জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সেচ সমস্যা সমাধান করতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়াকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি, মৎস্য, বিএডিসি এবং উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের সমন্বয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার জলাবদ্ধতা এবং সেচ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঋণ গ্রহণকারী কৃষকরা কিস্তির ভয়ে বাড়িতে ঘুমাতে পারেন না। কোন কোন খালে এখনো জুতা পায়ে হাঁটা যাবে। খালে পানি না থাকায় কোন কোন অঞ্চলে এখনো চাষাবাদ শুরু করা যায়নি। ফসলি জমি কেটে মাছের ঘের তৈরী করায় ফসলি মাঠ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খাল খননে টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সর্বস্তরে যে অব্যববস্থাপনা তা ভবিষ্যতে চলতে পারে না। যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে খননকৃত খালের মাটি বিক্রি করা হয়েছে বলে সভায় অভিযোগ করেন কৃষকরা। এ সময় তারা ঋণ মুক্তি, সময় মত সার বীজ সহ আনুষঙ্গিক কৃষি উপকরণ প্রাপ্তি, ড্রেন-কালভার্ট সংস্কার, কচুরীপানা অপসারণ, জলমহাল ইজারা বন্ধকরণ, জানুয়ারীর শেষ নয় বরং ডিসেম্বরের শুরুতেই সেচের ব্যবস্থা চালু করা, যেখানে আধুনিক খনন পদ্ধতি প্রযোজ্য নয় সেখানে ম্যানুয়ালি খনন কার্যক্রম পরিচালনা করা, ইনলেট আউটলেট বৃদ্ধি করা এবং স্লুইস গেটের কর্মদক্ষতা উন্নয়নের দাবী জানান সংগ্রাম কমিটি ও কৃষকবৃন্দ।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়ার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “খালের মালিক সরকার। ম্যানেজমেন্ট করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খালগুলো দখল, ভরাট, সরু করেছে কারা? তাদের গাফলতি আছে কিনা? জলমহালে বাঁধ দিয়েছে কারা? আপনার বাড়ির পাশের কচুরীপানা অপসারণে আপনার দায়িত্ব নেই? সবার গাফলতি আছে। একা কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। আমরা সবাই মিলেই দোষী। কৃষকের চাওয়া সমস্যা সমাধান। নেপথ্য কাজগুলো করতে হবে আমাদের। অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।”
এ সময় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কর্ম পরিকল্পনা দিবেন। সরকারের বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্লুইস গেটের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যে কাজ আপনাদের দ্বারা সম্ভব তা আপনারা সম্পন্ন করুন। যেটা আমার করণীয় আমি অবশ্যই তা করবো। কাজ করতে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। খননকৃত খালের মাটি ইট ভাটায় বিক্রি হয়েছে এমন যাতে না শুনি। এটা খালের দুই পাড়ে থাকবে।”
জলমহাল ইজারার বিষয়ে তিনি বলেন, “নদীতে বাঁধ দেওয়াতো দূরের কথা, নদীতে বাঁশের চাটাইও ব্যবহার করা যাবে না। নদী উন্মুক্ত থাকবে। পোষালে ইজারা নেবে, না হয় নাই। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নিয়ে নদীতে যতগুলো বাঁধ আছে সব কেটে দিবেন। কেউ ইজারা শর্ত ভঙ্গ করলে তার ইজারা বাতিল করা হবে।”
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম। এসম তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতিতে হয়নি মন্তব্য করে তিনি সভায় কৃষকদের তোপের মুখে পড়েন। তিনি তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, “ব্যর্থতা যা আছে সেটা অবশ্যই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। জনবল সংকট এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বিশাল সেচ প্রকল্পের যথাযথ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন হচ্ছে। এখানকার জলাবদ্ধতা ভৌগোলিক কারণেই একেবারে নিরসন হবে না। খাল খননের পাশাপাশি ক্রস বাঁধ সনাক্তরণ এবং অপসারনে কাজ করতে হবে। প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোকে উন্মুক্ত করতে হবে। ডিপিপি অনুমোদন হলে আমরা বড় পরিসরে খনন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো। স্লুইস গেটের কর্মদক্ষতা উন্নয়নে সরকারের কাছে ২০১৯ সালে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি এখনো যাচাই বাছাই পর্যায়ে আছে। নদী ও খালের উপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে শীঘ্রই দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাবেন। জলাবদ্ধতাকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।”
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের উপ-পরিচালক আবু তাহের, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান, চাঁদপুর বিএডিসি’র (সেচ) সহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, ডাকাতিয়া নদী ও খাল খনন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন দুলাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ফরিদগঞ্জ পৌর প্রশাসক এ.আর.এম জাহিদ হাসান, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরনবী নোমান, সাধারন সম্পাদক নুরুল ইসলাম ফরহাদ, সিনিয়ার সাংবাদিক মহিউদ্দিন প্রমুখ।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, কৃষক এবং ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকগণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