আবদুল গনি
চাঁদপুর জেলার ২ হাজার ৫শ ১৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইচপিভি টিকাদান ১ লাখ ৫১ হাজার ৯ শ ৩৬ জন কিশোরীকে জরায়ুমুখ ক্যান্সার (এইচপিভি) প্রতিরোধেক টিকা প্রদান করা হয়েছে। জানা যায়, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের ৫ম শ্রেণি থেকে ১০ ম শ্রেণি পর্যন্ত সকল ছাত্রীদের প্রদান করার কর্মসূচি নিয়েছিল জেলার স্বাস্থ্যবিভাগ। এদের বয়স ১০ -১৪ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছাত্রী। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কিশোরীর সংখ্যা ১ হাজার ৮শ ৯৪ জন ছিল । জেলায় টিকা কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানরে হচ্ছে ২ হাজার ৫ শ ১৯টি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে কমিউনিটি টিকা কেন্দ্রে ২ হাজার ৪শ ২৪টি। এসব টিকা কেন্দ্রে ৬শ ৬জন দক্ষ টিকা প্রদানকারী টিকা প্রদান করার দায়িত্ব পালন করেন। এসব কাজে ২ হাজার ৪শ ১৮ জন স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাদেরকে সরাসরি তদারকি করেন ৩শ ৩জন কর্মকর্তা।
এদিকে হাজীগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার ৯৬% শিক্ষার্থীকে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫টি মাধ্যমিক ও ১৫৭ টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের ১৪ হাজার ২শ জন ১০-১৪ বছর বয়সী অধ্যয়নরতদের এ টিকা প্রদান করা হয়। যা লক্ষ্য মাত্রার ৯৬ ভাগ। সারাদেশের ন্যায় হাজীগঞ্জেও ২৪ অক্টোবর-২৪ নভেম্বর পর্যন্ত (শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিন বাদে ১৮ কর্মদিবস) এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়েছে। প্রথম ৮দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং এরপর বাকি ১০ দিন গ্রামাঞ্চের টিকাকেন্দ্রে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়েছে । হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেস্কের দায়িত্বরত ডা. তানভীর হোসাইন ৫ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য জানান।
চাঁদপুর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য জানা গেছে । ‘
২৩ অক্টোবর তৎকালীন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুর আলম দীন। এইচপিভি টিকার বিভিন্ন দিক ও গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের (এমওসিএস) ডা. মো.শাখাওয়াত হোসেন। ‘চাঁদপুর জেলায় অদ্য পর্যন্ত ওয়েব সাইট এবং অ্যাপসের মাধ্যমে ৩৩ হাজার টিকা গ্রহণের নিবন্ধ সম্পন্ন হয়েছে। জেলায় এ টিকার উপযোগী সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৯ শ ৩৬ জন। এর মধ্যে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি সমমান কিশোরী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৪২ জন। ১০-১৪ বছর বয়সী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত কিশোরীর সংখ্যা ১ হাজার ৮শ ৯৪ জন।’
সিভিল সার্জন ডা.মোহাম্মদ নুর আলম দীন বলেন .‘ কাজটি করার আমাদেরকে সবচাইতে বেশি সহযোগিতা করেছেন শিক্ষকরা। এ ধরনের টিকা আমাদের দেশে এ প্রথম। পরবর্তীতে পঞ্চম শ্রেণি অথবা ১০ বছর হলেই এইচপিভি টিকার আওতায় আসবে। এ টিকা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা এখনো কম। তাই সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের ভূমিকা বেশি প্রয়োজন।’ সভায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমনসহ প্রায় ৩০জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
চাঁদপুর জেলায় ২৪ অক্টোবর থেকে স্কুল পর্যায়ে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে কিশোরীদের এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চাঁদপুর মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এইচপিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনের শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। এ উপলক্ষে সিভিল সার্জন কার্যালয়, চাঁদপুর আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম এবং সভাপ্রধানের বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নূর আলম দীন। সভায় বক্তারা বলেন, ‘ জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্যে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা বিশ্বব্যাপি পরীক্ষিত, নিরাপদ ও কার্যকর।
এ টিকা জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এক ডোজ এইচপিভি টিকা প্রদানের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। চাঁদপুর জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে জেলা পর্যায়ে “এইচপিভি টিকাদান কার্যক্রম ২০২৪” সম্পর্কে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২ অক্টোবর সকালে চাঁদপুর স্কাউটস ভবন হলরুমে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থী ও স্কাউটসদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,‘ যারা এখানে এসেছো তোমরা তোমাদের বন্ধুদের আজকের এইসব জানা তথ্যগুলো বলবে। আশাকরি এখান থেকেই হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা তোমাদের কাছ থেকে জানবে এবং এই রোগ সম্পর্কে সচেতন হবে। শুধ চাঁদপুরেই নয় পুরো বাংলাদেশে এ সচেতনতা ছড়িয়ে পারবে। প্রানঘাতি ক্যান্সারে আমরা কারো অকাল মৃত্যু চাই না।’
এডিসি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ শিক্ষকদেরও অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে। আপনাদের অনুরোধ করবো যা আপনারা এখান থেকে জেনেছেন তা আপনাদের শিক্ষার্থীদেরকে উদ্ধুদ্ধ করবেন এবং সচেতন করবেন।’ বাংলাদেশ স্কাউটস চাঁদপুর জেলা শাখার কমিশনার শামসুল আমিনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মো. ইউসুফ, বাংলাদেশ স্কাউটস চাঁদপুর জেলা শাখার সম্পাদক অজয় ভৌমিক, সহকারী পরিচালক পূরবী সরকার শম্পা, দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি শাহরিয়া পলাশ প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য ও এইচপিভি টিকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন জেলা তথ্য অফিসের তথ্য কর্মকর্তা তপন বেপারী। সঞ্চালনার দায়িত্ব করেন জেলা তথ্য অফিসের ঘোষক মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার ও গীতা পাঠ করেন সম্প্রীতি চক্রবর্তী। সরকার সাতটি বিভাগে ১০ -১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের জরায়ু ক্যানসারের বিরুদ্ধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস টিকা কার্যক্রম শুরু করে। ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ টিকাদান কর্মসূচি চলে ১৮ দিন।
১৭ ডিজিটের জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে টিকার জন্য নিবন্ধন করা হয় । সব বিভাগের সব জেলা, উপজেলা,সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ১০- ১৪ বছর বয়সী কিশোরী এ টিকা নিতে পারবে। এ সাতটি বিভাগে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন কিশোরীকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য হাতে নিয়েছে সরকার। সভায় জানানো হয়,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইপিআই কেন্দ্রে এ টিকা পাওয়া যাবে। সেখান থেকে পঞ্চম থেকে নবম বা সমতুল্য শ্রেণির কিশোরীরা টিকা পাবে। যারা স্কুলে ভর্তি হয়নি এবং বয়সসীমার মধ্যে পড়ে, তারাও ইপিআই সেন্টার থেকে টিকা নিতে পারবে।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
এজি