প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণার বিষয়ে জনগণের মধ্যে নানান সন্দেহ দানা বাধঁছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক মোহাম্মদ আমিনুল হক। এর মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা, এটি কাদের স্বার্থে, অন্য কোনো চিন্তা আছে নাকি তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ঈদের তৃতীয় দিন সোমবার (৯ জুন) বিকেলে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ইমামপুর পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের মেগা ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেছেন, বিএনপিরসহ সব রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলে নয়, বরং ডিসেম্বরেই হওয়া উচিত বলে মতামত দিয়েছে। দেশের জনগণও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। বাংলাদেশের জনগণ উৎসবমূখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ দেখতে চায়। জনগণ তারা দ্রুত ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বিগত ১৭টি বছর যাবত তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তারা পচ্ছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
আমিনুল হক বলেন, ‘যে নির্বাচনের মাধ্যমে এ দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই জনগণের সরকারই পারবে একমাত্র পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার, শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার এবং আওয়ামী প্রেতাত্মাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক বলেন, যে সময়টি (এপ্রিল মাস) নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য সঠিক সময় নয়। এ সময়ে প্রচন্ড গরম, ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এছাড়া, এপ্রিল মাস রোজার পরপরই এবং পাবলিক পরীক্ষার কারণেও অনুপযোগী।
তাছাড়া রোজার মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো কঠিন হবে। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরই নির্বাচন হওয়া সম্ভব এবং সেটাই জাতির জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে। এই মুহূর্তে দেশের সংকট নিরসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিকল্প কিছু নেই। দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসলেই দেশের সংকট পুরোপুরি কেটে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্পষ্ট দাবী চলতি বছরের ডিসেম্বর মধ্যেই সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন পিছানোর কোন সুযোগ নেই। নির্বাচন নিয়ে কোন টালবাহানা জনগণ মেনে নিবে না। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচার কর্তৃক শেখ হাসিনার বিগত ১৭টি বছর ছিলো গুম, খুন,হত্যা,হামলা,মামলা,নির্যাতন আর জুলুমের সময়কাল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে তার পতন হয়েছে। এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলেন পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ গোষ্ঠী। এরই প্রতিবাদে জনগণের স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায়। তারই ফলশ্রুতিতে জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের মধ্যে বাংলার মানুষ পূণরায় স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। তার পরেও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তবে দেশের জনগণ আর এই ফ্যাসিস্ট পতিত স্বেরাচার শেখ হাসিনার দুঃসাশনে ফিরে যেতে চায়না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীতে দেশবিরোধী যে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে প্রস্তÍুত রয়েছে বিএনপি।
আমিনুল হক বলেন, ‘শহীদ প্র্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু সংস্কার করেছিলেন। আজকে যে সংস্কার সেটা হচ্ছে, স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয় ও রাজনীতিকরণ করার কারণে। জিয়াউর রহমান সেই সময়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে সংস্কারের ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯ দফার কর্মসূচি দিয়েছিলেন। আজকের রাজনৈতিক কঠিন সময়ে আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখার কর্মপরিকল্পনা দিয়েছেন। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশের মানুষ তার পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার ফিরে পাবে।’ ‘আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে, তিনি যেভাবে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছেন আমরাও ঠিক একইভাবে এই দেশের মানুষের পাশে থেকে এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’
ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর ঢাকা মহানগর উত্তর এর সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের সভাপতিত্বে ও শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার উদ্বোধক ছিলেন এবং সন্ধ্যায় খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন ও রার্নাসআপ দলের খেলোয়াড়দের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মোঃ আতাউর রহমান ঢালী।
টুর্নামেন্টের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন, বাংলাদেশ কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম সরকার।
