প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা নদীর পাড় এখন ঈদ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মুখরিত। পবিত্র ঈদুল আযহার এবার লম্বা ছুটিতে পর্যটকরা এখন মতলবের মেঘনা পাড়ে।
বেশিরভাগ এসেছেন সপরিবারে। অনেকে আবার বন্ধু-বান্ধব নিয়ে দল বেঁধে। তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর,এখলাছপুর,আমিরাবাদ এবং ষাটনল মেঘনা পাড়েরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদ উপলক্ষে ঈদৈও দিন থেকে অঅজ পর্যন্ত টানা ছয় দিন ধরে এখলাছপুর, মোহনপুর, আমিরাবাদ ও ষাটনল পর্যটন এলাকায় নদীর তীরে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এলাকার বাসিন্দারা ‘মিনি কক্সবাজার’ নামেই এই স্থানটিকে ডাকতে শুরু করেছেন।
দেখছেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যগুলো দেখতে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যটকের প্রাণখোলা হাসি-আনন্দে মাতোয়ারা। অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নদীর চরগুলোতে । প্রতিবছরই ঈদ আনন্দে মেতে উঠে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলাবাসী। আর ঈদের এ আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে মতলবের মেঘনা নদীর মোহনায় বিনোদন প্রেমি দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। বরং এবার পর্যটকদের ভীড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
প্রতি বছরই ঈদের দিন হতে শুরু করে এ ভিড় থাকে ঈদের সপ্তাহ দিন পর্যন্ত। বলতে গেলে মতলবের মেঘনা নদীর পাড় যেন বিনোদন প্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত। ঈদ উৎসবে ঘুরে বেড়ানো ও বিনোদন করার মতো তেমন কোনো স্থান নেই। ফলে ঈদ বা যে কোনো উৎসব এলে কর্মস্থল থেকে ছুটিতে আসা বিনোদন প্রেমীরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে মেঘনা নদীর তীরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে আসেন।
এ বছরেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে এবার ভ্রমণ পিপাসু বিনোদন প্রেমী মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। প্রচন্ড গরমকে উপক্ষো করে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল মেঘনা নদীর তীরে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে আর মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে।
ঈদের দিন ও ঈদের পরের সপ্তাহ মতলবের মোহনপুর,এখলাছপুর,ষাটনল ও আমিরাবাদ পর্যন্ত মেঘনা নদীর পাড় মিলনায়তন ব্লকগুলোতে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা মেঘনা নদীর পাড় ঘেষে বসানো ব্লকগুলোতে এবং বিভিন্ন মেঘনা মোহনার চারপাশে, ঈদ আন্দ উপভোগ করতে ভ্রমন পিপাসু মানুষের ঢল নেমেছে মেঘনা নদীর পারে।
বিনোদন প্রেমী মানুষ উপভোগ করছেন বর্ষার মেঘনা নদীর উত্তাল ঢেউ আর বিকেলে পশ্চিমে সূর্যাস্ত দেখতে চমৎকার পরিবেশ। চোখ ধাঁধাঁনো প্রকৃৃতির রঙিন আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে মেঘনার পাড়। বিকেলে পশ্চিম আকাশে সূর্যের অস্থ যাওয়ার দৃশ্য এনে দেয় নজরকাড়া সৌন্দর্য।
অসংখ্য নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিকশা, ভটভটি, নছিমন, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা এমনকি শ্যালো চালিত ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকায় ঈদের দিন সকাল থেকে মানুষ আসতে থাকে।
প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশাচালকরা দৈনিক চুক্তিতে পর্যটকদের নিয়ে যাচ্ছেন তাদের কাক্ষিত গন্ত—ব্যে। তাদের আয়-রোজগারও ভালো হচ্ছে। অবশ্য অনেক চালক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার মুড়ি চানাচুর,ফসকা,আচার,আইসক্রীমসহ ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরাও বেশ খুশি। বেচা-বিক্রি ভালো বলে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যাচ্ছেন প্রকৃৃতিকন্যা এখলাছপুর নয়কান্দি ও মোহনপুর মেঘনা পাড়। তবে ষাটনল মেঘনা পাড় পর্যটন কেন্দ্র এবং আমিরাবাদেও পর্যটকের কমতি নেই। অনেকে মেঘনা ধনাগোদা বেড়িবাঁধ রক্ষা করার জন্য নদী ভাঙ্গনের প্রতিরোধে সাঁরি সাঁরি ব্লক সাঁরিগুলোও ঘুরে দেখছেন। ব্লকে বসে অনেচে মোবাইলে সেলফি তুলছেন।
ঢাকা থেকে স্ত্রী-সন্তনদের নিয়ে নিজ গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঠাকুরচর গ্রামের বাড়িতে এসেছেন মোঃ আলমগীর হোসেন বেপারী । তিনি বলেন , আমি সরকারি চাকুরীজীবি। এবারই প্রথম লম্বা ১০ দিনের ছুটি পেয়েছি। প্রতি বছরই ঈদে বাড়ি আসা হয় স্ত্রী,সন্তানদের নিয়ে। এবারও তাই ঈদের ছুটিতে এসেছেন। মতলবের মেঘনা পাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ। যতই দেখছি, মুগ্ধ হচ্ছি। তাইতো ছুছে আসা হয় মেঘনা পাড়ে। নিজের জন্মভুমিতে এমন দৃশ্য দেখা পরম আনন্দের।’
ছেংগারচর পৌরসভার সৌদি প্রবাসী মোঃ শাহ আলম বাদশা জানান, ঈদের পাঁচ দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। ট্রলারযোগে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে এখলাছপুর মেঘনা নদীর তীরে এসেছি। এমনিতেই বিদেশে স্ত্রী সন্তান ও পরিবার পরিজন ছাড়া থাকতে হয়। মন খুব খারাপ থাকে। এবার ঈদে বাড়ি এসে এখানে ঘুরতে পাড়ায় খুবই ভালো লেগেছে। এখানে নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য, থইথই পানির সৌন্দর্য আর সন্ধ্যার সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়।
আরেক দর্শনার্থী প্রবাসীর স্ত্রী মিলি আক্তার জানিয়েছেন, স্বামী বিদেশ থেকে এসেছে ৫ দিন হলো। তাই স্বামীর সাথে সন্তান, ননদ, এবং ননদের সন্তানদের নিয়ে এখানে ঘুড়তে এসছি। সন্ধ্যার পরও মেঘনা পাড়ে বসে মুক্ত বাতাস উপভোগ করেন তারা। এসময় হার্ডপয়েন্ট ও গ্রোয়েন এলাকায় সোলার বাতি স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা, যাতে রাতে আরও নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়।
মতলবের মেঘনা পাড়ের পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ। পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন এ ব্যাপারে প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে।
এ কথা জানিয়ে মতলব উত্তর থানার ওসি মোঃ রবিউল হক বলেন, ‘মতলবের ষাটনল থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত মেঘনা নদীর পাড় অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হলো পর্যটন এলাকা। তাই এ এলাকার বিকাশে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সবার আগে হলো পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন ,‘মতলবের মেঘনা নদীতে কিছু পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ পিপাসুদের নৌ-ভ্রমণ ও সাঁতার কাটতে গিয়ে যেন কোনো ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। পর্যটকদের সচেতন করা হয়েছে। এজন্য পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এলাকাটিকে আরও পরিকল্পিতভাবে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবে এই এলাকা পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক,১১ জুন ২০২৫