়নে সরকার চলতি অর্থবছরে যত টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তা ইতোপূর্বে পাওয়া যায়নি। আশা করছি, কাজের গুণগত মান বজায় রেখে এসব সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই যাতে জনগণ এসব কাজের সুবিধা ভোগ করতে পারে এ জন্য আমি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির বিগত মাসিক সভায় সারা জেলার সড়ক উন্নয়ন কাজের বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেন, সরকারের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে চাঁদপুরের সড়ক উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। আমি আশা করছি, গুণগত মান বজায় রেখে কাজগুলো সম্পন্ন হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের কাজগুলো যাতে সঠিকভাবে হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর রাখতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে আমাদের সকলকে সহযোগিতা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুর শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো বেহাল অবস্থায় রয়েছে। এতে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, এ সড়কগুলো সংস্কার করা। অবশেষে সারা জেলায় সড়ক উন্নয়নের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এতে জনমনে স্বস্তি ও আশার আলো দেখা দিয়েছে।
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১:৫৩ পিএম, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭ মঙ্গলবার
ডিএইচ