এতে আরো বক্তব্য বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য আলহাজ্ব ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন,ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বশির আহমেদ খান, সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জিতু, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি আজহারুল ইসলাম মুকুল, টুর্নামেন্ট এর আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও মতলব উত্তর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু নাছের শ্যামল, সদস্য সচিব সজিব সরকার, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জাকির হোসেন, প্রমূখ।
এসময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ইব্রাহিম খলিল,ছেংগারচর পৌর বিএনপির সভাপতি মোঃ নান্নু মিয়া প্রধান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর প্রধান, বৃহত্তর মতলব ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মেজবাহ উদ্দিন মেজু,ষাটনল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গুলজার আলম দেওয়ান, মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকিয়া মঞ্জুর আমিন স্বপন, ছেংগারচর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক আশেক মাহমুদ সংগ্রাম, মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম জসিম, মতলব উত্তর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মোঃ শাহজালাল প্রধান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক সদস্য সচিব শাহ আলম ভুইয়া, জামাল উদ্দিন,উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম সরকার, সমাজ সেবক ছমির আলী মেম্বার, ভিপি মফিজ, লিয়াকত আলী চৌধুরী (খুক)ু, সজিব আহম্মেদ রুম্মন, মোয়াজ্জেম হোসেন ঢালী, আঃ সাত্তার,এখলাছপুর ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুল মুন্না ঢালী, উপজেলা বিএনপির সহ-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক তৌফিক আজিম মিশু, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক মাহাবুব হাসান পনির শিকদার, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক নুরুল হুদা ফয়েজী, ছেংগারচর পৌর যুবদলের সদস্য সচিব আশরাফুল আলম সরকার, ছেংগারচর পৌর ছাত্রদলের সভাপতি সাকিল খান, কলাকান্দা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসানসহ বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
টুর্নামেন্টের সার্বিক ব্যবস্থাপনাকারী বাংলাদেশ কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম সরকার বলেন, বিগত ১৭টি বছর দেশের ফুটবল পতিত স্বেরাচার আইসিইউতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখান থেকে ফুটবলকে বের করতেই আমার প্রিয় প্রয়াত নেতা স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার উর রহমানের স্মরণে এই উদ্যোগ। কারণ ফুটবলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের ফুটবলকে আবারও পুনর্জাগরণ করতে চাই।
তিনি আরও বলেন,এমনিতেই বর্তমানে যুবসমাজ মাদকাশক্ত হয়ে যুবসমাজ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। তরুণ সমাজ ধবংস হয়ে যাচ্ছে। খেলাধুলা যুবসমাজকে মাদক ও খারাপ কাজগুলো থেকে বিরত রাখে। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের আয়োজন সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে। উৎসবমুখর এই ম্যাচে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। দুই দলই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে, ফলে ম্যাচের উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। যার কারণেই খেলাটি নির্ধারিত সময় শেষে খেলার ফলাফল ড্র থাকে। এ ধরনের আয়োজন নিয়মিত হওয়া উচিত। এটি তরুণদের মাদক ও অপসংস্কৃতি থেকে দূরে রাখবে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখবে। খেলাধুলা কেবল বিনোদন নয়, এটি সমাজে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক অনন্য মাধ্যম। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম এ ধারা ধরে রাখুক।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করে ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এবং নিয়মিতভাবে এ ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা করবো।
উল্লেখ্য মতলব উত্তর উপজেলার ইমামপুর পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের মেগা ফাইনাল ম্যাচে অংশ নেয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল ষাটনল ইউনিয়নের কালিপুর হিলফুল ফুজুল একাদশ বনাম ইমামপুর একাদশ। নির্ধারিত সময়ে ঊভয় দল ১-১ গোলে ড্র থাকায় ড্রাইবেকারে খেলাটি নিস্পত্তি হয়। ড্রাইবেকারে ইমামপুর একাদশ ৫-৪ গোলে কালিপুর হিলফুল ফুজুল একাদশকে পরাজিত করে ইমামপুর একাদশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এ ফাইনাল খেলাটি উপভোগ করার জন্য উপজেলা ও ছেংগারচর পৌরসভার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে কয়েক সহ¯্রাধিক দর্শক উপস্থিত ছিলো। খেলা দেখতে দুপুর থেকেই আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ আসতে থাকে। খেলা শুরুর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠ। দর্শকের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে অনেকে আশপাশের ভবনের ছাদ, দেয়াল ও গাছের ডালে বসে খেলা উপভোগ করেন। মাঠে চতুরদিকের গ্যালারি একেবারে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। যা এলাকার মানুষকে একত্র করে আনন্দঘন এক মিলনমেলায় পরিণত করে। মাঠের উচ্ছ্বাস, ক্রীড়ামোদী দর্শকদের করতালি আর খেলোয়াড়দের মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্সে ঈদের আমেজ যেন আরো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নির্ধারিত সময় শেষে খেলার ফলাফল ড্র হলে ট্রাইবেকারের মাধ্যমে বিজয়ী দল নির্ধারণ করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১০ জুন ২০২৫