চাঁদপুরের মেঘনায় জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ষড়যন্ত্রের যে কোনো সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।
তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শুধু একটি অপরাধমূলক ঘটনা না হয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, যার ফলে চাঁদপুর সহ দেশব্যাপী আরও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
সকাল-সন্ধ্যা শহরের সর্বত্রই এ ঘটনা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, ৭ খুনের ঘটনা উদঘাটন আদৌ কি হবে? নাকি এটি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন করে আতঙ্ক ও ভীতি ছড়ানোর লক্ষ্যে কিলিং মিশন শুরু হল? এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
মধ্যরাতে সংঘটিত এই হত্যার ঘটনা পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর, সাধারণ জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন এবং উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বর্তমান সরকারের প্রতি পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষ থেকে এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা যেতে পারে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্র সমন্বয়কদের উপর হামলা ও হুমকি ধমকি সহ নানা ঘটনায় এটি এমন কোন ইঙ্গিত বহন কর কিনা, তা ভেবে দেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে, এই ঘটনার প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং এর পেছনে কারা রয়েছে, তা নিয়ে এখনও পরিষ্কার কোনো উত্তর মেলেনি।
এর আগে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেঘনা নদীতে দুর্ঘটনার কবলে পড়া সার বোঝাই এমভি আল বাখেরা নামক জাহাজ থেকে সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। এসময় গুরুতর জখম অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করা হয়।
২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে সাতজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হয়।
নিহতরা হলেন জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া (৬০), সুকানি আমিনুল মুন্সী (৪০), লস্কর শেখ সবুজ (৩৫), লস্কর মো. মাজেদুল (১৬), লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬), ইঞ্জিনচালক মো. সালাউদ্দিন (৪০) ও বাবুর্চি কাজী রানা (২৪)।
এদিকে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে, তবে হত্যার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে, প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন, যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মৃতদেহ গুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। তবে এখনও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল হোতাদের বিষয়ে কোনো দৃঢ় তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই হত্যাকাণ্ডের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এটি কি শুধুমাত্র একটি অপরাধমূলক ঘটনা, না কি এটি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ড? এই ঘটনা একটি নতুন “কিলিং মিশন” হিসেবে চালু হয়েছে, এমন ধারণাও কিছু অংশের জনগণ প্রকাশ করছে।
এ ধরনের উদ্বেগের মধ্যে কোনো ইঙ্গিত প্রকাশ করলে, তা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে বড় আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমরা নিহতদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) প্রধান করে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও জেলা পুলিশের প্রতিনিধি নিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। এ কমিটি আমাদের ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। আজই এ ঘটনায় মামলা হবে। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে একজন বাদী হয়ে হাইমচর থানায় মামলা করবেন।
প্রতিবেদক: মুসাদ্দেক আল আকিব, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