মিয়ানমারের ক্যায়ান গোত্রের নারীদের ঐতিহ্যে মর্যাদার প্রতীক লম্বা গলা। তারা ‘জিরাফ’ নারী হিসেবে পরিচিত। ইউক্রেনের ফটোগ্রাফার ডিমাইট্রো গিলিটাকা সম্প্রতি এমন কিছু ক্যায়ান নারীদের ছবি তার ক্যামেরায় ধারণ করেছেন।
ছবিগুলোতে পূর্ব বার্মার দীর্ঘ গলা নারীদের জীবন এবং সংস্কৃতির একটি ঘনিষ্ঠ ছবি ফুটে উঠেছে।
বার্মার ক্যায়াহ্ রাজ্যের ক্যায়ান নারীরা তাদের গলায় ভারি পিতল রিং পরে থাকে যাতে তাদের গলা লম্বা দেখায়, তাদের সংস্কৃতিতে লম্বা গলা সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। ঠিক এ কারণেই তারা ‘জিরাফ`’ নারী হিসেবে পরিচিত।
তাদের গলায় যখন পিতলের রিং প্যাচানো হয় তখন তাদের গলা অনেক লম্বাটে বলে মনে হয়। বাস্তবিক অর্থে, রিং এর ওজন গর্দানের চারপারের পেশীকে নিচের দিকে চাপ দেয়, যার অর্থ হলো তখন তাদের গলাকে স্বাভাবিকের তুলনায় লম্বা দেখায়।
ক্যায়াহ্ রাজ্যে আগে বাইরের দেশের লোকদের প্রবেশাধিকার বন্ধ ছিল, ২০১৪ সাল থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয়। এবং ইউক্রেনের ফটোগ্রাফার ডিমাইট্রো গিলিটাকার এই অসাধারণ ফটো সিরিজের শটগুলো ২০১৬ সালের ২৫ মে তে নেয়া, যেখানে ক্যায়ান নারীদের প্রতিদিনের জীবনে ঘনিষ্ট কিছু বিষয় খুব কাছ থেকে তুলে এনেছেন তিনি।
২৮ বছর বয়সী ইউক্রেনের এই ফটোগ্রাফারের মতানুযায়ী এই ছবিগুলো তোলার সময় তিনি বিশ্বের অবিশ্বাস্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি এবং সৌন্দর্য অবলোকন করেছেন।
ডিমাইট্রো বলেন, ‘উপজাতি নারীরা ছোটবেলা থেকেই তাদের গলদেশে পিতল রিং এর একটি কুণ্ডলী পরেন। গলার এই রিংটি খুব ভারী হয়, যার কারণে তাদের গলার হাড় এবং পাঁজরের আকৃতির বিকৃতি শুরু হয়।’
‘এটা একটি লম্বাটে গলার একটি অপটিক্যাল বিভ্রম ফুটিয়ে তুলে। কিছু মানুষ মনে করে যে, রিং না পরলে তাদের ঘাড় ভেঙে যাবে, যা আদৌ সত্য নয়। আমরা দেখেছিলাম যে, এক নারী তার রিং সরিয়ে ফেলেছিলেন এবং তিনি ভালো অনুভব করেছিলেন। তিন সপ্তাহ পর তার গলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গিয়েছিল।’
কেন নারীরা গলায় রিং পরে তা নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ আছে। তবে প্রধান কারণ হলো অন্য সংখ্যালঘুদের থেকে নিজেদের আলাদা রাখা। তাদের দৃষ্টিতে এটি সৌন্দর্য এবং সামাজিক মর্যাদার প্রতীক।’
‘আর আমাদের পথপ্রদর্শক (গাইড) বলেন, বিষয়টা এমনো হতে পারে যে, অতীতে বন্য বাঘ থেকে প্রতিরক্ষামূলক ভূমিকা ছিল ঘাড়ের রিং এর। নারী বাড়ীতে রয়ে যায় যখন পুরুষেরা বনে শিকারে যায় এবং কখনো কখনো বন্য প্রাণী গ্রামে এসে মানুষদের ওপর হামলা করে।’
‘তাই যদি একটি বাঘ একটি মহিলার বা সন্তানের ঘাড় কামড়ায়ও তারা বেঁচে থাকতে পারে রিং এর কারণে। আজকাল কেউই বাস্তব কারণটি স্মরণ করতে পারে না। কিন্তু মানুষ এখনো গ্রামের ঐতিহ্যই অনুসরণ করে।’
‘এটা দেখতে আশ্চর্যজনক। কারণ এটি এখন বিরল যে, একটি উপজাতি তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে। অধিকাংশ জায়গায় এখন আধুনিক সৌন্দর্য স্থান করে নিয়েছে কিন্তু ক্যায়ান নারীদের ক্ষেত্রে তা এখনো সম্ভব হয়নি।’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : :আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৫:০০ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শুক্রবর
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur