Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মেঘনায় জাটকা বিরোধী নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে নদীতে জেলেরা
মেঘনায়

মেঘনায় জাটকা বিরোধী নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে নদীতে জেলেরা

দুমাস নিষেধাজ্ঞার পর আজ জেলেরা চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে নেমেছেন। মার্চ -এপ্রিল দু’মাস মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।

নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় ১ মে থেকে জেলেরা নদীতে জাটকা ছাড়া সব ধরণের মাছ ধরতে পারবেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস জানিয়েছেন,জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞা আগামী জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এ ছাড়া মেঘনায় অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহারও নিষিদ্ধ থাকছে।

মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য অফিস জানান,অভয়াশ্রম ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ১’শ ৮০ টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ১৫ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল, ২০০টি বেহুদি ও অন্যান্য জাল, ৭টি নৌকা ও ১৭ টন মাছ জব্দ করা হয়। ১১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ৫ জেলেকে কারান্ড ও ১২ জেলেকে ৩২হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলেরা। ষাটনল এলাকার জেলে রিপন বর্মণ ও ফুলচান বর্মণ বলেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। আর্থিক সমস্যায় গত দুই মাস খুব কষ্টে কেটেছে। আজ থেকে তাঁরা আবার মেঘনায় মাছ ধরা শুরু করবেন।

এদিকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভয়াশ্রমে সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর আজ ১ মে, ২০২৫ ইং তারিখ থেকে চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদীতেও মাছ ধরা শুরু হয়েছে। র্দীঘ প্রতিক্ষার পর নদীতে মাছ ধরতে পারায় প্রকৃত ইলিশ ছেলেদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

তবে, নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরতে যাবেন বা যাচ্ছেন ঠিকই কিন্তু বড় জাল নৌকার জেলেরা তেমন মাছ না পাবার আশংকা করছেন তারা। একমাত্র নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ভর বর্ষাতে ইলিশ পাবার আশা তাদের।
সরজমিনে দেখা যায়, এতদিন যেসব আড়তে ছিল সুনশান নিরবতা সেইসব আড়ত জেলে, মৎস্যজীবী ও আড়তদারদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে নিষেধাজ্ঞা তুলে যাবার একদিন আগ থেকেই। মাছ ধরে বিগত দিনের ধার-দেনা শোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে চান জেলেরা। তবে চাঁদপুরের নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম।

জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুর ৭০ কিলোমিটার নদীর পদ্মা মেঘনার অভয়াশ্রম ঘোষণা করে সরকার। এ সময় অনেকটা বেকার জীবন কাটান চাঁদপুরের ছান্দি,গুলতি জাল- নৌকার জেলেরা। তারা সরকারের আইন মেনে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে দুই মাস নদীতে যায়নি। তাদের নৌকা জাল উপরে তুলে ফেলা হয়।

৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিতসহ চাঁদপুর জেলায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার জেলে রয়েছে। গত দুই মাস অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা নৌকার জরা দূর করছেন। পুরোনো নৌকা সংস্কার ও নতুন নৌকা তৈরি করে তাতে আলকাতরা মাখাচ্ছেন। নতুন আলকাতরা নৌকায় মাখানোর সময় এক ঝাঁজালো গন্ধ জেলে পাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক জেলে পুরোনো জাল বুনছেন (সংস্কার)। জালের পুরোনো ছেঁড়া অংশ ফেলে নতুন সুতায় শক্তপোক্ত করে তুলছেন জাল। জালের কিনারে মোটা সুতা, পোড়ামাটির কাঠি ও চাড়া জুড়ে দিচ্ছেন।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার জেলেপাড়া অধ্যাশিত মালোপাড়া এলাকা , এখলাছপুর,দশানী, মোহনপুর মেঘনা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদী সংযোগ সেখানকার খাল গুলোর মুখে জেলেরা জাল মেরামত করছেন। অন্যদিকে তাঁদের নৌকায় আলকাতরা মাখানো হচ্ছে। যাঁরা জাল মেরামত করছেন তাঁরা জানান, ১ মের আগে তাঁদের সবকিছু ঠিক করতে হবে। অভিযান না থাকায় এখন মাছ ধরতে যাবেন নদীতে। আল্লাহর উপর ভরসা, যদি কিছু মাছ পাওয়ার আশা।

মতলব উত্তর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন,৩০ এপ্রিল রাত বারটার পরই জেলেরা নামবে নদীতে। জাটকা, গুড়া ও পোনা মাছ ধরা সব সময়ই মৎস্য আইনে নিষেধ আছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জাটকা রক্ষা কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক জেলেকে ৪০ কেজি করে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের মে মাস পযন্ত তাঁরা এ সহায়তা পাবেন।

মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে দুমাস অভয়াশ্রম এলাকায় সকল ধরনের মাছ ধরা থেকে আমরা জেলেদেরকে বিরত রেখেছি। নদীতে কোঠর নজরদারি ছিল। এ বছর জাটকা রক্ষায় শক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং তা সফল হয়েছে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি। আর ইলিশ উৎপাদন বাড়লে জেলে যারা আছেন তারাই মূলত স্বাবলম্বী হতে পারবেন। তিনি অভয়াশ্রম ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রম সফল ভাবে শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি এর সুফল জেলেরা পাবেন।

চাঁদপুরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার দুমাসের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত ছিল। অভিযানকালে জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে জনপ্রতি ৪০ কেজি করে ৪ কিস্তিতে মোট ১৬০ কেজি চাল সঠিক সময়ে প্রদান করা হয়েছে। তবে ইলিশ সম্পদ রক্ষা প্রকল্প থেকে দ্রুতগামী ১০টি স্পিড বোট বরাদ্দ থাকায় জেলা প্রশশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও জেলা উপজেলা টাস্কফোর্সের অনবরত যৌথ অভিযানে এবার নেমেছে। তাই জেলেরা নদীতে নামার তেমন একটা সুযোগ পায়নি। ফলে নদীতে এবার ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলেই আশা করছি। তাছাড়া অসাধু জেলেদের আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, এবারের অভিযানে ৩৮টি মোবাইল কোর্ট, ৭শ ৯৫টি অভিযান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন শতাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১০ দশমিক ৮৯৫ লাখ মিটার কারেন্টজাল জব্দ ও ৬ দশমিক ৪৬৩ টন জাটকা আটক করে গরিব-দুস্থ’ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আর জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০৫ টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ১ মে ২০২৫