Home / বিনোদন / মসজিদের পাশে কবর চাই : কনকচাঁপা
সুন্দর কণ্ঠ রয়েছে আমাদের দেশে : ন্যান্সি

মসজিদের পাশে কবর চাই : কনকচাঁপা

জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কনক চাঁপা বলেছেন, ‘এ বছর আমি উনপঞ্চাশ এ পা রাখবো। কর্মহীন দীর্ঘজীবন আমার খুবই অপছন্দ। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে চাই, সুরের সাথে ন্যায়ের সাথে ভালো কাজের সাথেই থাকতে চাই। আরো ভালো কিছু কাজ করতে চাই। এই আমার বড় ইচ্ছা। মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে যেতে চাই না একদমই। এটাও আমার বড় ইচ্ছা, মসজিদের পাশে কবর চাই এটাও আরেকটি সুপ্ত ইচ্ছা।’

জন্মদিন উপলক্ষে আজ তিনি তার ফেসবুক পেজে এসব কথা লিখেন। কনক চাঁপা লিখেন, ‘প্রতিটি কর্মদিবসই আমার জন্মদিন। কাজের মাঝেই এবং কাজের জন্যই আমার জন্ম। আমি একজন আপাদমস্তক কণ্ঠশ্রমিক।’

তিনি লিখেন, ‘জন্মদিন! সবাই একটা নির্দিষ্ট তারিখে জন্ম নেয়।কারো বাবামা সে তারিখ মনে রাখে, কারো বাবামা জন্ম দিয়ে বাচ্চা লালন করার তাগিদে সেই তারিখ ভুলে যান। আমি সৌভাগ্যবান কারণ আমার বাবা সে তারিখটি সযত্নে নিজ ডায়েরির পাতায় লিপিবদ্ধ করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সেই তারিখে কেক কেটে মোম জ্বালিয়ে স্বজনদের দাওয়াত করে উৎসব পালনের রেয়াজ আমাদের পরিবারে ছিলনা। যখন কিশোরী হয়ে উঠছিলাম তখন দুয়েক বছর বান্ধবী দের ডেকে মা পায়েস চানাচুর কেক নুডলস কলা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন বটে। এর পরই বিয়ে হয়ে গেলো সেই কিশোরী থাকতেই। স্বামী একজন মিউজিক ডিরেক্টর। বলা যায় দুজনই বেকার। গান গাওয়ার জন্য বিটিভি, বাংলাদেশ বেতারে যাওয়ার রিক্সা ভাড়া জোটানোও ভয়াবহ কঠিন কাজ ছিল!’

তিনি লিখেন, ‘জীবন বাঁচাতে জীবিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে এই কিশোরী তখন দুবাচ্চার মা। তবুও গান গেয়ে যেভাবে মানুষের মনে নিজ পরিচয় নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম তাতে এখনকার যুগ হলে স্টার হয়ে যেতাম। ইউটিউব এ ভিউ কোটির ঘর ছাড়িয়ে যেতো কিন্তু কখনোই বুঝতে সক্ষম হইনি যে আমার গান মানুষ শোনে বা আমি জনপ্রিয় কেউ! চুরাশি সালে পয়লা ছবির গান গাইলেও নব্বই দশকে ছবির গান গাওয়া নিয়মিত হল। তখন থেকেই জীবন আর আমার হাতে রইলো না।এবং জন্মদিন ভুলেই গেলাম। কত জন্মদিন মঞ্চে রেকর্ডিং স্টুডিওতে পার করেছি ইয়ত্তা নেই। কেউ জানতোও না মাইক্রোফোন এ দাঁড়ানো কণ্ঠশ্রমিকের আজ জন্মদিন।’

কনক চাঁপা লিখেন, ‘যাদের আন্ডারে অর্থাৎ যে মিউজিক ডিরেক্টর দের সুরে গান গাইতে সারাদিন সারামাস স্টুডিওতে কাটিয়েছি, অথবা এফডিসির কেউ, তাঁরাও বলতে পারবেন না আমার জন্মদিন কবে। কখনো কোন পেপার পত্রিকার কাছ থেকে শুভেচ্ছা শুভকামনা পাইনি। ঘরের মানুষ ও প্রায় বছরই ভুলে গেছেন একথা। ভুলে যাওয়াটা নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই হয়েছে। কত জন্মদিন ফ্লাইট এ কাটিয়েছি, ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী বলে ফ্লাইটের তরফ থেকেও সে শুভাশিস পাইনি। ছেলেমেয়ে মেয়ে জামাই, আমার অনলাইন স্কুলের সন্তান সম ছাত্রছাত্রীরা, তারা যদিও জন্মদিন পালন করে এখন খুব আগ্রহভরে। কিন্তু এখন আর এইসব সেভাবে আমাকে টানে না।’

তিনি আরও লিখেন, ‘যে মহামানব হযরত মুহাম্মাদ সঃএর জন্য এই পৃথিবীর জন্ম তাঁর জন্মদিন মৃত্যু দিবস পালন যেখানে নিয়ম নাই সেখানে আর কারো জন্মদিবস পালন অর্থহীন। যদিও সেপ্টেম্বর মাস এবং এগারো সংখ্যা আমার খুবই প্রিয়। হাজার হলেও আমি মানুষ, নিজেকে ভালবাসি, তাই হয়তো এর বাইরে যাওয়ার সাধ্য আমার নাই।তবে আমি কখনোই আমার জন্মদিন এবং মৃত্যু দিন পালন করা হোক এ আমি চাই না।’

তিনি লিখেন, ‘সত্যিকার অর্থেই জন্মদিন এর প্রতি আলাদা কোন দুর্বলতা আমার নেই একথা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই।আর আমি কোন সেলিব্রিটি বা তারকা নই যে আমার জন্মতারিখ কাউকে মনে রাখতে হবে।বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের উন্নতি করার জন্য আমি গান গাইনি, আমি গান গেয়েছি নিজের জীবিকার তাগিদে তাই দেশের মানুষের কাছে সুশীল সমাজের কাছে, সরকারের কাছে আমার কোনই চাওয়া নেই, আক্ষরিক অর্থেই এক ফোঁটাও চাওয়া পাওয়া নেই।জন্মদিন তো দুরের কথা।’

বিনোদন ডেস্ক

Leave a Reply