জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে চাঁদপুরে পদযাত্রা, শোকসভা, দোয়া-মোনাজাত ও জনসমাবেশের মাধ্যমে শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শহিদদের ত্যাগ স্মরণ করে দলটির নেতারা বৈষম্যহীন, মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
আজ (২৩ জুলাই) সকাল ৯টায় চাঁদপুর সার্কিট হাউস কনফারেন্স রুমে শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা। শহিদ পরিবারের স্বজনদের আহাজারিতে সভাকক্ষ ভারী হয়ে ওঠে।
এনসিপি’র অন্যতম শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন—“শহিদদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। তাদের রক্তে লেখা হয়েছে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সমতার স্বপ্ন। আমরা তাদের সেই ত্যাগকে শক্তিতে রূপান্তর করে একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। আজ যারা শহিদ হয়েছেন, তারা শুধু কোনো দলের জন্য নয়, গোটা জাতির মুক্তির জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। তাদের ত্যাগকে স্মরণ করার মানে কেবল কাঁদা নয়— বরং অন্যায়, বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নতুন প্রতিজ্ঞা নেওয়া।’’
আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম যেন এই ত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে সাহসের সঙ্গে দেশের জন্য দাঁড়ায়। আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট— একটি রাষ্ট্র, যেখানে কোনো মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না, যেখানে মানুষের মর্যাদা সর্বাগ্রে থাকবে। এই ত্যাগের চেতনা নিয়েই আমরা এক নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছি।”
এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন—“শহিদদের স্মরণ মানে শুধু তাদের নাম উচ্চারণ করা নয়, তাদের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের শপথ গ্রহণ করা। যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, তারা চেয়েছিল একটি ন্যায্য ও সুশাসনের রাষ্ট্র। কিন্তু আজো আমরা দেখছি ফ্যাসিবাদী শাসন, গণতন্ত্রের সংকট এবং জনজীবনে অমানবিক অবস্থা।’’
আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এই ফ্যাসিবাদী সরকারের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করব। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনা, দুর্নীতি ও দমননীতির অবসান ঘটানো এবং একটি অংশীদারিত্বমূলক সরকার গঠনই আমাদের অঙ্গীকার। শহিদদের স্বপ্নপূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম থামবে না। এই আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক নয়, এটা ন্যায়ের আন্দোলন, মানবিকতার আন্দোলন।”
সকাল ১০টায় চাঁদপুর সার্কিট হাউসের সামনে থেকে শোকমিছিল শুরু হয়ে শহরের বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সকাল ১১টায় পথসভা, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা মাইলস্টোন কলেজের আহত ও নিহত শিক্ষার্থীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং চব্বিশের আন্দোলনে শহিদদের স্মরণ করেন।
সভায় বক্তারা দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কর্মকাণ্ড নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন। তারা বলেন—“স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যান। দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে তিনি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তিনি যে বেতন ও সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন, তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। স্বাস্থ্য বিষয়ে তার কোনো সঠিক ধারণা নেই। যদি তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে অবিলম্বে তার পদত্যাগ করা উচিত।”
তারা আরও বলেন—“ড. মুহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার চললেও জনগণের দুঃখ-কষ্ট কমছে না। আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী সরকার আর যেন ক্ষমতায় ফিরতে না পারে। তা না হলে আবারো গণঅভ্যুত্থান হবে।”
পথসভা শেষে দুপুর ১টায় কুমিল্লা যাওয়ার পথে হাজীগঞ্জে শহীদ আজাদ চত্বরে মাল্যদান ও উদ্বোধনী কর্মসূচিতে অংশ নেন এনসিপি নেতারা।
এই কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এতে বক্তব্য রাখেন— কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী, সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ মিরাজ মিয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব মাহবুব আলম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আরিফ তালুকদার এবং চাঁদপুর জেলা এনসিপির আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান।
দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন এনসিপি চাঁদপুর সদর যুগ্ম সমন্বয়কারী মুফতি মাহমুদ হাসান। এছাড়া কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতা ও চাঁদপুর জেলা এনসিপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষণা দেন—“শহিদদের ত্যাগ স্মরণে আমরা বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে অগ্রসর হব।”
প্রতিবেদক: মুহাম্মদ বাদশা ভূঁইয়া, ২৩ জুলাই ২০২৫
চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur