Home / বিশেষ সংবাদ / হাজীগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলার নামকরণের প্রেক্ষাপট
minar-

হাজীগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলার নামকরণের প্রেক্ষাপট

চাঁদপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কি.মি.পূর্বে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জনপদ হাজীগঞ্জ। দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স অবস্থিত । ভৌগোলিকভাবে সড়ক,রেলপথ আর নদী পথে হাজীগঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। জেলার কেন্দ্রে অবস্থিত ব্যবসাকর স্থান হিসেবে খ্যাত বিধায় ইতিমধ্যে জেলাতে হাজীগঞ্জ বাণিজ্যিক উপজেলার খ্যাতি অর্জন করেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে সাথে ভৌগোলিক কারণে হাজীগঞ্জ উপজেলা জেলার অন্য সকল উপজেলা থেকে শিক্ষা ও ধর্মীয়-আচার অনুষ্ঠানে অনেক উন্নত বলে দাবি করেন হাজীগঞ্জবাসী।

অবস্থান ও জনপ্রশাসন বিভাগ :

চাঁদপুর জেলার মধ্যবর্তী স্থানে জেলা সদর থেকে পূর্বদিকে চাঁদপুর জেলার প্রাণকেন্দ্র ও অন্যতম ব্যবসাকর স্থান হিসেবে হাজীগঞ্জের পরিচিতি রয়েছে। উপজেলার দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ-পশ্চিমে ফরিদগঞ্জ আর চাঁদপুর সদর, পূর্ব-দক্ষিণ ও পূর্বে শাহরাস্তি উপজেলা, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে মতলব দক্ষিণ উপজেলা, উত্তর ও উত্তর পূর্বে কচুয়া উপজেলার সীমানা দিয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিবেষ্টিত। উপজেলার আয়তন ৪৬ হাজার ৯শ’ ২৬ একর ও ১শ’ ৮৯ বর্গ কি.মি। যা ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে ‘হাজীগঞ্জ উপজেলা’গঠিত হয়েছে।

পৌরসভার নাম -হাজীগঞ্জ পৌরসভা। এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। এর মধ্যে ওয়ার্ড রয়েছে ১২টি। প্রতিষ্ঠাল ১৪ মার্চ, ১৯৮৫। আয়তন-১৮.৫০ বর্গকিমি,জনসংখ্যা (২০১১ এর মতে ১,০১,৫৭০ জন। ১৩.৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে হাজীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় । বর্তমান আয়তন ২০.২৪ বর্গ কি.মি.। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাজীগঞ্জ পৌরসভার জনসংখ্যা ৬৩,৮৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩১,৭৩৫ জন এবং মহিলা ৩২,১৫৭ জন। মোট পরিবার ১২,৬৭৯টি। হাজীগঞ্জ উপজেলার মধ্যাংশে হাজীগঞ্জ পৌরসভার অবস্থান। এ পৌরসভার উত্তরে হাটিলা পূর্ব ইউনিয়ন, হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়ন ও হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন; পশ্চিমে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন; দক্ষিণে বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়ন ও বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ন এবং পূর্বে শাহরাস্তি উপজেলার টামটা দক্ষিণ ইউনিয়ন অবস্থিত। ১৯৮৫ সালের ১৪ মার্চ‘ হাজীগঞ্জ পৌরসভা ’প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে গ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৮ সালের ১২ মে এ পৌরসভাকে খ শ্রেণিতে এবং ২০০৪ সালের ১২ জুলাই ক শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। মূলত কৃষি, ব্যবসা এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স থেকে এ পৌরসভার অর্থনীতি নির্ভরশীল । ১২ ইউনিয়ন হলো ; রাজারগাঁও , বাকিলা কালচোঁ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কালচোঁ দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ সদর, বড়কুল পূর্ব , বড়কুল পশ্চিম , হাটিলা পূর্ব গর্ন্ধব্যপুর উত্তর , গর্ন্ধব্যপুর দক্ষিণ, হাটিলা পশ্চিম দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ। ১২টি ইউনিয়নের ১শ’ ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে গ্রাম রয়েছে ১শ’ ৫১টি ও মৌজার সংখ্যা ১৪৭ । রাস্তা রয়েছে ৪শ’৫ কি.মি, পাকা রাস্তা রয়েছে ১শ’ ৪৫ কি.মি, সলিং সড়কের পরিমাণ ৭ কি.মি, রেল লাইন রয়েছে ১৩ কি.মি, সড়ক ও জনপথের সড়ক রয়েছে ২০ কি.মি, নৌ-পথ রয়েছে ২০ কি.মি। ১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়।

