Home / বিশেষ সংবাদ / ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম
Nazrul--..

ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের (১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন নিপীড়িত মানবতার কবি। সারা জীবন তিনি সমাজের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে কলম ধরেছেন। তিনি নির্ভীকচিত্তে কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে ক্ষুরধার রচনা অব্যাহত রেখেছেন।

এ বছর এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে, যখন দেশে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার রাজনৈতিক দলগুলো। আর নির্বাচনের এই আলোচনার মধ্যেই আরেকটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক। সেটি হলো, বাংলাদেশের জাতীয় কবি ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম একবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। ভোট চাইতে ঘুরে বেরিয়েছিন দ্বারে দ্বারে।

১৯২৬ সালের কথা। ওই বছরের শেষ দিকে “ভারতীয় কেন্দ্রীয় আইনসভা” নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কাজী নজরুল ইসলাম তখন সারা বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয় কবি। ঢাকা বিভাগ থেকে আইনসভায় দুজন মুসলিম প্রতিনিধির কোটা ছিল। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থিত স্বরাজ দলের প্রার্থী হন কাজী নজরুল ইসলাম।

বর্তমান ঢাকা, ফরিদপুর, বাকেরগঞ্জ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ নিয়ে গঠিত একটি আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

কবির ধারণা ছিল, বাংলার মানুষ যেভাবে তাকে ও তার কবিতাকে যেভাবে ভালোবাসে, তাতে নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।

ফরিদপুরের এক জনসভায় কবি জসীমউদ্​দীনকে তিনি বলেছিলেন,“জসীম, তুমি ভেবো না। নিশ্চয়ই সবাই আমাকে ভোট দেবে। ঢাকায় আমি শতকরা ৯৯টি ভোট পাব। তোমাদের ফরিদপুরের ভোট যদি কিছু পাই, তাহলেই কেল্লাফতে।”

কিন্তু ভোটের মাঠে নেমেই বদলে যেতে থাকে কবির অভিজ্ঞতা। কারণ, রাজনীতি আর ভোটের হিসাব তো ভিন্ন। কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই খরচ নিয়ে বিপাকে পড়েন বিদ্রোহী কবি। নির্বাচন করতে কেমন টাকা লাগে, সে ব্যাপারে তার কোনো ধারণা ছিল না। পার্টির পক্ষ থেকে তাকে ৩০০ টাকা দেয়া হয়েছিল। এর বাইরে তেমন কোনো বাজেট ছিল না তার। তাই নির্বাচনে তার পক্ষে প্রচারণায় লোক কম দেখা যায়।

প্রচারণার জন্য ঢাকার বেচারাম দেউড়ির ৫২ নম্বর বাড়িতে পীর সৈয়দ শাহ মোহাম্মদ ইউসুফ কাদেরীর আস্তানায় বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন নজরুল। ফরিদপুরেও মাঠপর্যায়ে কাজ করেছিলেন কয়েক দিন। কিন্তু বাজেট–স্বল্পতায় নির্বাচনি এলাকার সবখানে যেতে পারেননি।

ফরিদপুরের এক পীরের কাছ থেকে একটা ফতোয়া লিখেও নিয়ে এসেছিলেন কবি, যাতে লেখা ছিল, সবাই যেন তাকে ভোট দেয়। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভোটের মাঠে ভরাডুবি ঘটে বিদ্রোহী কবির।

সে সময়ে শুধু সম্পত্তির ভিত্তিতে ভোটার হওয়ার নিয়ম থাকায় বিরাট এলাকা নিয়ে গঠিত আসনে ভোটার ছিল ১৮,১১৬ জন। ফলাফলে দেখা যায়, মাত্র ১ হাজার ৬২টি ভোট পেয়ে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হন তিনি। সে সময় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল।

সূত্র: গোলাম মুরশিদের লেখা নজরুল–জীবনী বিদ্রোহী রণক্লান্ত ও জসীমউদ্‌দীনের লেখা জীবনকথা।

২৬ মে ২০২৫
এজি