ফরিদগঞ্জে পুলিশের অস্ত্র চুরির তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে চুরির সঙ্গে জড়িত মূল হোতা। এর আগে অস্ত্র, গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধার হয়েছে। চুরির সঙ্গে জড়িত দুই দুর্বৃত্তের একজন সুমন। অপরজন সাইদুল ইসলাম। তারা দু’জনে একে অপরের ভায়রা। রিমান্ডে সুমনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক সাইদুলের সম্পৃক্ততা ও বিস্তারিত পরিচয় বেরিয়ে আসে। ৬ জুলাই রোববার পর্যন্ত সাইদুল ইসলাম ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনে কাজ চলছে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, দুই ভায়রা সুমন (৩৫) ও সাইদুল ইসলাম (৩৮) পেশাদার চোর। তারা ঢাকা থেকে পরিকল্পনা করে চাঁদপুর এসে একটি আবাসিক হোটেলে কক্ষ ভাড়া নিয়ে রাত যাপন করে। পরদিন, ফরিদগঞ্জ বাজারে এসে থানা রোড প্রবেশ করে। সুমন সরাসরি এস.আই রাকিবের ভাড়া বাসা চার তলায় প্রবেশ করে। সাইদুল ইসলাম ভূমি অফিস গেইটের কাছাকাছি অবস্থান নেয়। সুমন পিস্তল, ১৬ রাউন্ড গুলি ও একটি ম্যাগাজিন চুরি করে বেরিয়ে আসে ও দ্রুতপদে এলাতা ত্যাগ করে। ঘটনার ১১ দিনের মধ্যে সুমনকে গ্রেফতার করে ঢাকার শাহ্ আলী থানা পুলিশ ও চাঁদপুরের ডিবি পুলিশ। সে জানায় বরগুনার জনৈক রুবেলের কাছে পিস্তল, ১৬ রাউন্ড গুলি ও ম্যাগাজিন বিক্রি করা হয়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে শাহ্ আলী থানা এলাকা থেকে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। বরগুনা জেলা থেকে রুবেলকে আটকের পর সেও স্বীকারোক্তি দেয়। এদিকে, সাইদুল ইসলাম ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার (৩রা জুলাই) সুমন ও রুবেলকে রিমান্ডে আনা হয় ফরিদগঞ্জ থানায়। জিজ্ঞাসাবাদে সুমনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়।
ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ শুক্রবার রাতে দ্রুত গতিতে অভিযান চালায় ঢাকার মিরপুর এক নম্বরে। সেখান থেকে যায় ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সুক্তাঘর ইউনিয়নের কেওতা গ্রামে। সাইদুল ওই গ্রামের ফকির বাড়ির মোবাক্ষের আলী ফকিরের ছেলে। রাজাপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় ৫ জুলাই রাতে সাইদুলের বাড়ি ঘেরাও করে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাৎক্ষণিক জানতে চাইলে সাইদুল চুুরির সঙ্গে জুড়িত থাকার দায় স্বীকার করে।
গ্রেপ্তারের পর সাঈদ জানায়, সুমন তার ছোট ভায়রা এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি করে আসছিল। সর্বশেষ গত ৫ মে ফরিদগঞ্জে এসে পুলিশ সদস্যের বাসায় ওই চুরির ঘটনা ঘটায়।
উল্লেখ্য, এস.আই. রাকিব ফরিদগঞ্জ থানার প্রায় এক শ’ ফিট উত্তরে একটি পাকা ভবনের চার তলায় থাকতেন। সুমন সরাসরি ওই বাসার দরজার সামনে যায়। সে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তালা খুলে ফেলে এবং ট্রাংকের ভেতর থেকে অস্ত্র নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ বিভাগ ও জনমনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েকটি বিভাগ মাঠে নেমে পড়ে।
জিজ্ঞাসাবাদে সুমন পুলিশকে জানায়, চুরি করা রিভলবারটি ২০ হাজার টাকায় রুবেলের কাছে বিক্রি করে। প্রথম কিস্তিতে সুমন ও সাইদুলকে নগদ আট হাজার টাকা দেয়া হয়। ১২ হাজার টাকা বকেয়া থাকে।
অস্ত্র উদ্ধারের পর, ঢাকার শাহ আলী থানায় অস্ত্র আইনে সুমন ও রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। বিজ্ঞ আদালতে উপস্থিত করলে, তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। চুরির ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই চুরির তথ্য জানতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তাদের রিমান্ড আবেদন করে ও দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয় ।
ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকার মিরপুর, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে জানা গেছে, দুই ভায়রা বহু চুরির সঙ্গে জড়িত। তারা, এর আগে চিহ্নিত হয়নি।
এদিকে, ফরিদগঞ্জ থানায় রিমান্ডে থাকালীন সুমন বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। এতে, বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে সুমন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ্ আলম বলেন, এসআই রাকিব উদ্দিন ভূইয়ার বাসা থেকে সরকারি রিভলবার চুরির ঘটনায় দুই ভায়রাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুমন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, তারা দুই ভায়রা মিলে চুরি করেছে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল। সাঈদকেও রবিবার (৬ জুলাই) আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৬ জুলাই ২০২৫