কৃষি, মৎস্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা :

হাজীগঞ্জে এক ফসলি জমির পরিমাণ ১৫ হাজার ৭০ একর, দো-ফসলি জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৫শ’ ৫৭ একর, তিন ফসলি জমির পরিমাণ ১১ হাজার ৮০ একর। সেচ ব্যবস্থার জন্যে গভীর নলকূপ রয়েছে ১১টি, অগভীর নলকূপ রয়েছে ৭৫টি, যন্ত্রচালিত পাম্পের সংখ্যা রয়েছে ৮শ’ ১৬টি, কৃষি উন্নয়ন সংস্থা রয়েছে ১১টি, সরকারি খাদ্য গুদাম রয়েছে ৬টি, খাদ্যের চাহিদা ৫৩ হাজার ৬শ’ ৩০ মেট্রিক টন। বার্ষিক উৎপাদন ৪৫ হাজার ৮শ’ ৮২ মে. টন। বার্ষিক ঘাটতি রয়েছে ৭ হাজার ৭শ’ ৭৮ মে. টন। পানীয় জলের নলকূপ রয়েছে ৪ হাজার ৩শ’ ২৪টি (জুন-২০১৪ সূত্র)। ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে ১টি, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ৩টি, কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ২২টি, পরিবার কলাণ কেন্দ্র ১১টি, এমবিবিএস চিকিৎসকের সংখ্যা ২৫ জন, পল্লী চিকিৎসকের সংখ্যা ৬শ’ ৮৪ জন। পশু চিকিৎসালয় ১টি ও পশু কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র রয়েছে ৩টি । সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ব্যাংক রয়েছে ২৩ টি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল আর ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে ৩০টি। নতুন ভাবে যুক্ত হলো অত্যাধূনিক মডেল হসপিটাল। যার অধিকাংশের চিকিৎসার মান বরাবর ভালো অবস্থানে রয়েছে। হাজীগঞ্জ উপজেলায় মাছের বার্ষিক চাহিদা ৫ লাখ ২ হাজার ১শ’ ১০ মে. টন, উৎপাদন হয় ৫ লাখ ৬ হাজার মে.টন্। ডাকাতিয়া ও বোয়ালজুরিখাল হাজীগঞ্জ উপজেলার মৎস্য ও কৃষি উৎপাদনে অসামান্য অবদান রেখে চলছে ।

শিক্ষা-ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যবস্থা :

হাজীগঞ্জ উপজেলায় কলেজ রয়েছে ৭টি, প্রাইমারী টিচার্চ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে ১টি,উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২৬টি, বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে ৪টি ও জুনিয়র বিদ্যালয় রয়েছে ১টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১৫৭ টি, নিবন্ধনকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৩৬টি,নিবন্ধনহীন প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১টি, কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ২৩ টি,মাদ্রাসা রয়েছে ২৩টি, মক্তব রয়েছে ২শ ১১টি,কমিউনিটি স্কুল রয়েছে ২০টি,গণপাঠাগার রয়েছে ১ টি, পৌর পাঠাগার রয়েছে ১টি, মসজিদ রয়েছে ৫শ’ ১৬টি, মাজার বা খানকা শরীফ রয়েছে ১৮টি, মন্দির রয়েছে ৬৫টি, উপজেলা ভূমি অফিস ১টি, পৌর ভূমি অফিস ১টি, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ৮টি। নিবন্ধনকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৮৭টি, নিবন্ধনকৃত এতিমখানা ৮টি। এ বছর নতুনভাবে যুক্ত হবে আন্তজার্তিকমানের হাজীগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুর এন্ড কলেজ।

