চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সড়কপথে মোট ১৭ হাজার ৯শ ৫৭টি দুর্ঘটনায় ১৭ হাজার ৮শ ২৬ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৭শ ৭৮ জন। ৪ জুলাই রাজধানীর বিজয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা।
সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা জানান,ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিসহ থ্রি হুইলার ধরনের বাহনে ৮ হাজার ৮শ ১২ টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৮শ ১৫ এবং নিহত হয়েছেন ৭শ ৯৫ জন।
একই সাথে ৩ হাজার ৭১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৬শ ২৩ জন আহত এবং ৬শ ৭৩ জন নিহত হন। ৩ হাজার ৪০৪টি বাস দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৩শ ১৮ জন আহত এবং ৮শ ২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ২ হাজার ২৭টি ট্রাক-পিকআপ-লড়ি দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৭০ জন আহত এবং ৪শ ৮৫ জন নিহত হয়েছেন।
সেভ দ্য রোড-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, মহাসচিব শান্তা ফারজানাসহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা সেল সদস্যদের তত্ত্বাবধানে ১৭টি জাতীয় দৈনিক, ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া তথ্য অনুসারে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী বলেন,সেভ দ্য রোড-এর দাবি অনুযায়ী প্রতি ৩ কি.মি. পুলিশ বুথ বা ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন না করা ও হাইওয়ে পুলিশসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে সড়কপথে ৬ মাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ১১৮টি।
এতে ডাকাতদের হামলায় আহত হয়েছেন ১০৪ জন। এছাড়াও নারী শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটেছে ৬শ ১৪টি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২টি। যার অধিকাংশই থানা-পুলিশের শরণাপন্ন হয়ানি বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও সেভ দ্য রোড-এর স্বেচ্ছাসেবীদের তথ্যে উঠে এসেছে।
নৌ-পথে কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার সুযোগে অন্যান্য বছরের তুলনায় ডাকাতি বেড়েছে। রেলপথে মহাখালীতে দুষ্কৃতিকারীদের ছোড়া ইট-পাটকেল ও ছিনতাইকারীদের হামলায় ৪১ জনসহ ৫৩ জন আহত হয়েছেন। এছাড়াও ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নৌ-পথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬শ ১৫টি। এতে আহত হয়েছেন ৪শ ৫১ জন এবং নিহত হয়েছেন ১৪ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত রেলপথে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫শ ২৬টি।
এতে আহত হয়েছেন ১শ ৮৪ জন এবং নিহত হয়েছেন ১৪ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুনের মধ্যে আকাশপথে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে অসুস্থ হয়েছেন ৩১৬ জন।
এসময় সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেভ দ্য রোড-এর পক্ষ থেকে গত ১৭ বছর যাবৎ ৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে ৭ দফা দাবি নিয়ে কাজ করছে।
৭ দফা হলো:
১. মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে।
২. ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে।
৩. সড়ক পথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেসবিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া চালক-সহযোগী নিয়োগ ও হেলপার দিয়ে পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. স্থল-নৌ-রেল ও আকাশ পথ দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সরকারিভাবে দিতে হবে।
৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. পথ দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের আগ পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা-সহমর্মিতা-সচেতনতার পাশাপাশি সব পথের চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সব পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে।
৭. ইউলুপ বৃদ্ধি,পথ সেতুসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে ভাঙা পথ,ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোনো প্রাণ দিতে না হয়।
৪ জুলাই ২০২৫
এজি