অণুজীববিজ্ঞানী ডা. সমীর সাহা। ইউনেস্কোর ‘কার্লোজ জে ফিনলে পুরস্কার’ পেয়েছেন তিনি। তিনিই প্রথম কোনো বিজ্ঞানী; যিনি কি-না আমেরিকা বা কানাডার নাগরিক না হয়েও আমেরিকান সোস্যাইটি অব মাইক্রোবায়োলজির হয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি (অণুজীববিজ্ঞান) বিভাগের অধ্যাপক।
তিনিই প্রথম চিকুনগুনিয়ার কারণে মেনিনজাইটিসের মতো জটিল রোগ হয়, ঢাকার শিশু হাসপাতালের চাইল্ড হেলথ রিচার্স ফাউন্ডেশনের ল্যাবে এমন গবেষণা করেছিলেন। বর্তমানে বিল গেটস ফাউন্ডেশন ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সাথে যৌথ গবেষণায় যুক্ত তার এ প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলছে। বর্তমানে গুণী এ বিজ্ঞানী করোনা পরিস্থিতিতে কী ভাবছেন? সে বিষয়ে কথা তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রিফাত কান্তি সেন—
করোনা নিয়ে কোনো গবেষণা করছেন কী?
ডা. সমীর সাহা: না, করোনা নিয়ে গবেষণা আসলে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত সরকারের মধ্যে। সুতরাং সরকার যাদের নির্বাচিত করবে; তারাই গবেষণা করবে। তবে ডেফেনেটলি আমাদেরও গবেষণা করার মতো কেপাসিটি আছে। যদি কখনো সরকার মনে করে আমাদের প্রয়োজন, ডেফেনেটলি আমরা গবেষণা করবো।
সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি আপনাদের কাছে?
ডা. সমীর সাহা: মানে এখনো তো কারো কাছেই এমন কিছু যায়নি। সরকারের যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, যেমন আইইডিসিআর খুব ভালো কাজ করছে। এ দফতর থেকে খুব ভালো কাজ করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। কিন্তু যদি আরও বেশি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন হয়; তখন আমাদের ডাকলে অবশ্যই কাজ করবো।
করোনা নিয়ে আপনাদের কী করার আছে বলে মনে করেন?
ডা. সমীর সাহা: আসলে এখন অনেক কিছুই গবেষণার বিষয় নয়। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ডব্লিউএইচও বলছে, আমি ও বলছি যে, এ ভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজেদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। দেখুন অনেক জটিল তো। দেশটি ছোট, জনসংখ্যা অনেক বেশি। তারপর আমাদের সামাজিক যে অভ্যাস, সেটি অন্য দেশের চেয়ে আলাদা। আইসোলেশন বলি বা কোয়ারেন্টাইন বলি, আপনি যদি বিদেশে চিন্তা করেন নরমালি এরকম থাকে, একটা ফ্ল্যাটের মানুষ আরেকটা ফ্ল্যাটের মানুষকে চেনেনই না। তারা প্রয়োজনেই শুধু কথা বলেন। আমরা কিন্তু একসাথে থাকতে চাই। যদিও আমরা টিভিতে বলি, সরকার বলছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাইরে থেকে যারা আসছেন, তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। আপনি চিন্তা করে দেখুন, আমাদের এগুলো ম্যানেজ করতে আর্মি দিতে হয়েছে। তারপরও সরকার চাইলে কিছু করার চেষ্টা করবো।
সাধারণ মানুষের জন্য আপনার কী পরামর্শ—
ডা. সমীর সাহা: আসলে সাধারণ মানুষের জন্য অনেকবারই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমি সেটি আবারও বলবো, বিনা প্রয়োজনে কোনো মিটিং করার দরকার নেই। জনসমাগম এড়িয়ে যাওয়া উচিত। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের না হওয়াই উত্তম। কিন্তু কিছু লোক তো বের হতে হবেই। যাদের জরুরি কাজ আছে, শুধু তারাই বাসা থেকে বের হওয়া উচিত। আজ দেখলাম টিভিতে ক্রিকেটাররাও সচেতনতা নিয়ে কথা বলছেন। আমি তেমন একটা টকশো’তে আসতাম না। কিন্তু আমিও এখন টকশো’তে গিয়ে কথা বলছি। আসলে আমাদের রুট লেভেল থেকে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। হাত চোখ, নাক এবং মুখে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেখানে-সেথানে কফ, থুতু ফেলা যাবে না। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। সুতরাং এটি খুব দ্রুত সংক্রামিত করতে পারে। আতঙ্কিত না হয়ে একটু সচেতন হলেই এ রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে।
২০০ জনের কিট তৈরি করতে সক্ষম আপনার গবেষণা কেন্দ্র?
ডা. সমীর সাহা: হ্যাঁ, আমরা সেটা করতে পারবো। এটি নরমাল কিট নয়। রিয়েল টাইম ডিটেকটেড করা। যদি আমাদের দরকার হয়, তবে আমরা অবশ্যই করবো। শুধু ২০০ নয় আমরা একদিনে ৫০০ কিট দিয়ে টেস্টও করতে পারবো। সেটা পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যেই। আপনি যদি ডেঙ্গুর কথা চিন্তা করেন, তবে আমরা কিন্তু দিনে একশ টেস্ট করে খুব দ্রুত রিপোর্ট দিতে পেরেছি। শিশু হাসপাতালের এ ল্যাব থেকে একদম রিয়েল টাইমে রিপোর্ট দিয়েছি। আমাদের একসময় কিট ছিল না, আমি তখন একটি প্রজেক্ট নিয়ে ভারত গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমি কিট নিয়ে এসেছি।
দেশের মানুষকে নিয়ে কিছু বলার আছে—
অণুজীববিজ্ঞানী ডা. সমীর : আশার অনেক কথা আছে। সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে নিজেদের মধ্যে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সাবান কিংবা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। সাবধানে থাকবেন সবাই। অন্য সবাইকে কথাগুলো বলবেন। বেশি বেশি সচেতন হলেই করোনাভাইরাসকে আমরা মোকাবেলা করতে পারবো।
বার্তা কক্ষ, ২৩ মার্চ ২০২০