দর্শনীয় স্থান,ব্রিজ,যাতায়ত,ব্যাংক বীমা, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও নানাবিধ কর্মসংস্থান সমূহ :

হাজীগঞ্জের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থাপনার মধ্যে রয়েছে : ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ,আলীগঞ্জস্থ হজরত মাদ্দাহ খাঁ (র.) মাজার ও মসজিদ কমপ্লেক্স, ৪শ’ বছরের পুরানো অলিপুরের শাহ সূজা মসজিদ ও বাদশাহ আলমগীরী মসজিদ. অলিপুরে ৪ অলির মাজার, নাসিরকোর্টে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল ও উপজেলা পরিষদের সামনের পুকুরে বিজয় স্তম্ভ। হাজীগঞ্জ বাজারের বড় বড় মার্কেট ছাড়াও রয়েছে মান সম্মত খাবার হোটেল গাউছিয়া হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট এন্ড চাইনিজ, নারগিস ফুড প্যাভিলিয়ন, বসুন্ধরা চাইনিজ, নিউ তৃপ্তি হোটেল, হোটেল রাজ, হোটেল প্রিন্স,আল মদিনা হোটেল এন্ড চাইনিজ মিলিয়ে প্রায় ৫০টি খাবার হোটেল, ফুড লাভারর্স, স্বপ্ন, ওয়েলকাম, চাঁদের হাট ও প্রিন্স বাজার সুপার সপ। পুরানো স্থাপনার মধ্যে রয়েছে বলাখাল চৌধুরী বাড়ি, বড়কুলের জমিদার বাড়ি, বাকিলা জমিদার বাড়ি।

গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে রয়েছে : ধেররা আবেদীয়া মুজাদ্দেদীয়া দরবার শরীফ, দেশে আগাম ঈদের প্রবক্তা সাদ্রা দরবার শরীফ, হাটিলা ইউনিয়নের লাউকরা গ্রামে ১৯৭১ সালের সবচে’ বড় যুদ্ধস্থল, চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর সদর দপ্তর,প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট, পুলিশ সার্কেল সদর দপ্তর, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদ সরণী, ধেররা ও বেলচোঁ বাজারে জেলার সেরা মাছের আড়ত, কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার, বাকিলা বাজারস্থ বিসমিল্লাহ কফি হাউজ, মনিহারের গফুর হাজীর রাস্তা,বাকিলা ত্রি-মোহনা থিম পার্ক, কাঁঠালী শিশু পার্ক, নদী বাড়ি ক্যাফে, ডাকাতিয়ার ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন বলাখাল-নাটেহরা সেতৃ, হাজীগঞ্জ সেতু, টোরাগড়-বড়কুল সেতু যা নির্মাণাধীন ও মোহাম্মদপুর স্টীল সেতু। উপজেলার অফিস পাড়া খ্যাত আলীগঞ্জে সরকারের প্রশাসনিক ২৭ কর্মকর্তার কার্যালয় ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বীমা,এনজিওসহ বিভিন্ন দপ্তর। হাজীগঞ্জে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো রয়েছে ১টি, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে ১টি, পৌর বাস টার্মিনাল রয়েছে ১টি, রেল স্টেশন রয়েছে ২টি। যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে রয়েছে ঢাকাগামী বিআরটিসি বাস, বোগদাদ,নতুনরুপে আইদি,আল আরাফাহ,পদ্মাসহ শতাধিক পরিবহন সার্ভিস ব্যবস্থা।

haji-rail

হাজীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ বাজার,উপজেলার গোড়া পত্তন :

