Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / মামলার সাক্ষী নিজেরাই জানে না ঘটনা কি
মামলার

মামলার সাক্ষী নিজেরাই জানে না ঘটনা কি

জমি থেকে মাটি কাটার সময়ে ভেক্যুর আঘাতে আহত হয়ে পা ভেঙ্গে যায়, বুকের পাজরে আঘাত প্রাপ্ত হন তিনি। তাতেই কার্যসিদ্ধি, অর্থনৈতিক লেনদেনের ঘটনা নিয়ে বিরোধকে পুঁজি করে সেই আঘাতকে হামলা পূর্বক আহত করার ঘটনায় রূপান্তরিত করে আদালতে মামলা দায়ের হয়। বিজ্ঞ আদালত দায়েরকৃত অভিযোগটি নথিভুক্ত করে থানা পুলিশকে তদন্ত করতে নিদের্শনা দেন। থানার তদন্তকারী কর্মকর্তাও বাদীর দেয়া লিখিত অভিযোগের আলোকে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে ঘটনাস্থল ও সাক্ষীদের নিয়ে। সাক্ষীদের বেশ কয়েকজনের দাবি তারা এই সর্ম্পকে জানেন না এমনকি ঘটনাস্থল হিসেবে যেই স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাও সঠিক নয়। এমন ঘটনাটি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার।

জানা গেছে, উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের ফনিসাইর গ্রামের হোসেন রাজা পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলী গ্রামের ফয়সাল পাটওয়ারীর নিকটাত্মীয়। সেই সূত্র ধরে ফয়সাল পাটওয়ারী হোসেন রাজার সাথে কয়েক বছর পূর্বে মাটি বিক্রির চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী হোসেন রাজা ফয়সাল পাটওয়ারীকে ২৯ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা দেননি। এক পর্যায়ে এই টাকা আদায়ে ফয়সাল আদালতের দারস্থ হন। যা এখনো আদালতে চলমান।

চলতি বছরের শুরুতেই কামতা এলাকায় মাটি ভেক্যু দিয়ে মাটি কাটার সময়ে অসবাধনতা বশত: ভেক্যুর হাতলের আঘাতে হোসেন রাজার পা ভেঙ্গে যায় এবং বুকের পাজরে আঘাত প্রাপ্ত হন। ওই ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্বাস আলী।

কিন্তু হোসেন রাজা এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারী পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের জামতলা বাজারে সকাল ৭টায় ফয়সাল পাটওয়ারী তার সঙ্গীরা তার উপর হামলা করে এবং এসএস পাইপ দিয়ে আঘাত করে যাতে তার পা ভেঙ্গে যায় এবং বুকের পাজরে আঘাত প্রাপ্ত হন। এমন অভিযোগ এনে তিনি চাঁদপুর আদালতে গত ১৩মার্চ ২০২৫ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি বিবেচনা করে থানা পুলিশকে নথিভূক্ত করে তদন্ত করার নিদের্শনা দেন। এমনটিই জানান মামলার বিবাদী ফয়সাল পাটওয়ারী। তিনি জানান, তার পাওনা টাকা না দিতে এবং আদালতে মামলা করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে তিনি দুর্ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেন।

খোজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় জামতলা বাজারে এমন কোন ঘটেই নি। মামলার ঘটনাস্থল জামতলা বাজারের ব্যবসায়ী মো. রাব্বী তালুকদার ওই ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি জানান, হোসেন রাজা তার পরিচিত প্রায়শই তার দোকানে চা খেতে আসেন। কিন্তু তার উপর হামলার ঘটনা কোন কিছুই জানেন না। তার কাছে কোন পুলিশ আসে নি।

মামলার প্রথম সাক্ষী মো. হানিফ দর্জি জানান, হোসেন রাজা বেশ কিছুদিন ধরে মামলা সাক্ষী তৈরি করে দিতে অনেকদিন তার পিছনে ঘুরেছেন এবং তার মুঠোফোনে কলও করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি বিরক্ত হয়ে তার কল রিসিভ করা বন্ধ করেন। একদিন তার বাড়িতে এসে হাজির হন হোসেন রাজা। তিনি অনেকটা কাকুতি মিনতে করে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। কেন স্বাক্ষর নিয়েছেন সেই বিষয়ে কিছুই বলেন নি। এছাড়া এই পর্যন্ত কোন পুলিশ মামলার বিষয়ে জানেত আসেন নি। হোসেন রাজার উপর হামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

আরেক সাক্ষী মো. মমিন জানান, মামলার বিষয়ে জানি। কিন্তু কোন কাগজে স্বাক্ষর দেয়নি। সাক্ষীর দেয়ার বিষয়ে আমি জানি না।

মামলার বিবাদী ফয়সাল পাটওয়ারী জানান, পাওনা টাকা না দিয়ে হোসেন রাজা আমাদের মিথ্যা মামলা ফাঁসিয়েছে। সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের কামতা এলাকায় তিনি ভেক্যুর আঘাতে আহত হন। কিন্তু তিনি আমার ও আমার বাবার বিরুদ্ধে মামলা সাজাতে গিয়ে ওই আহত হওয়ার ঘটনাকে তার শশুরবাড়ি যাওয়ার পথে জামতলা বাজারে আমরা তার মোটর সাইকেল গতিরোধ করে হামলা করেছি বলে মিথ্যা ঘটনা সাজায়। এমনকি সাক্ষীরাও জানেন না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে না এসেই বাদীর কথামতো তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেছেন বলে শুনেছি।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ থানার এসআই রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মামলার অভিযোগ ও চিকিৎসকের সনদ অনুযায়ী তদন্ত করে যা পেয়েছি সেভাবে রিপোর্ট দিয়েছি। তবে সাক্ষীরা যদি মনে করেন তাদের বক্তব্য সঠিক ভাবে উপস্থাপিত হয়নি, তাহলে তারা বৈরি সাক্ষী হিসেবে আদালতে তাদের বক্তব্য দিতে পারেন।এই বিষয়ে মামলা (সি আর ২৫০/২০২৫ )’র

বাদী হোসেন রাজা মুঠো ফোনে জানান, আমার উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই আলোকে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।

স্টাফ করেসপন্ডেট,২৭ মে ২০২৫