আনুমানিক বারো’শ পঞ্চাশ শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে হাজী মকিম উদ্দিন রহ. নামে এক বুজুর্গ অলিয়ে কামেল ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে পবিত্র আরব দেশ থেকে সপরিবারে এ অঞ্চলে আগমন করেন। কুমিল্লা কোম্পানির রাস্তার উত্তর পার্শ্বে বর্তমান মসজিদের প্রথম অংশ ছিল বর্তমানে মসজিদের মাঝখানে এবং সেই হাজা মাজা ডোবা নালা পুকুর এর উত্তর-পশ্চিম কোণে তৈরি করেন তিনি আবাস ভূমি। হযরত মকিম উদ্দিন রহমাতুল্লাহ আলাইহি কততিক এলাকায় ইসলাম প্রচারের তথা আবাদ ঘটনা তার প্রতি শ্রদ্ধা জনমনে এমনিতে গভীরভাবে রাখা করেছিল যে হিন্দু প্রধান জনপ্রিত তার নাম অনুসারে মুকিমাবাদ নামে আখ্যায়িত হয় এবং গড়ে ওঠে মকিমাবাদ গ্রাম।

বর্তমানে মসজিদের পূর্ব দক্ষিণ গেটের দক্ষিণাংশে আহমদ আলী পাটোয়ারী রহ. কবরস্থানের একটু পূর্বে সীমানায় সে সময়কার মনাই হাজী একচালা একটি দোকানঘর প্রতিষ্ঠা করেন। পর্যায়ক্রমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মানুষ তখন থেকেই মনাই হাজির দোকান থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা করত। চতুর্দিকে তাঁর কথা ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আরো ধীরে ধীরে দোকানপাট করে ওঠে ও দোকান পাটের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এ ভাবেই পর্যায়ক্রমে বাজার গড়ে উঠে। কালক্রমে কলকাতার সাথে নদীপথে যোগাযোগ সম্মৃদ্ধ হয়।

হাজী মনিরুদ্দিন ওরফে মনাই হাজি এভাবে ব্যবসার সূচনার দ্বারউম্মোচন করেন এবং প্রসারিত করে করেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘ হাজীর দোকান ’ থেকে ‘ হাজীর বাজার’ হয় । বিরাট এলাকার কেন্দ্রিয় বাজার হিসেবে জনমনে পরিচিতি হতে থাকে এবং তাঁর সুখ্যাতির বদৌলতে হাজী সাহেবের দোকান ‘হাজীর দোকান’ ‘ হাজীরহাট ’ ‘হাজীর বাজার’ হতে বর্তমান এ হাজীগঞ্জ বাজারের গোড়াপত্তন হয় । বড় মসজিদ কেন্দ্রিক মুকিমাবাদ গ্রামের প্রাণকেন্দ্র এ হাজীর বাজার এলাকাটি কালক্রমে ‘ হাজীগঞ্জ ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এর নাম হয়ে যায় ‘হাজীগঞ্জ ’। হাজীগঞ্জ মসজিদ ভিত্তিক বাজার এলাকাটি হাজীগঞ্জ হিসেবে পরিচিত এবং প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে । মসজিদ কেন্দ্রিক বাজার এলাকার সাব রেজিস্ট্রি অফিস,হাজীগঞ্জ থানা,পোস্ট অফিস এবং ডাকবাংলো গড়ে ওঠে তাদের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বস্তুত:পক্ষে মসজিদ কেন্দ্রিক হাজী সাহেবের দোকানকে ঘিরে হাজীগঞ্জ নামের যে উৎপত্তি হয়েছিল সে মোতাবেক হাজীগঞ্জের জনশ্রুতিতে এভাবে বিদ্যমান হয়েছে ।

হাজীগঞ্জের আওতাযুুক্ত এলাকা বিশেষ করে কচুয়া,শাহারাস্তি এবং ফরিদগঞ্জ এলাকার অংশবিশেষকে হাজীগঞ্জ থানার অধীন এলাকায় হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে কচুয়া, ফরিদগঞ্জ ও শাহরাস্তি থানা হাজীগঞ্জ থেকে আলাদা করা হয় । এক্ষেত্রে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ধারাবাহিকতায় বেশকিছু ইউনিয়নের নাম হাজীগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত করে অন্যান্য থানাকে পর্যায়ক্রমে আলাদা থানা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয় । হাজীগঞ্জ থানা এলাকাটি পর্যায়ক্রমে হাজীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত, গঠিত ও পরিচলিত হয়ে আসছে। হাজীগঞ্জ থানা কিংবা হাজীগঞ্জ উপজেলার কথা নয়। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় হযরত মকিম উদ্দিন রহ.র স্মৃতিতে ধন্য মকিমাবাদ গ্রামের প্রাণকেন্দ্রে মনাই হাজী রহ. দোকানের সুনামে গড়ে ওঠা, মসজিদ কেন্দ্রিক বাজারে এলাকাটি যুগ যুগ ধরে ‘ হাজীগঞ্জ ’ ও ‘ হাজীগঞ্জ উপজেলা’ নামে পরিচিতি লাভ করে আসছে।

haji-thana

হাজীগঞ্জ নামকরণ ও উপসংহার :

হাজী মনিরুদ্দিন ওরফে মোনাই হাজী রহমাতুল্লাহ আলাইহি ’র দোকানের বদৌলতে ও সুখ্যাতিতে ‘হাজী সাহেবের দোকান’। ‘হাজীর দোকান থেকে হাজীর হাট’ ‘হাজীর হাট থেকে হাজীর বাজার ’ হাজীর বাজার থেকে কালের পরিক্রমায় নামকরণ হয় আজকের ‘ হাজীগঞ্জ ’। ১৮১৮ সালে বৃটিশ সরকারের সময় ‘হাজীগঞ্জ ’ নামেই থানা স্থাপিত হয় ্। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কি.মি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কি.মি রেললাইন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। লাকসাম-চাঁদপুর লাইনের স্টেশন হিসেবে ‘ হাজীগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন ’ তৈরি করা হয় এবং মাইল স্টোনে নামকরণ হয় ‘হাজীগঞ্জ ’।

১৫ এপ্রিল ১৯৮৩ খ্রিষ্টা্েব্দ ‘ হাজীগঞ্জ উপজেলা ’ হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সম্প্রসারিত হয়ে পৌরসভার নামকরণ হয় ‘ হাজীগঞ্জ ’ পৌরসভা। হাজীগঞ্জের ‘ব্যান্ড’ নামে খ্যাত হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের কারণেও হাজীগঞ্জ ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ,শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য,ধর্মকর্ম,যাতায়ত-যোগাযোগ,রেলপথ,সড়ক পথ, রাজনীতি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,নতুন নতুন অবকাঠামো, সরকারি-বেসরকারি অফিস-মার্কেট, রেস্তোরা,ব্যাংক-বীমা,শপিংমল-হাসপাতাল,নানামুখি ছোট ছোট ব্যবস্া প্রতিষ্ঠান,শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, কৃষি ও মৎস্য প্রভৃতির উন্নয়ন বেড়েই চলছে দিন দিন।

তথ্য সূত্র : অধ্যক্ষ ড.মো.আলমগীর কবির পাটওয়ারীর রচিত আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.ওয়াকফ এস্টেট এবং হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স এর ‘ স্মারক গ্রন্থ ’এবং উপজেলা ও পৌরসভার নিজস্ব ওয়েবসাইড থেকে সংকলিত তথ্য। সম্পাদনায়-সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ এর ভার-প্রাপ্ত সম্পাদক আবদুল গনি । পর্ব-২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫,চাঁদপুর ।

আবদুল গনি
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
এজি